সুখটান: মাস্ক নামিয়ে চলছে ধূমপান। বৃহস্পতিবার বনগাঁয় ছবিটি তুলেছেন নির্মাল্য প্রামাণিক
দৈনিক করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমশ কমছে উত্তর ২৪ পরগনা জেলায়। যা স্বাস্থ্যকর্তা ও চিকিৎসকের কিছুটা স্বস্তি দিলেও উদ্বেগ বাড়াচ্ছে করোনায় আক্রান্তদের মৃত্যুর সংখ্যা।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, চলতি বছরে ১-২০ জানুয়ারি পর্যন্ত জেলায় করোনায় মারা গিয়েছেন ১২০ জন। গত বছর ডিসেম্বর মাসে (১-৩১ ডিসেম্বর) করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৮৪ জন।
মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ার কারণ কী?
চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্তারা জানাচ্ছেন, ওমিক্রনের থাবায় এ বার সব থেকে বেশি ঝুঁকি বয়স্ক ও কোমর্বিডিটি থাকা রোগীদের। এঁদেরই মৃত্যু বেশি হচ্ছে।
চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্তারা জানাচ্ছেন, দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় স্বাভাবিক ভাবে মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে। বারাসত জেলা হাসপাতালের সুপার সুব্রত মণ্ডল বলেন, ‘‘এ বছর করোনায় যাঁরা মারা যাচ্ছেন, তাঁদের প্রায় সকলেরই বয়স ষাটের উপরে। তাঁরা কেউ উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, ক্যানসার, হার্টের অসুখ বা কিডনির সমস্যায় ভুগছিলেন।’’
এ বার করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা গত বছরের তুলনায় খুবই কম। বারাসত জেলা হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য ১০০টি সাধারণ শয্যা এবং ৫০টি এইচডিইউ শয্যা আছে। হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছে, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন মাত্র ৮ জন রোগী। সুব্রত বলেন, ‘‘এ বার হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত রোগী ভর্তি হচ্ছেন খুবই কম। যাঁরা হচ্ছেন, তাঁরা বয়স্ক এবং কোমর্বিডিটি থাকা রোগী।’’
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, এ বার বয়স্ক ও কোমর্বিডিটি থাকা মানুষদের উপরে বিশেষ নজর রাখতে হবে। এক চিকিৎসকের কথায়, ‘‘একজন ২৫ বছরের যুবক হয় তো বাড়ির বাইরে বেপরোয়া মনোভাব দেখিয়ে মাস্ক ছাড়া ঘুরছেন। তিনি করোনায় আক্রান্ত হলে নিজেকে সামলে নিতে পারবেন। কিন্তু সমস্যা দেখা দিচ্ছে, ওই যুবক বাড়ি ফিরে বাড়িতে থাকা বয়স্ক ও অন্য অসুখে ভোগা বাবা-মাকে সংক্রামিত করছেন। তখন তাঁদের শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক হয়ে পড়ছে। তাই পরিবারের সকলকে সতর্ক থাকতে হবে।’’
মৃত্যুর আরও কয়েকটি কারণ রয়েছে বলে চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন। করোনার উপসর্গ নিয়ে করোনা-পরীক্ষা করাচ্ছেন না বয়স্ক লোকজনের অনেকেই। ওষুধের দোকান থেকে ওষুধ কিনে খাচ্ছেন। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, এ বার করোনা আক্রান্তদের মধ্যে মূলত হালকা জ্বর, গলা ব্যথা, নাক দিয়ে জল পড়া এবং দুর্বলতা দেখা যাচ্ছে। চিকিৎসকদের পরামর্শ, এই সব সমস্যা দেখা দিলে বয়স্ক এবং কোমর্বিডিটি থাকা মানুষকে দ্রুত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করতে হবে। ওষুধ খেতে হবে। চিকিৎসা করাতে হবে। নিজেদের ‘পাণ্ডিত্য’ দেখানো চলবে না।
চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্তাদের নজরে এসেছে, ওষুধের দোকান থেকে ওষুধ কিনে খেলে হয় তো সাময়িক ভাবে লোকজন সুস্থ হচ্ছেন। তবে হঠাৎ করে তাঁদের শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ার আশঙ্কা থাকছে। ওই সময়ে তাঁরা হাসপাতালে যাচ্ছেন। ফলে অনেককেই বাঁচানো সম্ভব হচ্ছে না। এ ছাড়া, করোনা নিয়ে কেউ হাসপাতালে ভর্তি হলে বা চিকিৎসকের কাছে গেলেও তাঁর যদি শরীর অন্য কোনও রোগ থাকে তা তাঁরা গোপন করে যাচ্ছেন।
ফলে চিকিৎসা করতে সমস্যা হচ্ছে। চিকিৎসকদের পরামর্শ, অন্য রোগের চিকিৎসা চললে সেই প্রেসক্রিপশন ডাক্তারদের দেখাতে হবে।
এ দিকে, জেলায় দৈনিক করোনা সংক্রমণ কমতে থাকলেও আরও কিছুদিন মানুষকে সতর্ক থাকতে হবে স্বাস্থ্যকর্তারা জানাচ্ছেন। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বার ৯ জানুয়ারি জেলায় দৈনিক করোনা আক্রান্তের সংখ্যা পৌঁছে গিয়েছিল, ৫ হাজার ৫৩ জনে। তারপর থেকে তা কমছে। ২০ জানুয়ারি জেলায় করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৭৪৭ জন।
উত্তর ২৪ পরগনা জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তাপসকুমার রায় বলেন, ‘‘সকলের কাছে আবেদন, যাঁরা ভ্যাকসিন এখনও নেননি, তাঁরা যেন আর দেরি না করে সকলে ভ্যাকসিন নিয়ে নেন। পাশাপাশি, মাস্ক পরা ও স্যানিটাইজ়ার অবশ্যই বাধ্যতামূলক।’’