COVID-19

পুণ্যস্নানে ভক্তের ঢল, উধাও স্বাস্থ্যবিধি

এ দিন ঠাকুরবাড়িতে পুণ্যস্নান করতে আসা মতুয়া ভক্তদের বেশিরভাগেরই  মাস্ক ছিল না। শারীরিক দূরত্ববিধিও বজায় রাখা হয়নি ভিড়ের চাপে।

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র  

গাইঘাটা শেষ আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০২১ ০৫:৪৭
Share:

উদাসীন: মাস্ক নেই ভক্তদের মুখে। —নিজস্ব চিত্র

ভোটের আবহে উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। মার্চের শুরুতে জেলায় দৈনিক সংক্রমণ নেমে এসেছিল পঞ্চাশের আশেপাশে। এখন সেটা আচমকাই বেড়ে ছ’শোর কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছে। শুক্রবার একদিনে জেলায় আক্রান্ত হয়েছেন ৫৯৫ জন। বৃহস্পতিবার সংখ্যাটা ছিল ৫৪৮ জন। দু’দিনে মৃত্যু হয়েছে ৪ জনের। শুক্রবার পর্যন্ত জেলায় অ্যাক্টিভ রোগীর সংখ্যা ৩ হাজার ৪১৪ জন।

Advertisement

এই পরিস্থিতির মধ্যেই বৃহস্পতিবার রাত থেকে গাইঘাটার ঠাকুরনগরে মতুয়া ঠাকুরবাড়িতে পুণ্যস্নানের টানে হাজার হাজার ভক্তের ভিড় উদ্বেগ বাড়িয়েছে চিকিৎসক, স্বাস্থ্য আধিকারিক এবং সচেতন মানুষের।

এ দিন ঠাকুরবাড়িতে পুণ্যস্নান করতে আসা মতুয়া ভক্তদের বেশিরভাগেরই মাস্ক ছিল না। শারীরিক দূরত্ববিধিও বজায় রাখা হয়নি ভিড়ের চাপে। ঠাকুরবাড়িতে স্যানিটাইজ়ার বা করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা ছিল না।

Advertisement

প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, মেলার আয়োজন করে অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘ। সেখানে প্রশাসনিক ভূমিকা তেমন থাকে না। তারাই জানিয়েছিল, এ বার মেলা হচ্ছে না। এ বার কোনও প্রশাসনিক ব্যবস্থা হয়নি।

তবে গাইঘাটার বিএমওএইচ সুজন গায়েন বলেন, ‘ঠাকুরবাড়িতে করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করা না হলেও ঠাকুরবাড়ির ৩০০ মিটারের মধ্যে চাঁদপাড়া ব্লক গ্রামীণ হাসপাতালে করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ঠাকুরবাড়িতে পাঁচটি মেডিক্যাল শিবির করা হয়েছে। কাউকে সন্দেহজনক মনে হলে তাঁদের হাসপাতালে এনে পরীক্ষা করা হচ্ছে।’’ প্রতি বছর হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মতিথি মধুকৃষ্ণ ত্রয়োদশীতে কামনা সাগরে (বড় জলাশয়) পুণ্যস্নানের মধ্যে দিয়ে শুরু হয় মতুয়া ধর্ম মহামেলা। দেশ-বিদেশ থেকে কয়েক লক্ষ ভক্ত আসেন পুণ্যস্নান করতে। গত বছর করোনা পরিস্থিতির কারণে মেলা বাতিল করা হয়েছিল। ভক্তেরা স্নানের সুযোগ পাননি। এখনও করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক নয়।

