আক্রান্ত বেলঘরিয়ার বাসিন্দা সায়ন ঘোষ। —নিজস্ব চিত্র।
দিন দশেক আগে ঢাকায় বন্ধুর বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলেন উত্তর ২৪ পরগনার বেলঘরিয়ার বাসিন্দা সায়ন ঘোষ। তিন দিন পরেই ফেরার কথা ছিল দেশে। অভিযোগ, তার আগেই ঢাকায় প্রকাশ্য রাস্তায় কয়েক জন দুষ্কৃতীর হাতে আক্রান্ত হলেন তিনি। কোনও রকমে বন্ধুর সাহায্যে প্রাণ বাঁচিয়ে দেশে ফিরেছেন। সেই অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে শিউরে উঠলেন সায়ন।
দিন কয়েক ধরেই সংখ্যালঘুদের উপর হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তাল বাংলাদেশের একাংশ। অভিযোগ, একের পর এক সংখ্যালঘু নেতা, সন্ন্যাসীদের গ্রেফতার করছে বাংলাদেশের পুলিশ। তাঁদের মুক্তির দাবিতে পথে নেমেছেন সে দেশের সনাতনীরা। প্রতিবাদ করতে গিয়ে অনেকেই আক্রান্ত হচ্ছেন বলেও খবর। ‘অস্থির’ বাংলাদেশে বেড়াতে গিয়ে বিপদে পড়েছিলেন সায়ন। তাঁকে দেশে ফিরতে হল রক্তাক্ত অবস্থায়। বাড়ি ফিরেই বাংলাদেশের পুলিশ-প্রশাসনের বিরুদ্ধে একরাশ ক্ষোভ উগরে দিলেন বেলঘরিয়ার যুবক।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বেলঘরিয়ার ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের দেশপ্রিয় নগর এলাকার বাসিন্দা সায়ন। ২৩ নভেম্বর ঢাকায় বন্ধুর বাড়িতে গিয়েছিলেন তিনি। ফেরার কথা ছিল নভেম্বরের ২৬ তারিখ। অভিযোগ, ফেরার আগের দিন বন্ধুর সঙ্গে ঢাকার বাজারে ঘুরতে বেরিয়েছিলেন সায়ন। সে সময়ই আচমকা এক দল লোক এসে তাঁদের ঘিরে ধরেন। শুরু হয় ‘জেরা’। ভারত থেকে গিয়েছেন শুনেই নাকি তাঁর উপর চড়াও হন তাঁরা। শুরু হয় মারধর। প্রকাশ্য রাস্তায় এমন ঘটনা দেখেও এগিয়ে আসেননি কেউই। শেষ পর্যন্ত ওই বন্ধুর তৎপরতায় দুষ্কৃতীরা পিছু হটে। তবে তত ক্ষণে রক্তে ভেসে যাচ্ছে সায়নের গোটা শরীর।
সায়নের অভিযোগ, থানায় গিয়েও কোনও লাভ হয়নি। প্রথমেই পুলিশ চিকিৎসা করে আসতে বলে। কিন্তু সে ব্যাপারে কোনও সাহায্য করেনি। তার পর আহত অবস্থাতেই একের পর এক হাসপাতালে ঘুরেছেন সায়ন এবং তাঁর বন্ধু। কেউই সায়নের চিকিৎসা করতে রাজি হননি। শেষে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালে এসে চিকিৎসা হয় তাঁর। অভিযোগ, সায়নের কাছে থাকা মোবাইল এবং টাকাপয়সা সব কেড়ে নিয়েছে দুষ্কৃতীরা। ওই অবস্থাতেই ভয়ে গেদে সীমান্ত থেকে চেকপোস্ট দিয়ে ভারতে চলে আসেন সায়ন।
বাড়ি ফিরেই বেলঘরিয়া থানায় এবং গেদে সীমান্তের শুল্ক অফিসে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন সায়ন। সোমবার কলকাতায় বাংলাদেশের উপদূতাবাসে সব বিষয় জানিয়ে অভিযোগ করবেন বলে জানান তিনি। বাড়ি ফিরে এসেও আতঙ্কে রাতের ঘুম উড়েছে সায়নের। শুধু তা-ই নয়, বাংলাদেশে থাকা তাঁর বন্ধুর জন্যও চিন্তা হচ্ছে তাঁর।
বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার জন্য ভারত বার বার অনুরোধ করেছে সে দেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে। বিদেশ মন্ত্রক থেকে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাবলিতে দিল্লি উদ্বিগ্ন। বাংলাদেশে সংখ্যালঘু-সহ প্রত্যেক নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সে দেশের সরকারের, তা-ও জানিয়েছে ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রক।