নবান্নে এই বৈঠকে বিভিন্ন জেলার প্রশাসনিক আধিকারিক ছাড়াও কয়েক’টি বাজি ব্যবসায়ী সমিতির প্রতিনিধিরাও উপস্থিত থাকতে পারেন। — গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
পূর্ব মেদিনীপুরের এগরা, দক্ষিণ ২৪ পরগনার বজবজের পর মালদহের ইংরেজবাজার। রাজ্যে একের পর এক বাজি কারখানা এবং গুদামে বিস্ফোরণ এবং প্রাণহানির ঘটনার আবহে বিশেষ বৈঠক ডাকলেন রাজ্যের মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী। সূত্রের খবর, আতশবাজি সংক্রান্ত ওই আলোচনা হবে মঙ্গলবার বিকেল ৫টায়। নবান্নে এই বৈঠকে বিভিন্ন জেলার প্রশাসনিক আধিকারিক ছাড়াও কয়েক’টি বাজি ব্যবসায়ী সমিতির প্রতিনিধিও উপস্থিত থাকতে পারেন।
পূর্ব মেদিনীপুরের এগরার খাদিকুল গ্রামের বাজি কারখানায় বিস্ফোরণ ঘটে গত ১৬ মে। মৃত্যু হয় অন্তত ৯ জনের। তার পাঁচ দিনের মাথায়, গত ২১ মে বজবজে বিস্ফোরণে প্রাণ হারান তিন জন। এর পর সোমবারই রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে আতশবাজি নিয়ে ক্লাস্টার গড়তে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এই নতুন কমিটির নাম ঘোষণা করেন। মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে এই কমিটিতে রয়েছেন অর্থ, দমকল, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প, পরিবেশ ও পুর নগরোন্নয়ন সচিব। ওই কমিটি আগামী ২ মাসের মধ্যে রাজ্য সরকারকে একটি রিপোর্ট দেবে। তার ভিত্তিতে ক্লাস্টার গড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। বেআইনি বাজি কারখানা বন্ধ করতেই এই উদ্যোগ বলে মনে করা হচ্ছে। ফিরহাদ জানান, সম্প্রতি পূর্ব মেদিনীপুরে একটি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। বাজি বিষয়ে আজ মন্ত্রিসভার বৈঠকে একটি প্রস্তাব আনা হয়েছিল। তাতে সম্মতি দিয়েছে মন্ত্রিসভা। নতুন এই ক্লাস্টার তৈরি হলে জেলায় ঘরের কাছে থেকেই যেমন কাজ পাওয়া যাবে। তেমনই পরিবেশবান্ধব বাজিও তৈরি করা যাবে।’’
এর মধ্যে মঙ্গলবার মালদহের ইংরেজবাজারে একটি বাজির গুদামে আগুন লাগে। মৃত্যু হয় দু’ জনের। তার মধ্যে বেশ কয়েক’টি জায়গা থেকে অবৈধ ভাবে মজুত রাখা বাজি উদ্ধারে অভিযান শুরু করেছে পুলিশ। মঙ্গলবারই দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুরে ৫ হাজার কেজি বাজি উদ্ধার করেছে পুলিশ। হাওড়ার বিভিন্ন থানা এলাকা থেকে ৮০০ কেজি বাজি উদ্ধারের খবর পাওয়া গিয়েছে। ৩ জন গ্রেফতারও হয়েছেন। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় বারুইপুর, চাম্পাহাটিতে আগামী দু’মাস বাজি তৈরি, মজুত এবং বিক্রি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে বারুইপুর জেলা পুলিশ। মঙ্গলবার দুপুরে আবার ৫ হাজার কেজি নিষিদ্ধ বাজি উদ্ধার করে বারুইপুর থানার পুলিশ।
এসবের মধ্যে বাজি ব্যবসায়ী এবং কারখানা মালিকরা ক্ষুব্ধ। তাঁদের প্রশ্ন, কিছু অসাধু মানুষের জন্য বাজি শিল্পের সঙ্গে জড়িত এত মানুষ কেন প্রভাবিত হবেন? বাজি ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ বলছেন, লাইসেন্স নবীকরণের আবেদন সরকার গ্রহণ না করায় বেশির ভাগ কারখানাই তো অবৈধ। দক্ষিণ ২৪ পরগনার এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘‘১৯৯৬ সালে শব্দবাজি বন্ধ হওয়ার পর প্রাক্তন সাংসদ সুজন চক্রবর্তী দরবার করেন। সেই সময় ৭২ জন ট্রেনিং নেন। শেষমেশ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র তৈরি হয় কেন্দ্রীয় সরকারের সহযোগিতা এবং সাহায্য নিয়ে। আগে বলা হয়েছিল কেমিক্যাল ল্যাব হবে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘২০২০ সালের পর বাজি বিক্রি এবং তৈরির কোনও লাইসেন্স দিচ্ছে না প্রশাসন। তখন থেকেই তো অবৈধ হয়ে গেল। তাহলে ওই লোকগুলো কী করবে?’’ এ নিয়ে জটিলতা কাটাতেই এই বৈঠক বলে খবর।