বিয়ের কিছু দিন আগে আশীর্বাদ বা বাগদান পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। চোখধাঁধানো আয়োজন, অনেকটা হুল্লোড়, আংটি বদল আর নাচ গানের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক ভাবে জীবনের নতুন অধ্যায়ে প্রবেশের প্রথম ধাপ। সম্প্রতি বিভিন্ন থিম উঠে আসছে এই অনুষ্ঠান ঘিরে।
কোথাও ছিমছাম আয়োজন, তো কোথাও রাজকীয় থিম, কোথাও আবার বলিউডের থিম নজর কাড়ছে সবার। বিয়ের মরসুমে আসুন দেখে নেওয়া যাক, আংটি বদল অনুষ্ঠানের সম্ভাব্য সেরা থিমগুলি, যা তাক লাগিয়ে দেবে সমস্ত অতিথিদের।
এক টুকরো গ্রাম: বাগদানের অনুষ্ঠান জুড়ে রাখতে পারেন গ্রামবাংলার মিঠে ছোঁয়া। বাঁশ বা বেতের তৈরি চেয়ার, মোড়া, এমনকি খাটিয়াও রাখতে পারেন আসবাব হিসাবে। থিমকে আরও ভাল ভাবে ফুটিয়ে তুলতে কৃত্রিম ছোট মাটির কুঁড়েঘর বা খড়ের গাদা রাখা যেতে পারে।
বিভিন্ন মাটির পাত্র, মাদুর, কাঠের তৈরি ঝঙ্কার, লন্ঠন থাকুক সজ্জার অঙ্গ হিসাবে। শুধুমাত্র জায়গা নয় থিমের প্রভাব থাক বর কনের সাজেও। এই প্রেক্ষাপটে সাজতে হলে কনে পরুন লেহঙ্গা চোলি অথবা পাটিয়ালা সালোয়ার। সঙ্গে থাকুক কোলাপুরি জুতো।
এর পর মানানসই অক্সিডাইজড গয়না বা টেরাকোটা গয়না পরলেই সাজ সম্পূর্ণ। অন্য দিকে, ধুতি ও কুর্তা তোলা থাক বরের জন্য। অথবা কুর্তা-পাজামাও পরা যেতে পারে, শুধু সঙ্গে থাকুক কারুকাজ করা জ্যাকেট ও মানানসই জুতো।
কিশোরী বেলায় বহু মেয়ে স্বপ্ন দেখে রূপকথার গল্পের মতো বিয়ের। বাস্তবের মাটিতে তেমনটা না হলেও বাগদান পর্ব কিন্তু রূপকথার মতো করা যেতেই পারে। আর তা সম্ভব করে তুলতেই রাখতে হবে ফুলের দোলনা, জাঁকজমকে মোড়া ঝাড়বাতি, ফুলের পাপড়ির রঙ্গোলি, বিভিন্ন নকশা করা আয়না, সুন্দর আলো।
সঙ্গে থাক ছোট্ট জলাশয়, যাতে খেলে বেড়াবে একাধিক রাজহাঁস। ব্যস স্বপ্নের রূপকথার রাজ্য তৈরি। কনের পরনে থাকুক গোলাপি বা অন্য প্যাস্টেল রঙের গাউন, ফুলের টায়রা, হিরে বা পাথরের গয়না, রুপোলি জুতো। কালো স্যুট অথবা টাক্সিডো হোক বরের পোশাক। সঙ্গে মানানসই জুতো।
পাখিদের কলরব আর সবুজের সতেজতা থাক চারপাশে। প্রকৃতির কোলে মনের মানুষের সঙ্গে আংটি বদল করতে হলে বাগদান অনুষ্ঠান হোক বাগান বা জঙ্গলের ধাঁচে। ফুলের রঙ্গোলি, বিভিন্ন ধরনের ছত্রাক, পাতা-গুল্ম, অর্কিড, কৃত্রিম জলপ্রপাত, কাঠের চেয়ার বা বেঞ্চ নিয়ে আসবে এই থিম।
