First concrete road in village

স্বাধীনতার ৭৭ বছর পর কুলতলির ময়রারচকে হচ্ছে কংক্রিটের রাস্তা, আনন্দে আত্মহারা গ্রামবাসীরা

কুলতলি বিধানসভার মেরিগঞ্জ, কুন্দখালি, গোপালগঞ্জ গ্রামের সংযোগস্থল ময়রারচক দ্বীপে বহু মানুষের বাস। কিন্তু রাস্তা ছিল না এত দিন। এত দিন গরমে জমির আল আর বর্ষাকালে ডিঙি নৌকাই ছিল ভরসা।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কুলতলি শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০২৪ ১৯:২৫
Share:

গ্রামে চলছে কংক্রিটের রাস্তা তৈরির কাজ। — নিজস্ব চিত্র।

স্বাধীনতার পর কেটে গিয়েছে ৭৭ বছর। এত দিন জমির আল ধরে কাদা ভেঙে গন্তব্যে পৌঁছনোকেই ভবিতব্য বলে মেনে এসেছিল দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলতলি বিধানসভার ময়রারচক দ্বীপের চারশোর বেশি পরিবার। সেই গ্রামে এ বার তৈরি হচ্ছে কংক্রিটের রাস্তা। আর সেই রাস্তা ঘিরে নতুন করে বেঁচে ওঠার স্বপ্ন দেখছে সুন্দরবনের ময়রারচক।

Advertisement

গ্রীষ্মে রাস্তা বলতে জমির আল, আর বর্ষার ভরসা ডিঙি নৌকা। কুলতলি বিধাসভার মেরিগঞ্জ, কুন্দখালি, গোপালগঞ্জ গ্রামের সংযোগস্থল ময়রারচক দ্বীপে বহু মানুষের বাস। কিন্তু যাতায়াতের কোনও উপায় ছিল না এত দিন। গরমকালে জমির আল ধরে চলাফেরা করতে হত মানুষকে। আর বর্ষাকালে ডিঙি নৌকা। গ্রামের বয়স্ক মানুষ অন্যত্র যেতে পারতেন না। রাস্তা না থাকায় ব্যাহত হত পড়ুয়াদের স্কুলে যাওয়াও। কিন্তু এত দিন সরকার এসেছে, আর গিয়েছে কিন্তু রাস্তা হয়নি। প্রতিবার ভোটের আগে নেতারা এসে রাস্তার কথা বলতেন ঠিকই, কিন্তু কাজের কাজ হল সেই ভোটের মুখেই। অবশেষে রাজ্য সরকারের পথশ্রী প্রকল্পের আওতায় গ্রামে শুরু হয়েছে আড়াই কিলোমিটার ঢালাই রাস্তা তৈরির কাজ। মোট এক কোটি ৩৪ লক্ষ টাকা ব্যয়ে তৈরি হবে রাস্তা। শুরু হয়েছে অতিকায় যন্ত্র দিয়ে রাস্তার মাটি কাটার কাজ। এক মাসের মধ্যেই রাস্তাটি সম্পূর্ণ হবে বলে আশাবাদী এলাকার তৃণমূল বিধায়ক গণেশচন্দ্র মণ্ডল।

তিনি বলছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে এখানে রাস্তার কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। বিদ্যুৎ এবং পানীয় জলের কাজ আগেই করে ফেলেছি। এ বার রাস্তাও তৈরি হয়ে যাচ্ছে। আগামী দিনে এই রাস্তার উপর ভিত্তি করেই এই এলাকায় উন্নয়নের জোয়ার আসবে। ময়রারচকের মানুষের জন্য এত দিন কেউ ভাবেনি। মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন বলেই এলাকার মানুষ রাস্তা পেলেন।’’

Advertisement

নতুন রাস্তা হচ্ছে দেখে উৎসাহে টগবগ করে ফুটছেন ময়রারচকের বাচ্চা থেকে বুড়ো। এই গ্রামে জীবনের ৪০ বছর কাটিয়ে দিয়েছেন আঙুরবালা সর্দার। রাস্তার কাজ হচ্ছে দেখে তিনি নিজেকে বাড়িতে আটকে রাখতে পারেননি। ছুটে এসেছেন কাজ দেখতে। চোখে মুখে উত্তেজনা নিয়ে আঙুরবালা বললেন, ‘‘৪০ বছর আগে বিয়ে করে এখানে এসেছিলাম। কোনও দিন রাস্তা ছিল না। কী যে অসুবিধা ভোগ করেছি আর কী বলব! এখন রাস্তার কাজ হচ্ছে দেখে এত খুশি যে ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না।’’ দীপান্বিতা সর্দার স্কুলে পড়ে। গ্রামে রাস্তা হচ্ছে দেখে মহাখুশি সে-ও। দীপান্বিতা বলছে, ‘‘স্কুলে যেতে আগে কষ্ট হত। বর্ষাকালে তো যেতেই পারতাম না। পড়ে গিয়ে কত জন আঘাত পেয়েছে। এ বার আর চিন্তা নেই, রাস্তা দিয়ে সোজা চলে যেতে পারব।’’ গ্রামবাসী নবকুমার সর্দার বলেন, ‘‘গ্রামে যে রাস্তা হবে তা ভাবতে পারিনি। দিদি আছেন মাথার উপর। তিনিই সব করে দিলেন। নতুন রাস্তার কাজ কবে শেষ হয় সে দিকেই আমরা তাকিয়ে আছি। এ বার মনে হচ্ছে গ্রামের কপাল খুলে যাবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement