Auto Driver

ওঝার হাত থেকে শিশুকে কেড়ে হাসপাতালে দুরন্ত

ঘটনাটা চোখে পড়ে স্থানীয় এক অটো চালকের। তিনি কার্যত ওঝার সঙ্গে বচসা করে শিশুটিকে নিয়ে নিজের অটোতে বসিয়ে ছোটেন হাসপাতালে।

Advertisement

প্রসেনজিৎ সাহা

বাসন্তী শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০১৯ ০২:৩৫
Share:

সাহসী। নিজের অটোয় বসে দুরন্ত। নিজস্ব চিত্র

জল থেকে যখন তোলা হয়েছিল বছরখানেকের শিশুটিকে, তখন নেতিয়ে পড়েছে সে। বাবা-মা ছোটেন ওঝার কাছে।

Advertisement

ঘটনাটা চোখে পড়ে স্থানীয় এক অটো চালকের। তিনি কার্যত ওঝার সঙ্গে বচসা করে শিশুটিকে নিয়ে নিজের অটোতে বসিয়ে ছোটেন হাসপাতালে। আপাতত নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে ওই শিশুর।

মঙ্গলবার বিকেলে ঘটনাটি ঘটেছে বাসন্তীর ২ নম্বর সোনাখালি গ্রামে। খেলতে খেলতে সকলের নজরের আড়ালে পুকুরে পড়ে গিয়েছিল পরম নস্কর। খানিকক্ষণ পরে তাকে তোলা হয়। পরিবারের লোকজন ডেকে আনেন মহাদেব ঘরামি নামে এক গুনিনকে। শুরু হয় ঝাড়ফুঁক। ‘জলরাক্ষস’ তাড়ানোর জন্য তুকতাক করতে থাকে মহাদেব ও তার এক সঙ্গী দীপঙ্কর মণ্ডল।

Advertisement

শিশুটিকে মাথায় নিয়ে পুকুরের চারিদিকে ঘোরানো হয়। চলতে থাকে আরও নানা কেরামতি।

এ সব দেখতে তখন পুকুর পাড়ে শ’য়ে শ’য়ে মানুষের ভিড়। লাগোয়া রাস্তা ধরে অটো নিয়ে যাচ্ছিলেন চালক দুরন্ত মণ্ডল। তিনি ব্যাপার-স্যাপার দেখে থ। ভিড় ঠেলে এগিয়ে সটান রুখে দাঁড়ান।

কাজটা সোজা ছিল না। শিশুটির তখন প্রাণ নিয়ে টানাটানি। গ্রামের মানুষ ঘিরে আছে ওঝাকে। পরমের বাবা-মা কান্নাকাটি করছেন। দমেননি দুরন্ত। তিনি বলেন, ‘‘এ সব বুজরুকি চলবে না। প্রাণ বাঁচাতে হলে ছেলেকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।’’

গুনিন ফুঁসে ওঠে। কাজে বাধা দিলে শিশুটির ক্ষতি হতে পারে বলে পরিবারের লোকজনকে ভয় দেখায়। গ্রামের দু’চার জনও ওঝার পক্ষ নিয়ে মুখ খুলতে শুরু করেন। কিন্তু দুরন্ত পরমের বাবা ঘটক ও সুষমাকে লাগাতার বোঝাতে থাকেন। তাঁরা তখনও আমতা আমতা করছেন। কিন্তু দুরন্ত আর দেরি করেননি। তিনি পরম আর তার পরিবারের লোকজনকে অটোতে তুলে রওনা দেন ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালের দিকে।

সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে চিকিৎসকেরা জানান, অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। দ্রুত শিশুটিকে ভেন্টিলেশনে দেওয়ার প্রয়োজন। কলকাতার চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে স্থানান্তরিত করা হয় পরমকে। কিন্তু সেখানে ভেন্টিলেশন ফাঁকা না থাকায় ভর্তি করা হয় নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজে। ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালের চিকিৎসক তাপস রায় বলেন, ‘‘আর একটু দেরি হলে শিশুটিকে বাঁচানোই যেত না।’’

দুরন্তকে কৃতজ্ঞতা জানাতে ভোলেননি পরমের বাবা-মা। ঘটক বলেন, ‘‘উনি কোথা থেকে যেন দেবদূতের মতো হাজির হলেন। ধন্যবাদ জানানোর ভাষা নেই।”

বিজ্ঞান সংস্থার সদস্য রাতুল ঘোষ বলেন, ‘‘মানুষকে আরও সচেতন হতে হবে। ওঝা-গুনিনের ভরসায় থাকলে চলবে না।’’

কী বলছেন দুরন্ত?

তাঁর কথায়, “এর আগেও আমাদের এই এলাকায় অনেক শিশুর জলে ডুবে মৃত্যু হয়েছে। সঠিক সময়ে হাসপাতালে নিয়ে না যাওয়ার জন্যই তেমন ঘটেছে। এখন চাই, বাচ্চাটা যেন হাসপাতাল থেকে ভালয় ভালয় বাড়ি ফিরে আসে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement