গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
একটি মামলা, ২০০-র উপর আইনজীবী। আরজি কর হাসপাতালে মহিলা চিকিৎসককে খুন ও ধর্ষণের মামলায় সুপ্রিম কোর্টে পরিস্থিতি এখন এমনই। শীর্ষ আদালতে আরজি কর মামলার শুনানি যত দীর্ঘ হয়েছে ততই বৃদ্ধি পেয়েছে আইনজীবীর সংখ্যা। মামলার শুরুতে ওই সংখ্যা একশোর নীচে থাকলেও এখন তা দ্বিগুণের বেশি। অন্য দিকে, এই মামলায় রাজ্যের আইনজীবীর সংখ্যা কমে গিয়েছে। প্রথম শুনানিতে ২৪ জন থাকলেও এখন রাজ্যের আইনজীবীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৯। আগামী মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে আবার আরজি কর মামলার শুনানি রয়েছে। ইতিমধ্যে ওই মামলায় বক্তব্য জানাতে চেয়ে সেখানে আরও কয়েকটি আবেদন জমা পড়েছে। ফলে ওই দিন সংখ্যা আরও বাড়বে বলে অনেকে মনে করছেন।
আরজি কর হাসপাতাল-কাণ্ডে কলকাতা হাই কোর্টে প্রথমে পাঁচটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়। উচ্চ আদালতে যায় নির্যাতিতার পরিবারও। ওই সব মামলার প্রেক্ষিতে ওই ঘটনায় হাই কোর্ট পুলিশের হাত থেকে তদন্তভার নিয়ে সিবিআইকে দেয়। পরে বিষয়টি নিয়ে স্বতঃপ্রণোদিত পদক্ষেপ করে সুপ্রিম কোর্ট। সেখানে গত ২০ অগস্ট প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে প্রথম শুনানি হয়। এ ছাড়া ওই বেঞ্চে রয়েছেন বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা এবং বিচারপতি মনোজ মিশ্র। শীর্ষ আদালতের নির্দেশনামা মোতাবেক প্রথম শুনানিতে ৯০ জন আইনজীবী দাঁড়িয়েছিলেন। সব চেয়ে বেশি আইনজীবী ছিল রাজ্যের। তাদের পক্ষে ছিলেন ২৪ জন। পরে ২২ তারিখ শুনানিতে রাজ্যের তরফে ছিলেন ২১ জন আইনজীবী। আর ওই দিন মোট আইনজীবীর সংখ্যা ছিল ১২৭। পরের শুনানি, অর্থাৎ গত ৯ সেপ্টেম্বর আইনজীবীর সংখ্যা বৃদ্ধি পায় প্রায় ১০০ জন। ওই দিন আরজি কর মামলায় মোট আইনজীবীর সংখ্যা ছিল ২১০। এই মামলায় রাজ্য, কেন্দ্র ছাড়াও ৩৪টি পক্ষ অংশ নেয়। মিলিত আইনজীবীর সংখ্যা ২০০ ছাড়িয়ে যায়। প্রথম শুনানিতে এই মামলায় ১২টি পক্ষ ছিল।
সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেছেন কয়েক জন চিকিৎসক। তাঁদের পক্ষে রয়েছেন প্রায় ১০ জন আইনজীবী। নির্যাতিতার পরিবারের হয়ে আদালতে সওয়াল করেন আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। তাঁর সঙ্গে শামিম আহমেদ, সুদীপ্ত দাশগুপ্ত-সহ রয়েছেন ১০ জন আইনজীবী। আরজি করের ঘটনায় হাই কোর্টে জনস্বার্থ মামলা করেছিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি সুপ্রিম কোর্টে সাত জন আইনজীবী দাঁড় করিয়েছেন। ওই আইনজীবীদের নেতৃত্বে রয়েছেন বিজেপি সাংসদ বাঁশরী স্বরাজ। জনস্বার্থ মামলাকারী বিজয়কুমার সিঙ্ঘলের হয়ে সওয়াল করছেন আইনজীবী ফিরোজ এডুলজি। গত শুনানিতে পুলিশের তদন্ত নিয়ে তিনি একাধিক প্রশ্ন তোলেন। তাঁর সঙ্গে সুপ্রিম কোর্টে এই মামলায় রয়েছেন আট জন আইনজীবী। আইনজীবী মহেশ জেঠমলানী সওয়াল করেন বিজেপি নেত্রী শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরীর হয়ে। এ ছাড়া তাঁর পক্ষে আরও ছ’জন আইনজীবী রয়েছেন। ২০১২ সালে উত্তর ২৪ পরগনার গাইঘাটায় খুন হয়েছিলেন প্রতিবাদী শিক্ষক বরুণ বিশ্বাস। তাঁর দিদি প্রমীলা বিশ্বাস রায়ও এই ঘটনায় ন্যায়বিচার চেয়ে মামলায় যুক্ত হয়েছেন। তাঁর হয়ে দাঁড়িয়েছেন আইনজীবী ফিরদৌস শামিম এবং গোপা বিশ্বাস।
সুপ্রিম কোর্টে চিকিৎসক, নার্স ও রোগীদের পক্ষে একাধিক সংগঠন মামলা করে। তাদের পক্ষে প্রায় ১০০ জন আইনজীবী দাঁড় করানো হয়। শীর্ষ আদালতে মামলা করে ডক্টর ফর পেশেন্ট, ট্রেনড নার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়া, সেন্ট্রাল কলকাতা ইউনাইটেড ডক্টরস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন, ন্যাশনাল ফেডারেশন অফ রেসিডেন্ট ডক্টর অফ এমস, রেসিডেন্ট ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন এমস, ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্ট, পিপ্লস ভয়েস, ইউনাইটেড ডক্টরস ফ্রন্ট অ্যাসোসিয়েশন, রাজ্য জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টরস, ফেডারেশন অফ রেসিডেন্ট ডক্টর অ্যাসোসিয়েশন ও রাজ্য পিপ্লস ইউনিয়ন ফর সিভিল লিবার্টিজ়।
আইনজীবীরা মনে করছেন, বৃহত্তর স্বার্থে এই মামলাটির ব্যাপকতা রয়েছে বলেই অনেক পক্ষ যুক্ত হয়েছে। ফলে আইনজীবীর সংখ্যাও বেড়েছে। এই মামলার সঙ্গে যুক্ত এক আইনজীবীর কথায়, ‘‘শুধু আরজি করের ঘটনা নয়। অনেকগুলো বিষয় এই মামলায় জড়িত। কেউ ন্যায়বিচার চাইছেন, কেউ সঠিক পথে তদন্ত চাইছেন, কেউ পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। কেউ আবার ওই হাসপাতালে ভাঙচুরের ঘটনায় তদন্তের অগ্রগতি চাইছেন। নিরাপত্তা-সহ চিকিৎসকেরা তাঁদের বিভিন্ন দাবি সামনে রেখেছেন। রাজ্যের অন্যান্য হাসপাতালের বিষয়ও রয়েছে। এ ছাড়া কর্মস্থলে মহিলাদের নিরাপত্তার বিষয়টিও এই মামলায় যুক্ত হয়েছে। বিষয় অনেক, তাই আইনজীবীও অনেক।’’ আগামী শুনানিতে ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন-সহ আরও কয়েকটি সংগঠন বক্তব্য জানানোর জন্য আবেদন করেছে। স্বাভাবিক ভাবে আরজি কর মামলায় আইনজীবী আরও বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে।