ফাইল চিত্র।
দীর্ঘ দিন ধরে মানুষের দাবি ছিল ক্যানিংয়ে দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালতের। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পরে অবশেষে মানুষের সেই স্বপ্নপূরণ হতে চলেছে। ক্যানিংয়ে ওই দুই আদালতের কাজ শুরু হলে ক্যানিং মহকুমা তথা প্রত্যন্ত সুন্দরবনের বহু মানুষ উপকৃত হবেন বলে মনে করা হচ্ছে। এই সব এলাকার মানুষকে আর কলকাতায় যেতে হবে না।
ইতিমধ্যে মাতলা নদীর চরে ৬ একর জমি দেখার কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে। ক্যানিং পশ্চিমের বিধায়ক শ্যামল মণ্ডল আইনমন্ত্রী মলয় ঘটকের কাছে দরবার করে জানিয়েছেন, দ্রুত আদালতের কাজ শুরু করার জন্য। বিষয়টি বিধানসভায় তোলা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন বিধায়ক। ক্যানিংয়ে ওই ২ আদালত তৈরির জন্য ৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। মহকুমাশাসক বন্দনা পোখরিয়াল বলেন, ‘‘সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী ক্যানিংয়ে আদালত তৈরির জন্য আমাদের জমি ঠিক করার কথা বলা হয়েছিল। আমরা সেই জমি ঠিক করে দিয়েছি। আশা করছি দ্রুত কাজ শুরু হয়ে যাবে।’’
বিধায়ক বলেন, ‘‘ক্যানিংয়ে খুব দ্রুত আদালত তৈরির কাজ শুরু করা হবে। সে জন্য জমি দেখা এবং টাকা বরাদ্দ হয়ে গিয়েছে। প্রথম পর্যায়ে ১০ কোটি টাকা দিয়ে আদালত নির্মাণের কাজ শুরু করা হবে। ধীরে ধীরে বরাদ্দ অনুযায়ী পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ করা হবে।’’
এ বিষয়ে আইনজীবী তথা ক্যানিং বার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক তিতাস মণ্ডল বলেন, ‘‘বহু প্রতীক্ষার পরে ক্যানিংয়ে ফৌজদারি ও দেওয়ানি আদালত তৈরির কাজ শুরু হতে চলেছে। এই আদালত তৈরি হলে ক্যানিং তথা সুন্দরবনবাসী খুবই উপকৃত হবেন।’’ এখানকার মানুষকে আর কষ্ট করে কলকাতার আলিপুরে ছুটতে হবে না। খুব সহজেই এখান থেকে তাঁরা আইনি পরিষেবা পেতে পারবেন বলে জানান তিনি।
এত দিন ক্যানিং, বাসন্তী, গোসাবা, জীবনতলা-সহ প্রত্যন্ত সুন্দরবনের মানুষ আইনি পরিষেবা পাওয়ার জন্য কলকাতার আলিপুর আদালতে যেতেন। আলিপুর আদালতে বাড়ছিল বিভিন্ন মামলার বোঝা। বিচারপ্রার্থীদের দীর্ঘ দিন বিচারের আশায় অপেক্ষা করতে হত। ক্যানিংয়ে ফৌজদারি ও দেওয়ানি আদালতের কাজ শুরু হলে একদিকে যেমন আলিপুর আদালতে মামলার বোঝা কমবে তেমনি ক্যানিং-সহ প্রত্যন্ত সুন্দরবন এলাকার বিচারপ্রার্থীদের মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি হবে বলে মনে করছেন এলাকাবাসী। এর আগে ক্যানিংয়ে শুধুমাত্র এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের আদালত ছিল। সেখানে শুধুমাত্র ১৪৪ ধারা ছাড়া ফৌজদারি বা দেওয়ানি মামলা হত না।
সেই ইংরেজ আমল থেকে দুই ২৪ পরগনার সদর দফতর ছিল আলিপুরে। সে সময়ে ২৪ পরগনার মানুষকে বিভিন্ন মামলার জন্য যেতে হত আলিপুরে। পরে ২৪ পরগনা ভেঙে হয় উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা। পরে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার সদর দফতর হয় আলিপুরে। ক্রমশ জনসংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি মানুষের মধ্যে অপরাধপ্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় আলিপুর আদালতে বিভিন্ন ধরনের মামলার চাপ বাড়তে থাকে। যার জন্য পরে ঠিক হয় ডায়মন্ড হারবার, কাকদ্বীপ, বারুইপুর, ক্যানিংয়ে দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালত তৈরি করা হবে। সেই মতো ডায়মন্ড হারবার, কাকদ্বীপ ও বারুইপুরে দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলার কাজ শুরু হয়ে গেলেও ক্যানিংয়ের মানুষকে বিচারের আশায় ছুটতে হত আলিপুরে।
সমস্যায় পড়তেন ক্যানিংবাসী। বিশেষ করে প্রত্যন্ত সুন্দরবন এলাকার মানুষকে আগের দিনই আদালতে পৌঁছতে হত। কারণ, সে সময়ে এই সব এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা তেমন ছিল না। নদী পেরিয়ে পায়ে হেঁটে ক্যানিংয়ে আসতে হত। তারপর সেখান থেকে ট্রেনে করে কলকাতায় পৌঁছতেন। পরবর্তী সময়ে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হয়। ক্যানিংয়ে মাতলা নদীর উপরে মাতলা সেতু ও বাসন্তীর হোগল নদীর উপর বাসন্তী সেতু তৈরি হয়। ফলে এই সব এলাকার মানুষ সহজে কলকাতায় পৌঁছে যেতে পারলেও আলিপুর আদালতে মামলার ভার বেড়ে যাওয়ায় বিচারপ্রার্থীদের দীর্ঘ দিন ধরে অপেক্ষা করতে হত। এতে মানুষের খরচও বেশি হত।