Coronavirus in West Bengal

গৃহনিভৃতবাসে খাবার ও ওষুধ জোগাবে কে

করোনা আক্রান্তের বাড়িতে ঢুকতে ভয় পাচ্ছেন অনেকেই। সে ভয় খুব অমূলকও নয়।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০২০ ০৪:৪০
Share:

নার্সিংহোম থেকে বেড এনে করা হয়েছে নিভৃতবাস। গাইঘাটায়। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

করোনা আক্রান্ত হলে কত ধরনের ভোগান্তি হতে পারে, তার নানা ছবি গত চার মাস ধরে উঠে এসেছে। হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়রানি, পাড়ায় একঘরে হওয়া, মৃত্যু ঘটলে সৎকারে সমস্যা— এ ধরনের অসংখ্য অভিযোগ উঠেছে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এবং প্রশাসনিক নজরদারি ঘিরে। এরই সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আরও একটি সমস্যা। কোনও বাড়িতে কেউ করোনা আক্রান্ত হলে তাঁদের গৃহনিভৃতবাসে থাকার কথা। কাউকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও তাঁর পরিবারের লোকজনকে বাড়ির বাইরে বেরোতে বারণ করেন চিকিৎসকেরা। কিন্তু তা হলে তাঁদের বাজার-হাট করবে কে, নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী কোথা থেকে আসবে, এই নিয়ে জটিলতা দেখা যাচ্ছে নানা জায়গায়।

Advertisement

কোথাও কোথাও পুলিশ-প্রশাসন বাড়িতে জরুরি জিনিসপত্র, ওষুধ পৌঁছে দিচ্ছে ঠিকই, কিন্তু বহু ক্ষেত্রে পরিবারটিকে নিজেদের পরিচিতদের হাতেপায়ে ধরেও খাবার-দাবার, ওষুধ জোগাড় করতে হচ্ছে বলে অভিযোগ। কারণ, করোনা আক্রান্তের বাড়িতে ঢুকতে ভয় পাচ্ছেন অনেকেই। সে ভয় খুব অমূলকও নয়। যথেষ্ট সতর্কতা না নিয়ে আক্রান্তের বাড়িতে ঢুকলে অন্য কেউ করোনায় আক্রান্ত হতেই পারেন।

করোনা আক্রান্ত হয়ে ভাঙড় ২ ব্লকের সেফ হোমে রয়েছেন এক ব্যক্তি। পরিবারকে ১৪ দিন নিভৃতবাসে থাকার পরামর্শ দিয়েছে ব্লক স্বাস্থ্য দফতর। অভিযোগ, তারপর থেকেই ভাঙড় ২ ব্লকের নিমকুড়িয়া গ্রামে করোনা আক্রান্ত ওই রোগীর পরিবারকে একঘরে করে দিয়েছেন এলাকার লোকজন। অভিযোগ, কেউ খাবার-জল দিয়ে সাহায্য করছে না। বাড়ির লোকজনও বাইরে বেরোতে পারছেন না।

Advertisement

ভাঙড়ের বামনঘাটা, পর্বতপাড়াতেও একই সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে কিছু পরিবার। ভাঙড় ২ বিডিও কৌশিককুমার মাইতি বলেন, “প্রশাসনের পক্ষ থেকে চেষ্টা করছি, আক্রান্তদের পরিবারের কাছে সব সুযোগ-সুবিধা পৌঁছে দিতে। কোথাও কোনও অভিযোগ থাকলে আমরা সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিচ্ছি।”

ক্যানিং ১ ব্লকে নিভৃতবাসে থাকা করোনা আক্রান্তদের বাড়িতে চাল, ডাল, আলু, তেল, বিস্কুট, মুড়ি পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে প্রশাসনের তরফে। ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি বাড়িতে বিডিও নীলাদ্রিশেখর দে এই সব সামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। এ ছাড়া, যে এলাকায় মানুষজন নিভৃতবাসে রয়েছেন, সেই এলাকার ক্লাব, প্রতিবেশীরাও অনেক ক্ষেত্রে সাহায্য করছেন। বিডিও বলেন, “করোনা আক্রান্ত কোনও পরিবার যদি সমস্যায় পড়েন, তা হলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার কথা বলা হয়েছে।”

দিন কয়েক আগে জয়নগর পুরসভার একটি এলাকায় এক সঙ্গে আটজন করোনা আক্রান্ত হন। স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশ মতো প্রত্যেকেই বাড়িতে রয়েছেন। পুরসভা ও পুলিশের উদ্যোগে সংশ্লিষ্ট কয়েকটি বাড়ি বাঁশের ব্যারিকেড করে ঘিরে দেওয়া হয়েছে। পুরসভার তরফেই পরিবারগুলিতে জল, খাবার-সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস সরবরাহ করা হচ্ছে। পুরপ্রশাসক সুজিত সরখেল বলেন, “পরিবারগুলির যাতে কোনও ভাবেই সমস্যা না হয় , তা আমরা নিশ্চিত করেছি।”

বসিরহাট, টাকি এবং বাদুড়িয়া পুর এলাকায় আবার অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, করোনা আক্রান্ত পরিবার হোম ডেলিভারি বা পরিচিত-আত্মীয় পরিজনের মাধ্যমে খাবার সংগ্রহ করে নিচ্ছেন। প্রশাসন সূত্রের খবর, প্রথম দিকে আক্রান্তদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাবার, পানীয় জল এবং ওষুধ পৌঁছে দেওয়া হচ্ছিল। তবে এখন খুব জরুরি প্রযোজন না হলে কেউ প্রশাসনের কাছে খাবার, ওষুধ চাইছে না। নিজেরাই জোগাড়ের ব্যবস্থা করছেন।

হাবড়া পুর এলাকায় বাড়িতে থাকা করোনা আক্রান্তের পরিবারকে পুরসভার তরফে পানীয় জল, খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। এর জন্য একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। যাঁদের প্রয়োজন, তাঁরা ফোন করে জানালে পুরসভার কর্মীরা খাদ্যসামগ্রী, পানীয় জল, ওষুধ পৌঁছে দিয়ে আসছেন। পুরপ্রশাসক নীলিমেশ দাস বলেন, “করোনা আক্রান্ত গরিব পরিবারকে আমরা বিনা পয়সায় চাল, ডাল, আনাজ, পানীয় জল পৌঁছে দিয়ে আসছি। মঙ্গলবারই দু’টি পরিবারকে খাদ্যসামগ্রী দেওয়া হয়েছে।’’ হাবড়া, গোবরডাঙা, অশোকনগর, বনগাঁ এলাকায় আক্রান্তেরা পরিচিতদের মাধ্যমেও জরুরি পরিষেবা পাচ্ছেন।

হাবড়া ১ ব্লকের বাসিন্দা এক মহিলা বাড়িতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন। অভিযোগ, পঞ্চায়েত থেকে কোনও সাহায্য পাননি। পরে পরিচিতদের মাধ্যমে জল, খাদ্যসামগ্রী আনিয়ে নিয়েছেন। গাইঘাটা এলাকায় শতদল রবিবাসর সাংস্কৃতিক সংস্থার কর্মীরা আক্রান্তদের বাড়ি খাবার, পানীয় জল পৌঁছে দিচ্ছেন। অনেক ক্ষেত্রে পাড়া-প্রতিবেশীরাও আক্রান্তের বাড়ির সামনে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিয়ে আসছেন। বনগাঁ শহরে পুরসভার কর্মী ও পুলিশ খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement