বারাসত ডাকবাংলোর মোড়ে বিক্ষোভের ছবি। বুধবার রাতে। ছবি: ভিডিয়ো থেকে।
আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে বুধবার রাতে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় পথে নেমেছিলেন সাধারণ মানুষ। উত্তর ২৪ পরগনার বারাসতেও তেমন কর্মসূচি হয়। তবে বারাসতের জমায়েত থেকে জাতীয় সড়ক অবরোধ, মত্ত অবস্থায় পুলিশের সঙ্গে দুর্ব্যবহার, সরকারি সম্পত্তি নষ্ট ইত্যাদি অভিযোগে পাঁচ মহিলা-সহ ১৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশের দাবি, বার বার অনুরোধ করার পরেও জাতীয় সড়কে মালবাহী ট্রাকের পথ আটকে অবস্থান বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন কয়েক জন। কিছু গাড়িতে জরুরি পরিষেবা সংক্রান্ত জিনিসপত্র ছিল। পুলিশের আরও অভিযোগ, প্রতিবাদীদের অনেকেই ‘মত্ত’ অবস্থায় ছিলেন। বৃহস্পতিবার ধৃতদের বারাসত আদালতে হাজির করানো হয়। বিচারক ১৮ জনকেই ২ হাজার টাকার ব্যক্তিগত বন্ডের বিনিময়ে জামিন দিয়েছেন। ধৃতদের আইনজীবীরা দাবি করেছেন, আন্দোলনকে থামানোর চেষ্টায় পুলিশ তাঁদের মক্কেলদের ধরেছিল। কোর্ট তা ব্যর্থ করে দিয়েছে বলে তাঁদের দাবি। জামিন পাওয়ার পর প্রতিবাদীরাও জানিয়েছেন, তাঁদের আন্দোলন চলবে।
বুধবার রাতের ঘটনা প্রসঙ্গে বারাসত পুলিশ জেলার সুপার প্রতীক্ষা ঝারখারিয়া জানিয়েছেন, আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে ডাকবাংলো মোড়-সহ বারাসতের বিভিন্ন জায়গায় প্রতিবাদ কর্মসূচি চলছিল। আগে থেকে অনুমতিও নেওয়া হয় ওই সব কর্মসূচির। রাত ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত কর্মসূচির অনুমতি দেওয়াও হয়। ডাক বাংলো মোড়ের কর্মসূচি শেষে এক দল আন্দোলনকারী বারাসতের কলোনি মোড়ে গিয়ে জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন। এসপির দাবি, প্রতিবাদীদের বার বার অনুরোধ করা হলেও তাঁরা সরেননি। এর ফলে জাতীয় সড়কে তৈরি হয় তীব্র যানজট। আটকে পড়ে জরুরি পণ্য পরিবহণকারী গাড়ি। বারাসতের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার স্পর্শ নীলাঙ্গি বলেন, ‘‘অনেক বার অনুরোধ করা হয়েছিল অবরোধকারীদের। তাঁদের বলা হয়েছিল, সরে গিয়ে অবস্থান বিক্ষোভ দেখাতে। জরুরি পণ্যবাহী গাড়ির চালকেরা এসেও বার বার অনুরোধ করতে থাকেন। তাঁদের জিনিসপত্র পচে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়।’’
স্পর্শের অভিযোগ, বিক্ষোভকারীরা সহযোগিতা করেননি। যানজট বৃদ্ধি পেতেই থাকে। অবশেষে রাত ৩টে নাগাদ আবার অনুরোধ করা হয়। এর পরেই বিক্ষোভকারীরা পুলিশের সঙ্গে ‘দুর্ব্যবহার’ করতে শুরু করেন। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, ‘‘ঘটনাস্থলে অনেক মহিলা পুলিশকর্মীও ছিলেন। বিক্ষোভকারীদের অনেকেই মত্ত ছিলেন। যাঁরা পুলিশের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছেন এমন ১৮ জনকে আটক করে গাড়িতে তোলা হয়। বাকিরা অবরোধস্থল থেকে সরে যান। ধৃত ১৮ জনের মধ্যে পাঁচ জন মহিলাও ছিলেন।’’
বিক্ষোভকারীদের আইনজীবী মিহির দাস যদিও বলেন, ‘‘খুনের চেষ্টা, বেআইনি জমায়েত, সরকারি সম্পত্তি নষ্ট, পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার মতো একাধিক মামলা দেওয়া হয়েছিল ধৃতদের বিরুদ্ধে। পুলিশের অপদার্থতা ঢাকার জন্য এ সব করা হয়েছে। কাউকে মিথ্যা মামলায় জড়াতে গেলে যা হয়, তা হয়েছে।’’ তিনি এ-ও দাবি করেছেন, আইন না মেনে বুধবার রাতে পাঁচ মহিলাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। অন্য এক আইনজীবী এমডি শাহিদুজ্জামান বলেন, ‘‘আন্দোলনকে থামানোর চেষ্টা হয়েছিল, তা ব্যর্থ করে দিল কোর্ট।’’