চারিদিকে সংক্রমণ বাড়তে থাকায় দিন কয়েক আগে সাংবাদিক বৈঠক করে বনগাঁর তৃণমূল সাংসদ তথা অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি মমতা ঠাকুর এ বার মেলা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে ছিলেন। তা নিয়ে আবার পারিবারিক কোন্দল প্রকাশ্যে আসে মতুয়াদের ঠাকুরবাড়িতে। বনগাঁর সাংসদ তথা অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি শান্তনু ঠাকুর পাল্টা সাংবাদিক বৈঠক করে বলেন, ‘‘মতুয়া ধর্ম মহামেলা বন্ধ করার কথা বলে মমতা ঠাকুর নিজের ব্যক্তিগত এবং রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করতে চাইছেন। এর ফলে মতুয়ারা বিভ্রান্ত। মমতা মতুয়াদের পবিত্র দর্শনকে বন্ধ করতে চাইছেন।’’ করোনা সংক্রমণ নিয়ে শান্তনু জানিয়েছিলেন, রাজনৈতিক দলগুলি লক্ষ লক্ষ মানুষের জমায়েত করে সভা, মিছিল করছেন। চারিদিকে অন্য মেলা হচ্ছে। তা হলে কেন মতুয়া মেলা কেন বন্ধ হবে? তা ছাড়া, সরকার তো মেলা বন্ধের নির্দেশ দেয়নি বলেও তিনি জানান। এই পরিস্থিতিতে ভক্তেরা পুণ্যস্নান সারতে আসেন কিনা, তা নিয়ে ধন্দ তৈরি হয়। তবে বৃহস্পতিবার থেকে দলে দলে মতুয়া ভক্ত ডাঙ্কা, কাঁসির তালে তালে আসতে থাকেন ঠাকুরনগরে। চাঁদপাড়া-ঠাকুরনগর সড়কে শুক্রবার দেখা গেল, দলবদ্ধ ভাবে হেঁটে বা গাড়িতে মতুয়া ভক্তেরা ঠাকুরবাড়িতে যাচ্ছেন। মাস্ক বা শারীরিক দূরত্ববিধি ছিল না। কোনও দলে পঞ্চাশ, কোনও দলে একশোজন ছিলেন। শিশুদেরও দেখা গিয়েছে। কামনা সাগরে পুণ্যস্নান করে ঠাকুরবাড়ির হরিচাঁদ ঠাকুর মন্দিরের সামনে মাতামখোলা হয়েছে। কেউ কেউ সেখানে ছুড়ে দিচ্ছিলেন ভোগ-বাতাসা। সেই বাতাসা সংগ্রহ করতেও হুড়োহুড়ি দেখা গিয়েছে। ঠাকুরবাড়িতে দোকানপাট বসেছে। কয়েকজন প্রার্থীও এ দিন কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে ঠাকুরবাড়িতে গিয়ে জনসংযোগ করেছেন।

এ দিনের ভিড় নিয়ে মমতা ঠাকুর বলেন, ‘‘ঠাকুরনগর-সহ গোটা দেশে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে। মানুষকে বাঁচানোর স্বার্থে মেলা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পুণ্যস্নান বন্ধ করার কথা বলিনি। শান্তনু ঠাকুর বলেছিলেন, মেলা করবেন। ওঁদের উচিত ছিল মাস্ক, স্যানিটাইজ়ারের ব্যবস্থা করা। সেই ব্যবস্থা ওঁরা করেননি। কেউ আক্রান্ত হলে তার দায় শান্তনুদের নিতে হবে।’’

অন্য বছর মেলায় যে পরিমাণ জনসমাগম হয়, এ বার তুলনায় কম হলেও সংখ্যাটা খুব কমও নয়। শান্তনু বলেন, ‘‘আমি তো বলেইছিলাম মেলা হবে। কারও সাধ্য নেই মেলা বন্ধ করার। আমরা মেলা পরিচালনা করি। মেলা করেন মতুয়া ভক্তেরা। ঠাকুরবাড়ির সদস্য হিসেবে আমরা বলতে পারি না, মেলা করব না।’’ মাস্ক-স্যানিটাইজ়ার না থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘‘এ বার মেলায় প্রায় ৮ লক্ষ মানুষ এসেছেন। অন্যবার আসেন, প্রায় তিরিশ লক্ষ। এই পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা সম্ভব নয়।’’ শান্তনুর দাবি, ‘‘মতুয়ারা পুণ্যলাভের জন্য স্নান করেন। মতুয়ারা যে মাতাম দেন, ঘাম ঝরান, খাটনি করেন— মনে হয় না তাঁদের করোনা হবে। কেউ করোনায় আক্রান্ত হয়ে থাকলে এবং বৃদ্ধদের মেলায় না আসতে আবেদন করা হচ্ছে।’’ মতুয়া ভক্তদের অনেকেই বললেন, ‘‘বছরের এই দিনটির জন্য অপেক্ষা করে থাকি। এখানে এসে কামনা সাগরে পুণ্যস্নান করি। মন্দিরে পুজো দিয়ে ঠাকুরের কাছে প্রার্থনা করি। আমাদের করোনা ছুঁতে পারবে না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement