Ganga Sagar Travel

তিথি-নক্ষত্র মেনে স্নানের বাসনা বাদ দিলে দু’দিনের ছুটিতেও ঘুরে আসা যায় গঙ্গাসাগর

সাগরস্নানের পুণ্য তিথি বাদ দিলে, দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাকদ্বীপ মহকুমার সাগরদ্বীপ কিন্তু নিছক বেড়ানোর জন্যও নেহাত মন্দ নয়।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০২৫ ০৯:০১
Share:

গঙ্গাসাগরে শুধু স্নানের জন্য নয়, ঘুরে আসার জন্যও যাওয়া যায়। কী ভাবে সেখানে বেড়ানোর পরিকল্পনা করবেন? ছবি: সংগৃহীত।

গঙ্গাসাগর বললেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে কাদা-জলের সাগরে অসংখ্য মানুষের স্নানের ছবি। প্রবল ঠান্ডা, ভিড় উপেক্ষা করেও মকর সংক্রান্তির পুণ্যলগ্নে এক বার সাগরের জল মাথায় ছোঁয়ানোর তীব্র বাসনা। ছাই-ভস্ম মাখা সাধু-সন্ন্যাসীর ভিড়। তবে সাগরস্নানের পুণ্য তিথি বাদ দিলে, দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাকদ্বীপ মহকুমার সাগর দ্বীপ কিন্তু নিছক বেড়ানোর জন্য নেহাত মন্দ নয়।

Advertisement

গোমুখ থেকে যার উৎপত্তি, সেই গঙ্গাই এখানে ভাগীরথী হয়ে মিশেছে বঙ্গোপসাগরে। পূর্ব-পশ্চিম দু’দিকে দিগন্তবিস্তৃত জলরাশি। ঢেউ নেই বললেই চলে। সামনেই কপিল মুনির আশ্রম। মকর সংক্রান্তির সময় যে সাগরদ্বীপ ভরে থাকে অসংখ্য পুণ্যার্থীতে, সেই দ্বীপই বছরের অন্যান্য সময় নিরালা।

ডিসেম্বর, জানুয়ারি কিংবা ফেব্রুয়ারির সপ্তাহান্তের ছুটিতে দিব্যি বেড়িয়ে পড়া যায় সাগরদ্বীপের উদ্দেশে। কলকাতা থেকে যাওয়াও এখন সহজ। আউট্রাম ঘাট থেকে ছাড়ে বড়সড় ক্রুজ়। পাঁচ-সাড়ে পাঁচ ঘণ্টায় সোজা পৌঁছে দেয় কচুবেড়িয়া জেটিঘাটে। সাগরে আসতে হলে কচুবেড়িয়াই ভরসা। তবে কলকাতা থেকে সরাসরি ক্রুজ়ে আসতে না চাইলে নামখানা বা কাকদ্বীপ হয়েও আসা যায়।

Advertisement

গঙ্গাসাগর এবং পুণ্যস্নান ঘিরে প্রচলিত রয়েছে সগর রাজার কাহিনি। কথিত আছে, সূর্য বংশের রাজা সগর নিরানব্বই বার অশ্বমেধ যজ্ঞ সফল ভাবে আয়োজন করার পর শততম অশ্বমেধ যজ্ঞের আয়োজন করলে দেবরাজ ইন্দ্র বিচলিত হয়ে পড়েন। কারণ একশত বার অশ্বমেধ যজ্ঞ সফল হলে তিনি শক্তিশালী উঠতে পারেন। তাই দেবরাজ যজ্ঞের ঘোড়াটি চুরি করে নিয়ে পাতালে কপিল মুনির আশ্রমে লুকিয়ে রাখেন। এর পর সগর রাজার নির্দেশে তাঁর ৬০ হাজার পুত্র অশ্বমেধ যজ্ঞের ঘোড়া অন্বেষণে গিয়ে কপিল মুনির আশ্রমে ঘোড়াটি দেখতে পান ও মুনির তপোভঙ্গ করেন। তাঁদের আচরণে মহর্ষির তপস্যায় ব্যাঘাত ঘটে। তাঁর রোষানলে সগর রাজার পুত্রেরা ভস্ম হয়ে যান। এই ঘটনার বেশ কিছু বছর পর সূর্য বংশের পরবর্তী বংশধর ভগীরথ ব্রহ্মাকে তপস্যায় তুষ্ট করে গঙ্গাকে মর্ত্যে আহ্বান করেন। গঙ্গার পবিত্র জলস্পর্শে সগর রাজার পুত্রদের আত্মা মুক্তি লাভ করে।

