তৈরি হচ্ছে চুনাখালি সর্বজনীনের মণ্ডপ। ছবি: প্রসেনজিৎ সাহা।
সুন্দরবনের প্রান্তিক মানুষ অনেক সময়ই নিজেদের অঞ্চল ছেড়ে বেরিয়ে নতুন জায়গায় যাওয়ার সুযোগ পান না। জেলা তথা দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপত্যগুলি ঠিক কেমন তা তাঁদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার অন্যতম মাধ্যম দুর্গাপুজো। সে কথা মাথায় রেখেই প্রতি বছর নতুন নতুন মণ্ডপসজ্জা তুলে ধরেন বাসন্তীর চুনাখালি সর্বজনীন পুজো কমিটির উদ্যোক্তারা। এ বছর তাঁদের ভাবনা নবদ্বীপের ইসকন মন্দির।
গ্রামাঞ্চল থেকে মানুষ সে ভাবে শহরের পুজো দেখতে যেতে পারেন না। সে কারণে থিমের মণ্ডপ এলাকার মানুষকে উপহার দেওয়ার কথাই ভাবেন এই পুজো কমিটির সদস্যেরা। এ বছর ৭৭ তম বর্ষে পা দেবে এই দুর্গাপুজো। একদিকে যেমন নবদ্বীপের ইসকন মন্দিরের প্রতিচ্ছবি দেখা যাবে চুনাখালির মণ্ডপে, তেমনই এলোকেশী মা দুর্গা বিরাজ করবেন এখানে।
দুর্গাপুজোর আয়োজনের পাশাপাশি এই পুজো উদ্যোক্তারা নানা সামাজিক দায়বদ্ধতা পালন করে থাকেন। বস্ত্র বিতরণ, রক্তদান উৎসব সবই পালিত হয় দুর্গাপুজোকে কেন্দ্র করে। এই এলাকায় সে ভাবে বড় কোনও পুজো হয় না, তাই এই পুজোকে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠিত হয় ম্যাজিক শো, কথা বলা পুতুলের শো, যাত্রাপালা, তরজা গান, বাউল গান ইত্যাদি। পুজো ঘিরে চলে সাত দিনের মেলা।
এ বছর চুনাখালির পুজোর বাজেট প্রায় ১২ লক্ষ টাকা। মণ্ডপ তৈরি করছেন মেদিনীপুরের শিল্পীরা, প্রতিমা কুমোরটুলির। বাঁশ, কাঠ-সহ সমস্ত পরিবেশ-বান্ধব সামগ্রী দিয়েই তৈরি হচ্ছে মণ্ডপ। পুজো কমিটির সভাপতি অরুণ মণ্ডল বলেন, “এই এলাকা পিছিয়ে পড়া আদিবাসী অধ্যুষিত। এলাকাবাসীর পক্ষে শহর বা শহরতলির পুজো দেখার সুযোগ হয় না। তাঁদের শহরের পুজোর আনন্দ দিতেই আমরা প্রতি বছরই বিভিন্ন মন্দিরের আদলে মণ্ডপ নির্মাণ করি। তবে আমাদের প্রতিমা সাবেক। গ্রামের মানুষ থিমের প্রতিমায় প্রাণ খুঁজে পান না।”
পুজো কমিটির সম্পাদক নিমাই মালি বলেন, “শুধু পুজো নয়, আমাদের পৃষ্টপোষক বাপ্পাদিত্য নস্করের নির্দেশে আমরা এলাকার মানুষের পাশে দাঁড়াতে দুঃস্থদের বস্ত্র বিতরণ, মশারি বিতরণ করি, তেমনই রক্তদান, চক্ষু পরীক্ষা, স্বাস্থ্য শিবিরের আয়োজনও করা হয়।”
পুজোর সাংস্কৃতিক সম্পাদক বাপ্পাদিত্য হাউলি বলেন, “পুজোকে কেন্দ্র করে যে মেলা চলে সেখানেই গ্রাম বাংলার সংস্কৃতিকে রক্ষার জন্য মঞ্চ থেকে যাত্রাপালা, তরজা গান, আদিবাসী নাচ, বাউল গানের অনুষ্ঠান যেমন থাকে, তেমনই ছোটদের আনন্দ দিতে কথা বলা পুতুলের শো, ম্যাজিক শোর আয়োজন করা হয়।”
প্রতি বছর সুন্দরবনের গোসাবা, সন্দেশখালি, হিঙ্গলগঞ্জ, বাসন্তী, ক্যানিংয়ের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ আসেন এই পুজো দেখতে। এ বছরও বহু দর্শনার্থীর আগমনে এই মণ্ডপে হবে বলে আশাবাদী পুজো উদ্যোক্তারা।