‘সোলো ট্রিপ’-এর জন্য পাঁচ জায়গা। ছবি: সংগৃহীত।
‘সোলো ট্রিপ’ বা একলা ভ্রমণ গত কয়েক বছরে ক্রমশই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। নিজের সঙ্গে সময় কাটাতে, বলা ভাল, নিজের সম্পূর্ণ স্বাধীনতায় কোনও জায়গা ভ্রমণে অনেকেই একলা ভ্রমণ বেশি পছন্দ করছেন। এই প্রবণতায় অবশ্য পুরুষদের পাশপাশি মহিলারাও পিছিয়ে নেই।
কিন্তু একলা ভ্রমণ করতে গেলে বেশ কিছু বিষয় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। যেখানে যাবেন, সেখানে থাকার জন্য ‘হস্টেল’-এর সুবিধা আছে কি না, হোটেলে একাকী রাত্রিবাসের ছাড়পত্র মেলে কি না, আর গণ পরিবহণের অবস্থা কতটা ভাল, সর্বোপরি জায়গাটি একলা ভ্রমণের জন্য কতটা নিরাপদ!
পাহাড়, সমুদ্র, ইতিহাস বিজড়িত পাঁচটি জায়গার সন্ধান রইল, যেখানে ঘুরে আসতে পারেন একলাই।
কালিম্পং, পশ্চিমবঙ্গ: পাহাড়, মেঘ, ফুল, ঝরনা, নদী যদি ভাল লাগা হয় তাহলে সোলো ট্রিপে ঘুরে নেওয়া যায় পশ্চিমবঙ্গের পাহাড়ি এই শৈল শহর থেকে। কালিম্পং জেলার আনাচ-কানাচে পাহাড়ের বুকে রয়েছে ছোট ছোট নিরিবিলি বহু গ্রাম, যেখানে গড়ে উঠেছে হোমস্টে। পাহাড়ি মানুষদের আতিথেয়তা আর গরম চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে মেঘমুক্ত আকাশে বারান্দায় বসে কাঞ্চনজঙ্ঘা দর্শনের অনুভূতিটাই আলাদা।
ঘুরে নেওয়া যায় কালিম্পং-এর কোনও পাহাড়ি গ্রাম। ছবি: সংগৃহীত।
কেন যাবেন, কী দেখবেন-প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হতে চাইলে ভিড় এড়িয়ে পাহাড়ি কোনও গ্রাম কাফেরগাঁও, রামধুরা, চারখোল, কোলাখাম এমন যে কোনও জায়গা ঘুরে নেওয়া যায়। এখান থেকে সাইট সিইং-এ ঘুরে নেওয়া যায় ছাঙ্গে ফল্স, বিভিন্ন মনাস্ট্রি, নক দাঁড়া ভিউ পয়েন্ট-সহ বহু জায়গা।
বেড়ানোর উপযুক্ত সময়- অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারির মধ্যে গেলে কাঞ্চনজঙ্ঘা দর্শনের সম্ভাবনা বেশি থাকে। এ ছাড়াও সারা বছর যাওয়া যায়।
হৃষীকেশ, উত্তরাখণ্ড- হিমালয় ও স্রোতস্বিনী গঙ্গার মন ভোলানো রূপ এখানে পাওয়া যায় একসঙ্গে। আধ্যাত্মিকতা থেকে অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস, সমস্ত ভাল লাগার রসদ নিয়ে অপেক্ষা করছে উত্তরাখণ্ডের শৈল শহর হৃষীকেশ। যদি পাহাড়ের বুকে যোগ শিক্ষা করতে চান অথবা চান পাহাড়ি রূপে হারিয়ে যেতে, তা হলে আসতেই পারেন এখানে। যদি শখ থাকে রিভার র্যাফটিং, বাঞ্জি জাম্পিং, জায়ান্ট সুইং-সহ আরও নানা ধরনের অ্যাডভেঞ্চারের, তা হলে চোখকান বুজে হৃষীকেশ হতে আপনার গন্তব্য। এখানে সুযোগ রয়েছে ক্যাম্পিং-এরও।
অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস পছন্দ হলে গন্তব্য হতেই পারে হৃষীকেশ। ছবি: সংগৃহীত।
কী কী করতে পারেন-যোগ শিক্ষা, অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস, ট্রেকিং। এ ছাড়াও ঘুরে নিতে পারেন লছমন ঝুলা, ত্রিবেনী ঘাট। সাক্ষী থাকতে পারেন গঙ্গা আরতির।
বেড়ানোর উপযুক্ত সময়-সেপ্টেম্বর থেকে মার্চ। হৃষীকেশ-এ ইদানীং বেশ গরম পড়ছে। গরম এড়িয়ে আবার বর্ষাতেও যাওয়া যেতে পারে।
উদয়পুর, রাজস্থান-পাহাড় ও হ্রদের সমাহারে রাজস্থানের উদয়পুর পর্যটকদের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে থাকে। এখানে রয়েছে পিছোলা হ্রদ। রাজস্থানের সংস্কৃতি, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, পিছোলা হ্রদের নৌকো ভ্রমণের আনন্দ নিতে ‘সোলো ট্রিপ’-এ ঘুরে নেওয়াই যায় উদয়পুর।
উদয়পুর, রাজস্থান। ছবি: সংগৃহীত।
কী দেখবেন-সিটি প্যালেস, পিছোলা হ্রদ, জগ মন্দির-সহ পুরনো ‘হাভেলি’ বা বাড়ি ঘুরে নিতে পারেন। রাজস্থানি নাচ, গানও উপভোগ করতে পারেন।
বেড়ানোর উপযুক্ত সময়-অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি আদর্শ সময়। এপ্রিল থেকে জুলাই বাদ দিয়ে সারা বছরই ঘুরে নেওয়া যায়।
ভারকালা, কেরল-সবুজ টিলা, হেলে পড়া নারকেল গাছ, আর নীচে নীল জলরাশি সাদা ফেনা তুলে আছড়ে পড়ছে। সমুদ্রের এমন রূপ দর্শনের ইচ্ছে হলে বেছে নিতে পারেন কেরলের ভারকালা সমুদ্রসৈকত। প্রকৃতির অনিন্দ্যসুন্দর রূপে কয়েকটা দিন একেবারে নিজের মতো কাটিয়ে দেওয়ার পাশপাশি অবশ্যই এখানকার আয়ুর্বেদিক ম্যাসাজের অভিজ্ঞতাও মনে থেকে যাবে।
কেরলের ভারকালা সমুদ্রসৈকত। ছবি: সংগৃহীত।
কেন আসবেন, কী দেখবেন-ভারকালার অনুপম সৌন্দর্য, এখানকার নিরিবিলি পরিচ্ছন্ন সমুদ্রসৈকতে নিজের মতো করে বিশ্রাম করার জন্যই এখানে আসতে পারেন।
বেড়ানোর উপযুক্ত সময়-নভেম্বর থেকে মার্চ।
ম্যাকলয়েডগঞ্জ, হিমাচল প্রদেশ-হিমালয়ের সৌন্দর্যের অমোঘ টান এড়াতে না পারলে ‘সোলো ট্রিপ’এ ঘুরে নেওয়াই যায় ম্যাকলয়েড গঞ্জ। হিমাচল প্রদেশ এমনিতেই একাকী ভ্রমণার্থীদের জন্য বিশেষ পছন্দের জায়গা। এখানে হস্টেলের সুবিধা রয়েছে। পর্যটকেরা এই রাজ্যকে বেশ নিরাপদ মনে করেন। ম্যাকলয়েড গঞ্জের রূপ, এখান থেকে ট্রেক করে বিভিন্ন জায়গায় যাওয়ার সুবিধা, তিব্বতি সংস্কৃতিকে চেনার টানে শান্ত এই শৈলশহরে বহু পর্যটকই আসেন।
হিমাচলের ম্যাকলয়েড গঞ্জ। ছবি: সংগৃহীত।
কী দেখবেন- পাহাড়ের অনুপম সৌন্দর্য তো রয়েছেই, দলাই লামা মন্দির, বৌদ্ধ মঠ, তিব্বতি খাবার এই সমস্ত কিছুর জন্য এখানে আসা যায়।
বেড়ানোর উপযুক্ত সময়-মার্চ থেকে জুন ও সেপ্টম্বর থেকে নভেম্বর।