— প্রতীকী চিত্র।
কলকাতা-সহ প্রায় গোটা রাজ্যে ডেঙ্গির গ্রাফ ঊর্ধ্বমুখী। এর মধ্যে দক্ষিণ ২৪ পরগনার পরিস্থিতি বেশ উদ্বেগজনক। সেই উদ্বেগই আরও বাড়িয়েছে নিষিদ্ধ ওষুধ। স্বাস্থ্য দফতরের একটি সূত্র বলছে, এই জেলায় বহু ডেঙ্গি আক্রান্ত রোগী হাতুড়ে চিকিৎসকের দ্বারস্থ হচ্ছেন। তার পর তাঁদের পরামর্শে খাচ্ছেন নিষিদ্ধ ওষুধ। তাতেই বাড়ছে বিপদ।
ডেঙ্গি ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে বারুইপুর এবং ক্যানিং মহকুমায়। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, জয়নগরের বেশ কয়েকটি পঞ্চায়েত এলাকায় ডেঙ্গি আক্রান্তেরা সরকারি হাসপাতালে না গিয়ে হাতুড়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হচ্ছেন। তাঁদের বাড়ি থেকে পাওয়া যাচ্ছে নিষিদ্ধ ওষুধ নিমেসুলাইড। ২০১১ সালে এই ওষুধ নিষিদ্ধ হয়। চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামী জানালেন, এই ওষুধ বহু বছর আগে নিষিদ্ধ হওয়ার পরেও বেআইনি ভাবে কিছু ওষুধের দোকানে বিক্রি হয়। হাতুড়ে চিকিৎসকেরাও অনেক সময় এই ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ দেন। শরীরে ব্যথা, জ্বর কমানোর এই ওষুধের নানা রকম পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে। খেলে লিভারের ক্ষতি হয়।
স্বাস্থ্য দফতরের একটি সূত্র বলছে, দক্ষিণ ২৪ পরগনার বেশ কিছু এলাকায় না বুঝে এই ওষুধ খাচ্ছেন ডেঙ্গি রোগীরা। তার ফলে তাঁদের অবস্থার অবনতি হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্য দফতর। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দক্ষিণ ২৪ পরগনার এক স্বাস্থ্য আধিকারিক বলেন, ‘‘কারা এই নিষিদ্ধ হয়ে যাওয়া ওষুধ তৈরি বা বিক্রি করছেন, তার সঠিক তদন্ত হওয়া উচিত। গ্রামীণ এলাকায় সমস্যা তৈরি হচ্ছে। সেখানে নজরদারির অভাব এখনও রয়েছে।’’
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, চলতি বছর এখন পর্যন্ত বারুইপুর মহকুমায় ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়েছেন ৬৫৩ জন। এর মধ্যে রাজপুর-সোনারপুর পুরসভায় ১৪৫ জন আক্রান্ত, বারুইপুর পুরসভায় ২৪ জন, জয়নগর-মজিলপুর পুরসভায় চার জন আক্রান্ত। পাশাপাশি, বারুইপুর ব্লকে ১১৯ জন, জয়নগর ১ ব্লকে ১০৩ জন, জয়নগর ২ ব্লকে ৮৯ জন, কুলতলি ব্লকে ৫১ জন, সোনারপুর ব্লকে ২৮ জন, ভাঙড় ১ ব্লকে ৪১ জন, ভাঙড় ২ ব্লকে ৪৯ জন আক্রান্ত। অন্য দিকে, ক্যানিং মহকুমায় ডেঙ্গিতে আক্রান্ত ১২১ জন। ক্যানিং ১ ব্লকে ৫৮ জন, ক্যানিং ২ ব্লকে ২৫ জন, বাসন্তীতে ২৫ জন, গোসাবায় ১৩ জন আক্রান্ত।
স্বাস্থ্য দপ্তরের এক আধিকারিক বলেন, জয়নগরের শ্রীপুর পঞ্চায়েত সহ বেশ কয়েকটি পঞ্চায়েত এলাকায় বাড়ি বাড়ি ঘুরে দেখা গিয়েছে, ডেঙ্গি আক্রান্তেরা দোকান থেকে নিষিদ্ধ ওষুধ কিনে খাচ্ছেন। যেমন, গাজিপাড়ায় একাধিক রোগীর বাড়ি থেকেই পাওয়া গিয়েছে নিমেসুলাইড। হাতুড়ে চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরও এমন অনেক ওষুধ তাঁরা রোগীদের দিচ্ছেন বলে অভিযোগ। বাসিন্দাদের অভিযোগ, এলাকায় আবর্জনা, জল জমে থাকলেও নজরদারি হচ্ছে না। ওয়ার্ডগুলিতে নিয়মিত তেল, ব্লিচিং পাউডার দেওয়া হচ্ছে না। সে কারণে বাড়ছে ডেঙ্গির প্রকোপ।