Murder

ছিনতাইয়ে বাধা, কাকা ও তাঁর বন্ধুকে গুলি করে খুন করল ভাইপো

সম্প্রতি রাজ্যে একের পর এক ঘটনায় বার বারই প্রশ্ন উঠেছে, এত অস্ত্র কোথা থেকে আসছে? তা হলে কি পুলিশ বা প্রশাসনের কাছে বেআইনি অস্ত্রের বিষয়ে কোনও খবরই থাকে না?

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০২২ ০৭:০১
Share:

(বাঁ দিকে) সাজ্জাদ মণ্ডল ও সৈফুদ্দিন লস্কর।

রাতের অন্ধকারে টাকা ছিনতাই করতে আসা ভাইপোকে বাধা দেওয়ায় তারই ছোড়া গুলিতে মৃত্যু হল কাকা ও তাঁর এক বন্ধুর। মঙ্গলবার গভীর রাতে ঘটনাটি ঘটেছে বারুইপুর থানার নবগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতের গৌড়দহ এলাকায়। নিহত দু’জনের নাম সাজ্জাদ মণ্ডল (৪৮) ও সৈফুদ্দিন লস্কর (৩১)। অভিযুক্ত আব্দুল হামিদ ওরফে বলাই সাজ্জাদের ভাইপো। সে পলাতক বলে জানিয়েছে পুলিশ। এই ঘটনার পরে এলাকার লোকজন হামিদ ও তার পরিজনদের চারটি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেন। পুলিশ ও দমকল পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। সাজ্জাদ ও সৈফুদ্দিনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় প্রথমে বারুইপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে সাজ্জাদকে চিকিৎসকেরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। সৈফুদ্দিনকে নিয়ে আসা হচ্ছিল ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। কিন্তু পথে তাঁর মৃত্যু হয়। বুধবার ঘটনাস্থল থেকে চারটি কার্তুজ ও বেশ কয়েকটি গুলির খোল উদ্ধার করা হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান, সেভেন এমএম পিস্তল থেকে গুলি চালানো হয়েছিল। হামিদের এক দাদাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

Advertisement

সম্প্রতি রাজ্যে একের পর এক ঘটনায় বার বারই প্রশ্ন উঠেছে, এত অস্ত্র কোথা থেকে আসছে? তা হলে কি পুলিশ বা প্রশাসনের কাছে বেআইনি অস্ত্রের বিষয়ে কোনও খবরই থাকে না? এই ঘটনার পরে একই প্রশ্ন তুলেছেন এলাকার বাসিন্দারা।

এক তদন্তকারী অফিসারের ব্যাখ্যা, এক দিকে মুঙ্গের থেকে অস্ত্র পাচার হয়ে বিভিন্ন এজেন্টের মাধ্যমে এখানে এসে পৌঁছচ্ছে। অন্য দিকে, মুঙ্গের থেকে কারিগরদের নিয়ে এসে এলাকাতেই অস্ত্রশস্ত্র তৈরি করাচ্ছে দুষ্কৃতীদের একাংশ। একের পর এক অস্ত্র কারখানা ও আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় এমনই তথ্য উঠে এসেছে। পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘অস্ত্র উদ্ধারে বিশেষ অভিযান চালানো হচ্ছে। তা আরও জোরদার করা হবে।’’

Advertisement

চেষ্টা: গুলি করে কাকা ও তাঁর বন্ধুকে খুন করায় অভিযুক্ত যুবক এবং তার পরিজনদের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল ক্ষুব্ধ জনতা। তা নেভাতে ব্যস্ত দমকল কর্মীরা। বুধবার, বারুইপুরে। নিজস্ব চিত্র

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গৌড়দহে নিজের বাড়ির কাছেই রাতে কয়েক জন বন্ধুর সঙ্গে গল্প করছিলেন পেশায় কৃষক সাজ্জাদ। সেই আড্ডায় এসেছিলেন পাশের হিমচি গ্রামের বাসিন্দা সৈফুদ্দিনও। তিনিও কৃষিকাজ করতেন। অভিযোগ, এক সঙ্গীকে নিয়ে আচমকাই সেখানে হাজির হয় হামিদ। তার পরে সৈফুদ্দিনের কাছ থেকে টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। ভাইপোকে ছিনতাইয়ের চেষ্টা করতে দেখে সাজ্জাদ তাকে বাধা দেন। তখন পিস্তল বার করে কাকার বুকে ও পেটে গুলি করে হামিদ। সৈফুদ্দিন পালানোর চেষ্টা করলে পিছনে ধাওয়া করে তাঁকেও গুলি করে সে। রাস্তার পাশে ছিটকে পড়েন তিনি। এর পরে সৈফুদ্দিনের কাছ থেকে নগদ টাকা ছিনতাই করে চম্পট দেয় হামিদ ও তার সঙ্গী।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী জাহাঙ্গির সর্দার বলেন, ‘‘হামিদ সৈফুদ্দিনের কাছ থেকে টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছিল। সাজ্জাদ বাধা দিয়ে বলেছিলেন, ‘আমার বন্ধু এখানে এসেছে। তুই কেন ওর টাকা ছিনতাই করবি?’ এর পরে সাজ্জাদকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয় হামিদ। তাঁর বুকে ও পেটে গুলি চালায়। সৈফুদ্দিন পালাতে গেলে তাঁকেও ধাওয়া করে গুলি করে। অন্ধকারে টর্চ জ্বালিয়ে কিছুটা দূরে গিয়ে দেখি, সৈফুদ্দিন রাস্তার পাশে পড়ে রয়েছেন। মাথার পিছনে চাপ চাপ রক্ত। এর পরে দু’জনকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।’’

এলাকার বাসিন্দাদের দাবি, অসামাজিক কাজকর্মের অভিযোগে হামিদ বেশ কয়েক বার গ্রেফতার হয়েছে। কিন্তু প্রতি বারই জামিন পেয়ে গিয়েছে সে। ফিরে এসে আবার নানা অপরাধ ঘটিয়েছে। তদন্তকারীরা জানান, গভীর রাতে ওই এলাকায় আড্ডা কেন হচ্ছিল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সেখানে মদের আসর বসেছিল বলে একটি সূত্রে জেনেছে পুলিশ। সাজ্জাদের ছেলে জিয়ারুল মণ্ডল বলেন, ‘‘বাবা সন্ধ্যায় বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন। রাতে বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করছিলেন। ওই সময়ে টাকা ছিনতাই করতে এসে হামিদ গুলি চালিয়ে বাবা ও তাঁর এক বন্ধুকে খুন করে। ওর চরম শাস্তি চাই।’’

বারুইপুর পুলিশ জেলার কর্তাদের দাবি, প্রায় প্রতি সপ্তাহেই কোনও না কোনও এলাকা থেকে আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করা হচ্ছে। তা সত্ত্বেও দুষ্কৃতীদের হাতে কী ভাবে এত সহজে আগ্নেয়াস্ত্র পৌঁছে যাচ্ছে, সেটাই ভাবাচ্ছে তাঁদের। বারুইপুর পুলিশ জেলার স্পেশ্যাল অপারেশন্স গ্রুপের পাশাপাশি রাজ্য পুলিশের এসটিএফ-ও অস্ত্র উদ্ধার করছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement