দার্জিলিং থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে এক সুন্দর জায়গা মিম চা-বাগান। —প্রতীকী ছবি।
দার্জিলিঙের কোলাহল, ভিড়ে ঠাসা রাস্তা পার করে, লেপচাজগৎ ছাড়িয়ে আরও এগিয়ে গেলে, প্রকৃতির এক অদ্ভুত রূপ। নির্জন পাহাড়ি বাঁকে কখনও শ্বেতশুভ্র কাঞ্চনজঙ্ঘার হাতছানি। আবার কখনও পাহাড়ের সঙ্গে মেঘের খুনসুটি। মেঘ-কুয়াশার পর্দা ছিঁড়ে একফালি রোদ মাথাচাড়া দিলেই বদলে যায় দৃশ্যপট। কোন খুশিতে কে জানে, ডেকে ওঠে পাখির দল।
কাঞ্চনজঙ্ঘা, চা-বাগান, অরণ্য, খরস্রোতা নদী— এই সমস্ত কিছু নিয়েই মিম চা-বাগান। উত্তরবঙ্গের এই চা-বাগান ঘিরেই তৈরি হয়েছে পর্যটন কেন্দ্র। জনকোলাহল বর্জিত এ স্থান দার্জিলিং থেকে মাত্র ২০ কিলোমিটার দূরে। লেপচাজগৎ ও সুখিয়াপোখরির মধ্যেই মিম বস্তি। সেই বস্তির পাশেই চা-বাগান, যেখানে এখন খানিক নির্জনতার খোঁজে আসছেন পর্যটকেরা।
উত্তরবঙ্গে এসে ভ্রমণপিপাসু মানুষ ঠিক যা যা খোঁজেন, তার সবটাই রেয়েছে এখানে। চা-বাগান, পাহাড়ি ঝোরা, নদী, তার উপর কাঞ্চনজঙ্ঘার সৌন্দর্য। তবে কাঞ্চনজঙ্ঘার রূপ উপভোগের আদর্শ সময় অক্টোবরের শেষ থেকে নভেম্বর বা ডিসেম্বর। তখন নীল আকাশে ভেসে বেড়ায় সাদা পেঁজা মেঘের দল। মেঘ-কুয়াশার চাদর সরে গিয়ে দেখা দেয় কাঞ্চনজঙ্ঘা। তবে, তার দর্শন পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। প্রকৃতি সদয় না হলে হয় না।
মিম চা-বাগান, উত্তরবঙ্গের স্বল্প চেনা ঠিকানা। সংগৃহীত ছবি।
তবে যদি সূর্যদেব প্রসন্ন না-ও হন, তা-ও মিম হতাশ করবে না একেবারেই। বর্ষার কালচে মেঘের সঙ্গে ঘন সবুজ চা-বাগানের রঙের বৈচিত্র দেখলে মনে হবে, এ যেন কোনও শিল্পীর ক্যানভাস। চা-বাগানের বুক চিরে চলে গিয়েছে পিচের রাস্তা।
কাছেই রয়েছে মিম বস্তি। উত্তরবঙ্গের যে কোনও পাহাড়ি গ্রামের মতোই এখানেও জীবনযাত্রা বড় সাদামাঠা। চাকচিক্য নেই। হয়তো অভাব আছে। তবু গ্রামবাসীদের মুখে অনাবিল হাসি। শিশুদের সরল মুখে তাকিয়ে ভুলে যাওয়া যায় শহুরে জীবনের ক্লান্তি।
মিমের সৌন্দর্য উপভোগের জন্য সময় দরকার। ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাঠের হোমস্টে-র বারান্দায় বসে পাহাড়ের রূপ বদলের সাক্ষী হওয়ার জন্য উপযুক্ত মন দরকার। এই স্থান নিভৃতে কয়েকটা দিন কাটানোর।
গ্রামের উপরে রয়েছে বৌদ্ধমঠ। পায়ে-কোমরে জোর থাকলে প্রকৃতি উপভোগ করতে করতে সেই পথে হাঁটা শুরু করতে পারেন। ঘণ্টাখানেক হাঁটলে পৌঁছে যাবেন। হরেক রঙিন পতাকা উড়ছে সেখানে। তার মাঝে শান্ত বৌদ্ধমঠ। আর চা-বাগানের পথে হেঁটে নীচে নামলে পেয়ে যাবেন আপন মনে বয়ে চলা পাগলপারা নদী। বাঁশের সাঁকো পেরিয়ে চলে যেতে পারেন নদীর অন্য পারে। তবে হাঁটতে না চাইলে গাড়ির ব্যবস্থাও আছে। আধ ঘণ্টার সফরে পৌঁছনো যায় পাহাড়ি নদীটির পারে। এর এক পাশে চা-বাগান, অন্য পাশে জঙ্গল। আশপাশে কোনও জনবসতি নেই।
লেপচাজগতের কাছেই মিম বস্তি। সেখানেই চা-বাগান। ছবি: সংগৃহীত।
খরস্রোতা নদীর বয়ে চলা দেখতে দেখতে আর পাখির গান শুনতে শুনতে কখন যে সময় পেরিয়ে যাবে, বোঝাও যাবে না। এখান থেকে ঘুরে নিতে পারেন কাছের চা-কারখানা। দেখে নিতে পারেন পাতা থেকে কী ভাবে চা হয়। তবে বর্ষায় মিম চা-বাগানে গেলে সাবধানি হতে হবে। জোঁকের উপদ্রব বাড়ে, এবড়োখেবড়ো রাস্তায় অসাবধান হলে পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে।
সাবধান হতে হবে চা-বাগানেও। ঝোপঝাড়ে চিতাবাঘ লুকিয়ে থাকে অনেক সময়। সন্তানপ্রসবের সময় তারা চা-বাগানে কোনও ঝোরা বা নালার পাশে আশ্রয় নেয়।
কোথায় থাকবেন- মিম চা বাগানে রয়েছে হোমস্টে। আকাশ পরিষ্কার থাকলে, হোম স্টের ঘর থেকে দিব্যি কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায়।
কী ভাবে যাবেন: নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে মিম চা-বাগানের দূরত্ব প্রায় ৮৫ কিলোমিটার। গাড়ি ভাড়া করে আসতে পারেন। আবার এনজেপি থেকে ঘুম, ঘুম থেকে সুখিয়াপোখরি শেয়ার গাড়িতে আসা যায়। দার্জিলিং ঘুরে, সেখান থেকে গাড়ি নিয়েও মিম চলে আসতে পারেন।