প্রতীকী চিত্র
তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ যে বিস্তর, তা বিলক্ষণ জানেন সমর বিশ্বাস, ইসমাইল মল্লিক। আনাজের দাম চড়লে অবধারিত ভাবে আঙুল ওঠে তাঁদের দিকে। কারণ, তাঁদের ভূমিকা ফড়ে হিসাবে নানা ভাবে সমালোচিত হয়। কাঁচা আনাজের এই দুই পাইকারি ব্যবসায়ী বলেন, “কাঁচা আনাজের কারবারে লাভ তো পদ্মপাতায় জলের মতো। দেগঙ্গা বা আমডাঙা থেকে আসানসোলে আনাজ নিয়ে যেতে গেলে বিস্তর হ্যাপা। তবুও এই কারবারেই তো পেটে ভাত হয়।” তাঁদের আশঙ্কা, নতুন কেন্দ্রীয় কৃষি আইন চালু হলে তাঁদের ভবিতব্য কী হবে! চিন্তায় পড়েছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরাও। তাঁদের প্রশ্ন, “আনাজের কারবারে যদি বহুজাতিক সংস্থা আসে, তা হলে আমাদের কী হবে? আমরা তো এঁটে উঠতে পারব না তো ওদের সঙ্গে!”
কিন্তু প্রধানমন্ত্রী তো বলেছেন ফড়েরাজ খতম করাই তো এই আইনের লক্ষ্য। সমর বিশ্বাসের পাল্টা প্রশ্ন, “বড় সংস্থা ফসল কিনলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে? কিছু সংস্থা যদি সব আনাজ-ফসল মজুত করে কালোবাজারি করে, তা হলে নতুন আইন তো তাঁদের ছুঁতেও পারবে না! কিন্তু আমাদের রুজি বন্ধ হলে রুটির ব্যবস্থা কে করবে?” ফড়েদের এড়িয়ে বিকল্প ব্যবস্থা তো দুই ২৪ পরগনাতেই হয়েছে। ফার্মার প্রডিউসার কোম্পানি (এফপিসি) তৈরি করে চাষিদের সেই সংস্থায় এনে আনাজ বাজারজাত করার সমান্তরাল ব্যবস্থা তৈরি হয়েছে। সংস্থা তার সদস্যদের আনাজ সংগ্রহ করে সরাসরি বিভিন্ন বাজার-রিটেল চেনে সরবরাহ করে। তার ফলে চাষিরা ন্যায্য দাম পাচ্ছেন। কৃষি আধিকারিকেরা মনে করছেন, এই ব্যবস্থা আরও বিস্তৃত হলে প্রতিযোগিতায় পড়ে পাইকারি ব্যবসায়ীরাও চাষিদের থেকে ন্যায্য দামে আনাজ কিনবেন। সব থেকে বড় কথা, এফপিসি কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারেরই প্রকল্প। আর তার পাইলট প্রকল্প শুরু হয়েছিল দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড়ে। সেই প্রকল্প কিন্তু সফল। সংস্থার সদস্য বর্তমানে ১৭৫০। সেই সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। ভাঙড় এফপিসি-র চেয়ারম্যান আব্দুল জব্বার খান বলেন, “নতুন আইনের বিস্তারিত আমরা কিছু জানি না। আশা করি, এতে আমাদের মতো চাষিদের সংস্থার স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হবে না। যদি দেখা যায়, এফপিসি-র স্বার্থ ক্ষুণ্ন হচ্ছে, তা হলে আমরা বিরোধিতা করব।’’ বনগাঁ-বসিরহাট-বারাসত মহকুমার বিভিন্ন হাট-বাজার থেকে বা সরাসরি খেত থেকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা আনাজ কিনে ভিনজেলায় বা রাজ্যে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করেন। সেটাই তাঁদের জীবনধারণের অবলম্বন। তাঁরা জানালেন, এক জায়গা থেকে কিনে অন্য জায়গায় বেশি দামে বিক্রি করাটাই তাঁদের কারবার। বেশি মজুত করে কালোবাজারি তাঁরা করেন না। বড় আড়তদারেরা তা করে থাকেন বলে অভিযোগ। নতুন আইনে মজুতদারেরা ক্ষতিগ্রস্ত না হলেও তাঁদের ক্ষতির আশঙ্কা ষোল আনা। তার দায় কে নেবে? এই প্রশ্নের জবাব আপাতত নেই।
(শেষ)