টেবিল হিসাবে থাকুক গাছের গুঁড়ি। বনফায়ার ও গাছ থেকে ঝোলানো লণ্ঠন এই থিমকে আরও পরিপূর্ণ করে তুলবে। অলিভ বা বটল গ্রিন রঙের লেহঙ্গা ও বেইজ বা চকোলেট রঙের জুতো থাকুক কনের সাজে। সঙ্গে কৃত্রিম দেহাতি গয়নার ছোঁয়া। অন্য দিকে, ইন্দো-ওয়েস্টার্ন সাজে সেজে উঠুক বর। সবুজ কুর্তার সঙ্গে পায়জামা অথবা গাঢ় রঙের ট্রাউজারের সঙ্গে সাদা শার্ট।
ইদানিং বাগদানে সব থেকে জনপ্রিয় থিম বলিউড। এই থিমের জন্য প্রিয় ছবিগুলির পোস্টার বা ছবির প্রিয় সিনের ছবি কিংবা নায়ক নায়িকার ছবি থাকুক অনুষ্ঠানস্থল জুড়ে। আবহে চলুক বলিউডের বিখ্যাত গান।
বিভিন্ন তারকাদের কাটআউট, জনপ্রিয় ছবির কৃত্রিম সেট। অবশ্যই সঙ্গে থাকুক দোলনা ও পিয়ানো-সহ অন্যান্য বিখ্যাত বলিউডি প্রপস। এক্ষেত্রে বর ও কনে তাঁদের প্রিয় কোনও ছবির চরিত্রদের মতো সাজতে পারেন। দেবদাস ও পারো, অথবা রাজ-সিমরন হয়েই না হয় আপনার আংটি বদল হোক!
আশীর্বাদের অনুষ্ঠানে থাকুক রাজবাড়ির পরিবেশ। জাঁকজমকপূর্ণ বড় ঝাড়বাতি, ফুলের নকশা করা পর্দা ও গালিচা, সিল্কের পর্দাযুক্ত রাজকীয় আয়না থাক অনুষ্ঠান সজ্জায়। এ ছাড়াও বড় পেতলের পাত্রে ভাসমান মোমবাতি এবং করিডোর জুড়ে ছড়িয়ে থাকুক ফুলের পাপড়ি। আর আকাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফানুস।
ভারী কাজের লেহঙ্গা বা শারারা, কিংবা সিল্কের শাড়ি থাকুক কনের পরনে। সোনার গয়না অথবা কুন্দন গয়না পরতে পারেন। একেবারে রানির মতো সাজ! আর বরের ক্ষেত্রে বন্ধগলা শেরওয়ানি বা ধুতি-কুর্তা ও মুক্তোর গয়না থাকতে পারে সাজ পোশাকে।
সম্প্রতি অনেক যুগল ‘গো গ্রিন’ থিমে পরিবেশ সচেতনতার বিষয়টি মাথায় রেখে বাগদান পর্ব সারছেন। মাটির তৈরি লন্ঠন, কাগজের ফুল, ডালপালা ও ছত্রাক, ওড়না ও বিভিন্ন ধরনের চুড়ির সজ্জা, আঁকা রঙ্গোলি দিয়ে সুন্দর ভাবে সাজানো হয় অনুষ্ঠানের জায়গা। এবং এটি হয়ে ওঠে ‘নো প্লাস্টিক’ বাগদান অনুষ্ঠান।
সুতোর কাজ করা লেহঙ্গা বা খাদি সিল্ক বা হ্যান্ডলুম শাড়ি, প্রিন্টেড টপ-স্কার্ট পরতে পারেন কনে। সঙ্গে থাকুক টেরাকোটা অথবা অক্সিডাইজড গয়না। বরের পরনে থাকুক খাদি কুর্তা-পায়জামা ও জ্যাকেট। সঙ্গে থাক বাদামি রঙের জুতো।