আলোকোজ্জ্বল কপিল মুনির আশ্রম। ছবি: সংগৃহীত।

পুণ্যার্থীদের বিশ্বাস, সাগর স্নানে মোক্ষলাভ হয়। তিথি মেনে আসতে গেলে বেড়ানো মুশকিল। তাই গঙ্গাসাগর মেলা বাদ দিয়েই আসতে পারেন। এখন ভোলবদল হয়েছে দ্বীপটির। মেঠো রাস্তায় পিচের প্রলেপ পড়েছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের যুব আবাস থেকে শুরু করে আধুনিক সুবিধাযুক্ত একাধিক হোটেল রয়েছে সেখানে। আছে ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের থাকার জায়গাও।

কোনও এক সকালে কলকাতা থেকে যাত্রা শুরু করলে সাড়ে পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টায় পৌঁছনো যাবে সাগরদ্বীপে। দুপুরে খানিক বিশ্রাম করে টোটো নিয়ে বেরিয়ে পড়তে পারেন আশপাশ ঘুরে দেখতে। গঙ্গাসাগরে আসার যাত্রাপথটি বেশ সুন্দর। জলপথে ভেসেল বা ক্রুজ় যাত্রাটি হতে পারে গঙ্গাসাগর ভ্রমণের অন্যতম আকর্ষণ।

গঙ্গাসাগরে এলে অবশ্যই যেতে পারেন কপিল মুনির আশ্রমে। ছোট তিন চূড়া বিশিষ্ট মন্দিরের ভিতরে রয়েছে কপিল মুনি, সগর রাজা এবং দেবী গঙ্গার মূর্তি। পুজো দেওয়ার ব্যবস্থাও রয়েছে। কপিল মুনির মন্দিরের পাশেই মা গঙ্গা পার্ক। সন্ধ্যায় আলো জ্বলে উঠলে সাজানো পার্কটিতে বসে সময় কাটাতে পারেন।

এ ছাড়া ঘুরে নেওয়া যায় মোহনা, লাউট হাউস, মনসা মন্দির, রামকৃষ্ণ মিশন। ৩০০-৪০০ টাকায় টোটো ভাড়া করে দু’ঘণ্টাতেই জায়গাগুলি ভ্রমণ করতে পারেন। লাইট হাউস অবশ্য দূর থেকে দেখেই তুষ্ট থাকতে হবে। তবে বিকেলের দিকে মোহনা পৌঁছলে অনেকটা সময় এখানে কাটাতে পারেন। একটি খাঁড়ি সাগরে এসে মিশেছে। চলে গিয়েছে বাঁধের মতো রাস্তা। রামকৃষ্ণ মিশনেও সন্ধ্যাবেলার আরতি দেখতে যেতে পারেন। নিরিবিলি পরিবেশ মন ছুঁয়ে যাবে।

যে দিন পৌঁছবেন, চাইলে সেই দিন দুপুরের পরেই এই জায়গাগুলি ঘুরে নেওয়া যায়। চাইলে পরদিন সকালে সাগর স্নান সেরে কপিল মুনির আশ্রমে পুজো দিতে পারেন।

কোথায় থাকবেন?

হোটেল, আশ্রম, অতিথি আবাস, পশ্চিমবঙ্গ যুব আবাস রয়েছে থাকার জন্য। গত কয়েক বছরে একাধিক নতুন থাকার জায়গা তৈরি হয়েছে পর্যটনের প্রসারে। ৮০০টাকা থেকে ২০০০ টাকায় থাকার ব্যবস্থা হয়ে যাবে।

কী ভাবে যাবেন?

শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখা থেকে ট্রেন ধরে কাকদ্বীপ স্টেশন। সেখান থেকে টোটো অটো ধরে ফেরিঘাট। এখানে একাধিক ফেরিঘাট রয়েছে। সেখান থেকে ভেসেল যাবে কচুবেড়িয়া ঘাটে। গঙ্গাসাগর অ্যাপ থেকে ভেসেলের সময়সূচি জেনে নিতে পারেন। এতে যেতে সুবিধা হবে। কচুবেড়িয়া ঘাট থেকে ৩২ কিমি দূরে গঙ্গাসাগর। শীতের মরসুমে কলকাতার আউটট্রাম ঘাট থেকে ক্রুজ মিলবে। সেটি সরাসরি পৌঁছে দেবে কচুবেড়িয়া ঘাটে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement