মাল্যদান: পরিবর্তন যাত্রায় বেরিয়ে বিভূতিভূষণের মূর্তিতে মালা দিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। — ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক ।
বিজেপির রথযাত্রায় জড়িয়ে গেল বনগাঁ মহকুমার দুই মনীষীর নাম। একজন নীলদর্পণ নাটকের স্রষ্টা দীনবন্ধু মিত্র, অন্যজন পথের পাঁচালির স্রষ্টা কথা সাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়। দু’জনই বনগাঁ মহকুমার মানুষের কাছে গর্বের নাম।
বৃহস্পতিবার সকালে গোপালনগরের নিমতলা এলাকা থেকে উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় বিজেপির রথযাত্রার সূচনা হয়। ওই এলাকার কাছেই দীনবন্ধু মিত্রের বাড়ি। রথযাত্রার শুরুতেই কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সঞ্জীবকুমার বালিয়ান দীনবন্ধু মিত্রের বাড়ি গিয়ে আবক্ষ মূর্তিতে মালা দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। সঙ্গে ছিলেন বিজেপির রাজ্য সহ সভাপতি বিশ্বপ্রিয় রায়চৌধুরী, বনগাঁ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি মনস্পতি দেব, সাধারণ সম্পাদক দেবদাস মণ্ডল। পরে যোগদদান করেন বনগাঁর সাংসদ শান্তনু ঠাকুর।
পরিবর্তন যাত্রায় পুলিশি নিরাপত্তা ছিল যথেষ্ট আঁটোসাটো। রথযাত্রার সামনে-পিছনে ছিলেন পুলিশ কর্তারা। সামনে বাইক এবং গাড়িতে ছিলেন বিজেপি নেতা-কর্মীরা। রাস্তার দু’পাশে বহু মানুষ দাঁড়িয়ে রথযাত্রা দেখেন। রথ লক্ষ্য করে ফুল ছোড়েন অনেকে। মহিলারা উলুধ্বনি দেন।
নহাটা, গোপালনগর, বারাকপুর, নাটাবেড়িয়া, বাজিতপুর, সিন্দ্রাণী, হেলেঞ্চা হয়ে রথযাত্রা এ দিন শেষ হয় বনগাঁ শহরের মতিগঞ্জ এলাকায়। বারাকপুরে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বিভূতিভূষণ স্মৃতিঘাটে সাহিত্যিকের মূর্তিতে মালা দেন। পাশেই সাহিত্যিকের বসতবাড়ি। সেখানে অবশ্য নেতারা যাননি।
দিন কয়েক আগে ঠাকুরনগরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সভা করতে এসেছিলেন। সেখানে তিনি বিভূতিভূষণের নাম নিয়েছিলেন। বাংলার সংস্কৃতির সঙ্গে নৈকট্য প্রমাণে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বিশেষ চেষ্টা রাজনৈতিক মহলের নজরে আছে। দীনবন্ধু মিত্রের বসত বাড়ি এখন আগাছায় ভরা। বিষাক্ত সাপেদের আস্তানা। পলেস্তারা খসে পড়েছে। ঐতিহাসিক বাড়িটি আজ ধ্বংসস্তূপে পরিণত। বিভূতিভূষণের বাড়িও অযন্তে পড়ে আছে। মহকুমার মানুষের দীর্ঘ দিনের দাবি, বাড়ি দু’টি সংরক্ষণ করে সরকার সংগ্রহশালা তৈরি করুক। বিজেপি সেই দাবি উসকে দিয়েছে এ দিন।
বিজেপির বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সাধারণ সম্পাদক দেবদাস মণ্ডল বলেন, ‘‘দীনবন্ধু মিত্র এবং বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় বনগাঁ মহকুমার মানুষ। তাঁদের জন্য আমরা গর্বিত। অথচ তাঁদের বসত বাড়ি সংক্ষরণে দশ বছর সময় পেয়েও তৃণমূল কিছুই করল না। তাঁদের প্রতি অনাদর দেখে আমরা লজ্জিত। বিজেপি ক্ষমতায় এলে আমরা তাঁদের বাড়ি সংক্ষরণ করে সংগ্রহশালা তৈরি করব।’’ তৃণমূল অবশ্য বিজেপির এই কর্মসূচিকে কটাক্ষ করেছে। দলের জেলা কো-অর্ডিনেটর গোপাল শেঠ বলেন, ‘‘বিজেপি রাজনৈতিক প্রচারে দীনবন্ধু মিত্র ও বিভূতিভূষণ বন্দ্যোধ্যায়কে যুক্ত করে তাঁদের অসম্মান করেছে।’’ গোপালের দাবি, ‘‘দীনবন্ধু মিত্রের বাড়ি ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকার হেরিটেজ ঘোষণা করেছে। শীঘ্রই সংস্কারের কাজ শুরু হবে। বিভূতিভূষণের বাড়ি জেলাপরিষদের পক্ষ থেকে সংস্কার করা হয়েছে। জমি-বাড়ি বিভূতিভূষণের পরিবারের হাতে থাকায় রাজ্য সরকার সেখানে সংগ্রহশালা তৈরি করতে পারছে না।’’
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এ দিন বলেন, ‘‘এ বার বাংলায় সত্যিকারের পরিবর্তন হবে। মানুষের যা সাড়া পাওয়া যাচ্ছে, তাতে পরিবর্তন সময়ের অপেক্ষা। বিজেপি ছাড়া আর কারও অস্তিত্ব চোখে পড়ছে না। বাংলার সার্বিক বিকাশ হবেই।’’ গোপাল বলেন, ‘‘রথযাত্রার মাধ্যমে বিজেপি বিদায়যাত্রা শুরু করেছে। মানুষ ওদের প্রত্যাখান করছেন।’’
সোমবার নবান্ন থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাগদার হেলেঞ্চায় হরিচাঁদ ঠাকুরের একটি মূর্তির ভার্চুয়াল উদ্বোধন করেছিলেন। মূর্তিতে তৃণমূল নেতা গোপাল শেঠের আর্থিক সাহায্য আছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বিজেপির পরিবর্তন যাত্রার রথ হেলেঞ্চায় পৌঁছলে সাংসদ শান্তনু ঠাকুর গুরুচাঁদ ঠাকুরের মূর্তিতে মালা দেন। শান্তনু বলেন, ‘‘মূর্তি কেন বানাল, কে প্রতিষ্ঠা করল সেটা
বিষয় নয়। ঠাকুরের মূর্তি যেখানে থাকবে মালা দেব।’’