দার্জিলিং শহরের চৌরাস্তার কাছেই ম্যালে যাওয়ার পথে ‘গ্লেনারিজ’ শুধু রেস্তরাঁ হিসেবেই নয়, পর্যটকদের কাছে অন্যতম দর্শনীয়। ব্রিটিশ আমলের এই দোতলা কেকশপ শৈলশহরের অন্যতম ঐতিহ্য বলে মনে করা হয়। এটি চালায় এডওয়ার্ডস পরিবার। আর সেই পরিবারের কর্তাই হামরো পার্টির কর্তা।
নিজে হেরে গেলেও দলের জয়জয়কার। ফেসবুক
২০২১ সালের অগস্ট। জিএনএলএফ ত্যাগ। ২০২১ সালের নভেম্বর। নিজের নতুন দল ‘হামরো পার্টি’র ঘোষণা। ২০২২ সালের মার্চ। হামরো পার্টির দখলে দার্জিলিং পুরসভা।
হামরো প্রধান অজয় এডওয়ার্ডসের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক উত্থানের কাহিনিটা এই রকম। মাত্র ছ’মাসের ব্যবধানে সুবাস ঘিসিংয়ের দলের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ থেকে নতুন দল গঠন করেই ৩২টি ওয়ার্ডের সবকটিতে লড়ে ১৮টিতে জয় এবং পাহাড়ের ক্ষমতাদখল। যা দেখে পাহাড়ের মানুষ বলতে শুরু করেছেন, ‘‘নতুন শক্তির উদয় হল পাহাড়ি মাটিতে। সেই শক্তির নাম হামরো। জয়ের কাণ্ডারি অজয়।’’
তবে সেই জয়ের দুগ্ধে একফোঁটা চোনাও পড়েছে। কারণ, অজয় নিজে হেরে গিয়েছেন ২২ নম্বর ওয়ার্ড থেকে। দলকে ক্ষমতায় এনে নিজে হেরেছেন, এই দৃষ্টান্ত অবশ্য আগেও রয়েছে। কিন্তু যে ‘চমকপ্রদ’ উত্থানের কাহিনি অজয় রচনা করেছেন, তাতে তাঁর হেরে যাওয়াটাও ‘চমক’!
গত অগস্টে অজয় যখন জিএনএলএফ ছাড়েন, তখনই ধাক্কা খেয়েছিল ঘিসিংয়ের দল। দার্জিলিং মহকুমার সভাপতি অজয় সূবাস ঘিসিংয়ের হাত ছাড়ার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই শৈলশহরের সংগঠন ভেঙে পড়ে জিএনএলএফ-এর। দার্জিলিংয়ের সভাপতি রবার্ট ছেত্রি-সহ ৩২ জন অজয়ের অনুগামী হন। জানা যায়, অজয়ের সঙ্গে মূলত মতানৈক্য হয়েছিল জিএনএলএফ-এর মন ঘিসিংয়ের।
মনের নির্দেশেই গত বছরের সেপ্টেম্বরে দিল্লি গিয়েছিলেন অজয়। বলা হয়েছিল, পাহাড়ের স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে সহমর্মী বিভিন্ন দল ও কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ তৈরি করতে হবে। সেই সময়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর সঙ্গেও দেখা করেন তিনি। সেই সফর থেকে ফিরেই মনের সঙ্গে অজয়ের বিবাদ শুরু হয়। সেই বিবাদের জেরে যে পুরভোটে এত বড় খেসারত দিতে হবে তা জিএনএলএফ তো নয়ই, আঁচ করতে পারেনি পাহাড়ের রাজনৈতিক মহলও।
দার্জিলিং শহরের চৌরাস্তার কাছেই ম্যালে যাওয়ার পথে ‘গ্লেনারিজ’ শুধু রেস্তরাঁ হিসেবেই নয়, পর্যটকদের কাছে অন্যতম দর্শনীয়ও বটে। ব্রিটিশ আমলের এই দোতলা কেকশপ শৈলশহরের অন্যতম প্রাচীন ঐতিহ্য বলে মনে করা হয়। এটি চালায় এডওয়ার্ডস পরিবার। সেই পরিবারের কর্তাই হামরো পার্টির কর্তা। গত সেপ্টেম্বরে দিল্লি থেকে ফিরেই নতুন দল তৈরির কথা শোনা গিয়েছিল অজয়ের মুখে।
কিন্তু পৃথক গোর্খাল্যান্ড নিয়ে কী দাবি হামরো পার্টির? নতুন দল ঘোষণার সময়েই অজয় জানিয়েছিলেন, গোর্খাল্যান্ডের দাবি তো থাকবেই। কিন্তু সবচেয়ে আগে নজর দিতে হবে পাহাড়ের উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক বিকাশের দিকে। সেই লক্ষ্যেই কাজ করবে তাঁর দল।