বেজায় গরম। তবুও বিধিনিষেধের জ্বালায় এখন অনেক জায়গায় যাওয়া যাচ্ছে না। কিছু টুরিস্ট স্পটে যাওয়া আবার অনুমতিসাপেক্ষ। তবে সমুদ্রের ধারে, নিরিবিলি জঙ্গলে বা শহর উপান্তের কয়েকটি বিনোদন রিসর্টে যাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু অতিমারির রাজত্বে জানা দরকার বেড়াতে গেলে কী ভাবে নিরাপদে থাকবেন।
প্ল্যানিং ও প্যাকিং
• বেড়ানোর আগে করোনার পরীক্ষা করিয়ে নিতে পারেন। আধার কার্ডের পাশাপাশি অনেক হোটেলই এই পরীক্ষার রিপোর্ট দেখে বুকিং দিচ্ছে।
• কোনও কোনও হোটেল বা টুর কোম্পানি বয়স্ক এবং শিশুদের সঙ্গে আনতে নিষেধ করছে। যেখানে যাচ্ছেন, সেখানে এমন কোনও নিয়ম মানা হচ্ছে কি না জেনে নিন।
• হোটেলের লন্ড্রি ব্যবস্থা কেমন খোঁজ নিন। সাইট সিয়িং-এ গেলে ফিরে এসে নিজে জামাকাপড় কাচার ঝক্কি থাকবে না। জেনে নিন অতিথি চেকআউট করার পর তারা কি আগের মতো বিছানার চাদর, বালিশের কভার, পর্দা, কুশন বদল দিচ্ছে? না কি, অতিথিকে নিজের বেডলিনেন, তোয়ালে ইত্যাদি আনতে বলছে?
• প্রয়োজনীয় ওষুধ, অতিরিক্ত মাস্ক, গ্লাভস, ডিসপোজ়েবল ওয়াইপস, হেড কভার, সাবান এবং পর্যাপ্ত স্যানিটাইজ়ার নিয়ে যাবেন। যতটা সম্ভব ডিজিটালি পেমেন্ট করুন।
যা করা চাই
• যে সব জায়গায় বেশি হাত দেওয়া হয়, হোটেলের ঘরে ঢুকেই সেগুলো নিজেরাই স্যানিটাইজ় করে নিন। যেমন দরজা বা আলমারির হাতল, ড্রয়ার, টিভি রিমোট ইত্যাদি।
• হোটেলের ঘর থেকে বেরোলেই মাস্ক এবং হেয়ারকভার পরে নিন। সানগ্লাস পরুন। বাইরে থেকে ফিরে এসে স্নান, জামা কাপড় ধোয়া মাস্ট।
• নিজের গাড়িতে যাতায়াত করুন। নিজেরাই ড্রাইভ করলে ভাল। স্থানীয় যানবাহন ব্যবহার করলে বা সাফারির জন্য লঞ্চ বা জিপে চাপতে হলে, বসার জায়গাটা ডিসইনফেক্ট করে নিন।
• দ্রষ্টব্য স্থানে পর্যটকরা কোন এলাকা পর্যন্ত আসতে পারবেন, তা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। খুব কম সংখ্যায় মানুষকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে। তা ছাড়া বেড়াতে গিয়েও যাতে সকলে সামাজিক দূরত্বের কথা মনে রাখেন, সেই কারণে মাটিতে চক দিয়ে বৃত্ত এঁকে দেওয়া হয়েছে। সেই ‘লক্ষ্মণরেখা’-র মধ্যেই থাকুন।
• জেনারেল ফিজ়িশিয়ান ডা. সুবীর কুমার মণ্ডল বলছেন, ‘‘খাবার থেকে রোগ ছড়াচ্ছে, এখনও পর্যন্ত এমন প্রমাণ নেই। তবে খাবার হোটেলের ঘরে এনে খান। খাবারের প্যাকেট বা জলের বোতল খোলার আগে, সাবান দিয়ে হাতে-মুখ ধুয়ে নিন।’’
• সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করুন। লিফট, এসকালেটরে কম চড়াই ভাল।
• সৈকতগুলিও এখন ফাঁকা। তাই সমুদ্রস্নানে কোনও সমস্যা নেই।
বাধা ও নিষেধ
• এলাকার বাসিন্দারা পর্যটকদের দেখলে আপত্তি করছেন কি না, খুঁটিয়ে জেনে নিন। সংবেদনশীল এলাকা, শহর থেকে অনেক দূরের গ্রাম বা জঙ্গলের জনজাতি অধ্যুষিত এলাকাকে বিরক্ত করা উচিত নয়।
• সারাক্ষণ এসি-তে থাকবেন না। জানালা খুলে রাখুন।
• স্পা রুম, সুইমিং পুল এড়িয়ে চলুন।
• অন্য মানুষের কাছাকাছি না যাওয়ার বিষয়টি খেয়াল রাখুন। বাইরে বেরোলে চোখে-মুখে-নাকে হাত নয়।
• খাবারের উপরে স্যানিটাইজ়ার ছড়াবেন না।
• শরীরে কোনও অস্বস্তি থাকলে, চিকিৎসককে না জানিয়ে বেড়াতে চলে যাবেন না। করোনায় আক্রান্ত না হলেও অন্য বিপত্তির ক্ষেত্রে চিকিৎসা পেতে ঝামেলা হতে পারে।
হোটেলে বদল
ট্রাভেল এজেন্টরা জানিয়েছেন, হাসপাতালগুলিতে যে দ্রবণ ব্যবহার করা হয়, এখন পুরো চত্বর পরিষ্কার রাখতে অনেক হোটেল তা ব্যবহার করছে। রোজ অতিথি ও কর্মীদের তাপমাত্রা মাপা হচ্ছে। ডাইনিং এরিয়ায় প্রতিটি টেবলের মধ্যে থাকছে ফাঁক। টেবলে রেখেছেন কলিং বেল। মেনু স্মার্টফোনের মাধ্যমে অর্ডার করা যাচ্ছে। অতিথি চেক ইন করলে সাবান, শ্যাম্পুর সঙ্গে মাস্ক, স্যানিটাইজ়ার দেওয়া হচ্ছে। প্রতিটি ফ্লোরে ওয়াশ বেসিন ও ডিসইনফেকটর স্প্রে বসানো হয়েছে। আউটডোর স্পোর্টসের অপশন অনেকে বন্ধ রেখেছেন।
পিঠের ব্যাগের সঙ্গে মনের কোণে সাবধানতা নিয়েই লং ড্রাইভ, ফোটো টুরে যাচ্ছেন অনেকে। আপনিই বা চার দেওয়ালে বদ্ধ থাকবেন কেন? কাল-পরশু কিন্তু ছুটি!