পসরা: বায়লানি বাজারে
আদালতের নির্দেশ আসার পরেই বাজি বিক্রি বন্ধ রাখার প্রশাসনিক নির্দেশিকা পৌঁছে গিয়েছিল সর্বত্র। কিন্তু সেই নির্দেশিকা মানা হচ্ছে না দুই জেলার বহু জায়গাতেই। অন্যবারের মতো না হলেও প্রকাশ্যে বাজি বিক্রি হচ্ছে অনেক জায়গাতেই। অভিযোগ, চোরাগোপ্তা বাজি মিলছে প্রায় সর্বত্রই। পুলিশের তরফে বাজি বিক্রি বন্ধে একাধিক পদক্ষেপ করা হয়েছে। তবে প্রশাসনের চোখ এড়িয়ে বাজি বিক্রি চলছেই।
সোমবার হাসনাবাদ থানার বায়লানি বাজারে গিয়ে দেখা গেল, রাস্তার পাশে বাজির পসরা সাজিয়ে বিক্রি করছেন কিছু বিক্রেতা। বাজি কেনায় ক্রেতাদের উৎসাহও ছিল চোখে পড়ার মতো। বিক্রেতাদের একাংশ জানান, বাজি বিক্রি বন্ধের ব্যাপারে পুলিশ-প্রশাসনের নির্দেশিকার কথা তাঁরা জানেন না। পুলিশ অবশ্য বলছে, বিক্রি বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বাজারে প্রকাশ্যে বাজি বিক্রির কথা শুনে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয় হাসনাবাদ থানার তরফে। বায়লানি বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক আনোয়ার শেখ বলেন, “হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করে যে সব দোকানদার বাজি বিক্রি করছেন, তাঁরা ঠিক করছেন না। তাঁদের বাজি বিক্রি বন্ধ করা দরকার।”
বসিরহাটের বাজারগুলিতে অবশ্য বাজি বিক্রি হতে দেখা যাচ্ছে না। অন্যান্য বছর কালীপুজোর আগে এ সময়ে বাজার এলাকাগুলিতে রাস্তার পাশে সার দিয়ে বাজির দোকান বসে যায়। সেই ছবি এ বার অমিল। কালীপুজোর এক সপ্তাহ আগে থেকেই সন্ধ্যার পরে বাজি-পটকার শব্দ শোনা যায়। এ বার তা-ও নেই। তবে ক্রেতারা জানালেন, বাড়তি টাকা দিলে ঘুরপথে বাজি পাওয়া যাচ্ছে। শহরের বাজারগুলিতে পুলিশের কড়া দৃষ্টি থাকলেও, গ্রামীণ এলাকায় ছোট, বড় দোকানে বাজি পাওয়া যাচ্ছে বলে অভিযোগ। এ দিকে, বাজি বিক্রি বন্ধ হওয়ায় ব্যবসায়ীরা সমস্যায় পড়েছেন। তাঁদের অনেকেই জানান, ঋণ করে টাকা জোগাড় করে হাজার হাজার টাকার বাজি মজুত করেছেন। এখন বাজি বিক্রি বন্ধ হওয়ায় কী ভাবে ঋণের টাকা শোধ করবেন ভেবে পাচ্ছেন না অনেকেই।
বাজির বড় বাজার রয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনায়। চম্পাহাটির হারাল এলাকায় প্রতি বছর বাজি বাজার মেলার চেহারা নেয়। হাজার হাজার মানুষের ভিড় জমে। এ বার অবশ্য কার্যত ফাঁকা এলাকা। ক্রেতাদের ভিড় নেই। দোকানপাটও বসেনি। তবে তার মধ্যেও চোরাগোপ্তা বাজি বিক্রি হচ্ছে বলে অভিযোগ।
লুকিয়ে চুরিয়ে বাজি বিক্রি হচ্ছে ক্যানিং বাজারেও। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাজি ব্যবসায়ী বলেন, “দু’লক্ষ টাকার বাজি ইতিমধ্যেই তোলা হয়েছে। এখনও এক লক্ষ টাকার বাজির অর্ডার দেওয়া রয়েছে। বিক্রি না করতে পারলে অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে। তাই লুকিয়ে-চুরিয়ে বিক্রি করছি।”
বারুইপুর পুলিশে জেলার তরফে বাজি বন্ধে প্রায় রোজই অভিযান চলছে। শনিবারই ভাঙড়ে প্রকাশ্যে বিক্রি হওয়া বাজি পুলিশ গিয়ে বাজেয়াপ্ত করেছে। পুলিশ জেলার এক আধিকারিক বলেন, “বাজি বিক্রি বন্ধ করতে পুলিশ সব রকম ভাবে সক্রিয় রয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় নজরদারি চালানো হচ্ছে। এমনকী, সাদা পোশাকেও পুলিশ নজর রাখছে।” —ছবি: নবেন্দু ঘোষ