বড্ড গরম। বড়রা বলছেন এই সময় বাড়ির বাইরে না যাওয়াই ভাল। অফিসে গেলে এসি ছেড়ে বার হতেই ইচ্ছা করছে না। কিন্তু মন যে মানে না। ভালবাসার মানুষটার সঙ্গে দেখা করতে না পারলে কি ভাল লাগে। গ্রীষ্মের উত্তাপ যে মনের বসন্তকে হারাতে পারে না। তাই কলকাতা শহরেই ছায়া খুঁজে নেয় প্রেমিক মন।
না। দিনের বেলাটা আউটডোর প্রেম বাতিল করতেই হবে। ঘেমে নেয়ে প্রেম হয় নাকি! তার চেয়ে কাঁধে কাঁধ ছুঁইয়ে সিনেমা দেখাই ভাল মনে করেন প্রেমিকরা। গ্রীষ্মের ছোঁয়া বাঁচিয়ে প্রিয় জনের ছোঁয়াটুকু থেকে যায় সঙ্গে।
আচ্ছা যদি বেরতেই হয় পথে! অসুবিধা নেই। এই দিনেও শহরে এসি বাসের তো অভাব নেই। এক প্রান্তিক স্টপেজ থেকে পাশাপাশি দু’টি আসন নিয়ে বসে পড়লেই হয়। না হয় ফিরতি বাসেই চলে আসা যাবে। ছায়ামাখা কোনও অল্প চেনা বা অচেনা বাসস্টপের চায়ের দোকানই না হয় অন্য রকম আমেজ এনে দিক যাওয়া-আসার ফাঁকে।
গঙ্গার তীর স্নিগ্ধ সমীর, জীবন জুড়ালে তুমি। কবি এমন কথা মনে হয় এই শহরের প্রেমিকদের জন্যই রেখে গিয়েছেন। উত্তর থেকে মধ্য কলকাতা, শহরের পশ্চিম পাড় জুড়ে শীতল বাতাস নিয়ে অপেক্ষায় কতই ছায়াসুনিবিড়ি শান্তির ঘাট।
উত্তর কলকাতার রোম্যান্টিক জায়গাগুলোর মধ্যে বাগবাজার ঘাট প্রেমিক-প্রেমিকাদের অত্যন্ত পছন্দের জায়গা। এখানে গঙ্গার ঘাটে বসে নৌকা আর লঞ্চের আনাগোনা দেখেই সময় কাটিয়ে দেওয়া যায়। সঙ্গে কাগজের প্লেটে ঘটিগরম কিংবা কাঠি আইসক্রিম।
বাবুঘাট মানে তো অনেক মজা। এ দিকে হাওড়া ব্রিজ তো ও দিকে দ্বিতীয় হুগলি সেতু। সূর্যাস্ত। শীতল বাতাস। আরও কত কী!
কাছেই প্রিন্সেপ ঘাট। জলের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে সময় কেটে যায়, কেটেই যায়। ঢেউয়ের দোলায় এগিয়ে যাওয়া নৌকো। বাদাম ভাজা।
দিন দিন বড্ড ঘিঞ্জি হয়ে যাচ্ছে শহরটা। বড় বড় হাইরাইজে কোথায় যেন হারিয়ে যাচ্ছে সকালের সূর্যটা। এ সব বলে যাঁরা কপাল কুঁচকোন তাঁরা বরং লঞ্চে চেপে চলে যান হাওড়ায়। সন্ধের লঞ্চ সফর সত্যিই মনোরম।
বিকেলের দিকে কফির কাপে তুফান দেখতে চলে যাওয়াই যায় কফি হাউসে। কলেজ স্ট্রিট কফি হাউসের পুরনো বাড়িটায় হওয়া কথাবার্তায় উত্তাপ থাকলেও ভিতরটা বেশ ঠান্ডা। পুরনো দিনের বাড়িতে ফ্যানের হাওয়ায় বসে চলতে থাকুক আড্ডা। মাঝে মাঝে আসুক কোল্ড কফির গ্লাস।
কফি হাউসে বড্ড ভিড় দেখলে কাছেই তো রয়েছে প্যারামাউন্ট। কলকাতার শরবত ঐতিহ্যের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক দীর্ঘ দিনের। ডাবের শরবত আর প্রিয়জনের সঙ্গে খুনসুটি ভুলিয়ে দেবে চল্লিশ ছোঁয়া কলকাতার কথা।
আচ্ছা, কোনও প্রেমিক-প্রেমিকা যদি অনেকটা সময়ের জন্য কোনও শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত শপিং মলে ঢুকে পড়েন। না হয়, শুধুই উইন্ডো শপিং চলুক দিনভর। কে আর জানতে গিয়েছে যে, এঁদের আদৌ কেনাকাটায় কোনও মন নেই। যতটা রয়েছে মন দেওয়া নেওয়ায়।
রোদ একটু ঝিমিয়ে গেলে প্রেমের চিরকালীন ঠিকানা ভিক্টোরিয়াও তো অপেক্ষাতেই থাকে। গাছপালার মাঝে থাকা তো আছেই চাইলে জলাশয়ের পাশে বেছানো ঘাসের কার্পেটে বসে পড়াও যায়। পিঠে পিঠ ছুঁইয়ে।
ভিক্টোরিয়াতে মন না বসলে আছে কলকাতার ফুসফুস ময়দান। তবে সন্ধ্যার আগে গেলে ছায়া খুঁজে পাওয়া ভার। খাবার-দাবারের অভাব নেই। তেমনই হাত ধরে হেঁটে চলায় নেই কোনও বাধা।
ঠিক এমনই এক জায়গা ঢাকুরিয়া লেক। জলের ধারে মিষ্টি হাওয়া তো কলকাতার যুগলদের অপেক্ষাতেই থাকে।
সন্ধ্যা নামলে আরও আছে নন্দন। আছে রবীন্দ্র সদনের সিঁড়ি, আছে অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টস চত্বর। ভিড় একটু হতেই পারে তবে তার মধ্যেও হারিয়ে যেতে কোনও মানা নেই।