প্রতীকী ছবি।
করোনার দাপট ক্রমশ তীব্র হচ্ছে উত্তর ২৪ পরগনা জেলায়। দৈনিক সংক্রমণ এবং মৃত্যুর দিকে থেকে রাজ্যের মধ্যে শীর্ষ স্থানে উঠে এসেছে এই জেলা। দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা চার হাজার ছুঁইছুঁই। জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার জেলায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৩৯৯৭ জন। মারা গিয়েছেন ৩৪ জন। ১ মে থেকে ৯ মে পর্যন্ত জেলায় নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৩১৭০১ জন। এই সময়ের মধ্যে মারা গিয়েছেন ২৫৪ জন। রবিবার পর্যন্ত জেলায় অ্যাক্টিভ রোগীর সংখ্যা ২৩৯৬৯। সংক্রমণের হার কোথায় গিয়ে থামবে, তা ভেবে উদ্বিগ্ন চিকিৎসকেরা।
জেলা প্রশাসন এবং স্বাস্থ্য দফতর পরিস্থিতি মোকাবিলায় ইতিমধ্যেই বেশ কিছু পদক্ষেপ করেছে। তবে তারপরেও সমস্যা অনেক। বিশেষ করে, করোনা পরীক্ষা করতে সমস্যায় পড়ছেন সাধারণ মানুষ। হাসপাতালে বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে করোনা পরীক্ষা করাতে গেলে দু’তিন দিন পরে আসতে বলা হচ্ছে। বিশেষ করে আরটিপিসিআর পরীক্ষার ক্ষেত্রে এই সমস্যা হচ্ছে। আরটিপিসিআর পরীক্ষার পর রিপোর্ট আসতেও তিন চার দিন সময় লেগে যাচ্ছে। রিপোর্ট হাতে না থাকলে করোনা হাসপাতালে ভর্তির সমস্যা রয়েছে। স্বাস্থ্য দফতরের একটি সূত্র জানাচ্ছে, বিভিন্ন ব্লকে এখন দৈনিক আরটিপিসিআর পরীক্ষা ৩০টি নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। কোথাও আবার কিটের অভাব আছে। পরীক্ষা কম হওয়াতে বা রিপোর্ট আসতে দেরি হওয়াতে মানুষ উপসর্গ নিয়ে বাইরে ঘোরাঘুরি করছেন। কয়েক দিন ধরেই জেলায় দৈনিক সংক্রমণ চার হাজারের কাছাকাছি ঘোরাঘুরি করছে। চিকিৎসকেরা জানান পরীক্ষা কম হচ্ছে বলেই সংখ্যাটা এখনও চার হাজার ছাড়ায়নি। বাস্তব পরিস্থিতি আরও ভয়ঙ্কর বলেই মনে করছেন তাঁরা। পাশাপাশি
সঙ্কটজনক রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি হওয়ায় মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে। অক্সিজেনের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রশাসনের একটি সূত্র জানাচ্ছে, জেলায় এখন অক্সিজেনের সঙ্কট না থাকলেও ভবিষ্যতে অক্সিজেনের অভাব দেখা দিতে পারে। সিলিন্ডারের আকাল অবশ্য এখনই দেখা দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে কোভিড রোগীদের চিকিৎসার জন্য অক্সিজেনের চাহিদা মেটাতে তৎপর হয়েছে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন। জেলায় ৯ টি অক্সিজেন প্লান্ট তৈরি করা হচ্ছে।
করোনা আক্রান্ত অনেক রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করা যাচ্ছে না বলেও অভিযোগ। স্বাস্থ্য দফতরের কন্ট্রোল রুমের ফোন নম্বরে যোগাযোগ করলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শয্যা নেই বলে, পরে যোগাযোগ করতে বলা হচ্ছে। হাসপাতালে শয্যা পেতে দেড় থেকে দু’দিন সময় লেগে যাচ্ছে। বাড়িতে মৃত্যু হওয়া রোগীদের মৃতদেহ নিয়ে যেতে অনেক ক্ষেত্রেই কয়েক ঘণ্টা সময় নিচ্ছে প্রশাসন। এর ফলে এলাকার মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন।
প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, জেলার করোনা হাসপাতালগুলিতে শয্যা বাড়ানো হয়েছে। আরও বাড়ানো হবে। পাশাপাশি বড় বড় সেফ হোম তৈরি হচ্ছে। ইতিমধ্যে জেলায় ১৭টি সেফ হোম চলছে। সেফ হোমগুলিতে অক্সিজেনের ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। রবিবার অশোকনগরে ১০০ শয্যার সেফ হোম চালু করা হয়েছে। তবে অক্সিজেনের অভাবে সোমবারও রোগী ভর্তি শুরু করা যায়নি। সোমবার হাবড়াতে ৮০ শয্যার সেফ হোম চালু হয়েছে। তবে সেখানে অক্সিজেন সিলিন্ডার রয়েছে মাত্র ৮টি। বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে ভেন্টিলেটর থাকলেও টেকনিশিয়ানের অভাবে চালু করা যাচ্ছে না।
ভ্যাকসিন সরবরাহ অনিয়মিত থাকায় দিন কয়েক আগে জেলায় প্রথম ডোজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হচ্ছে। দ্বিতীয় ডোজের সরবরাহও কম। ফলে সর্বত্র দেওয়া যাচ্ছে না। সোমবারও বনগাঁ, বাগদা, গাইঘাটা-সহ জেলার কিছু এলাকায় প্রতিষেধক দেওয়া বন্ধ ছিল। জেলাশাসক সুমিত গুপ্তা বলেন, “ভ্যাকসিন যেমন পাচ্ছি, সেভাবেই মানুষকে দেওয়া হচ্ছে। রবিবার ভ্যাকসিন এসেছে।”
স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা বলেন, “ধীরে ধীরে সমস্যার সমাধান করা হচ্ছে। পরীক্ষার রিপোর্ট যাতে দ্রুত আসে সে ব্যাপারে স্বাস্থ্য ভবনকে জানানো হয়েছে।”