সালমা মাঝি ও মনোজ সরকার। নিজস্ব চিত্র।
সাফ গেমসে সুযোগ পেলেন শিলিগুড়ির দুই খোখো খেলোয়াড়। আগামী ৬-১৬ ফেব্রুয়ারি অসমে অনুষ্ঠিত আসন্ন সাফ গেমসে জাতীয় খোখো দলের হয়ে খেলতে বাংলা থেকে মনোনীত চারজনের মধ্যে শিলিগুড়ি থেকেই রয়েছেন দু’জন। তাঁরা মনোজ সরকার ও সালমা মাঝি। নিম্নবিত্ত ঘর থেকে উঠে আসা দুই খেলোয়াড়কে ঘিরে এখন পদক জয়ের স্বপ্ন দেখছে শিলিগুড়ি-সহ গোটা বাংলা দলই।
এ বারই প্রথম সাফে খোখোর অন্তর্ভুক্তি ঘটেছে। আর প্রথমবারই নিজেদের প্রতিনিধি পাঠাতে পেরে খুশি শিলিগুড়ি মহকুমা খোখো অ্যাসোসিয়েশনও। অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ভাস্কর দত্ত মজুমদার জানান, দু’জনেই দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করে খেলা চালিয়ে যাচ্ছেন। সাফের মত আসরে খেলতে যাওয়া ওঁদের কাছে বিশাল অভিজ্ঞতা। পদক আসলে খুশিটা দ্বিগুণ হবে বলে জানান তিনি।
মেয়েদের শিবির মধ্যপ্রদেশের ভূপালে ও ছেলেদের শিবির গুজরাটের গাঁধীনগরে হবে বলে জানা গিয়েছে। ২৮ ডিসেম্বর নিজেদের শিবিরে যোগ দিতে শনিবার দু’জনেই রওনা হয়ে গিয়েছেন। শিলিগুড়ির দশরথপল্লির মনোজ শিলিগুড়ি কলেজের কলা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। তাঁর বাবা মোহরবাবু ছোট মুদির দোকান চালান। সংসার সাহায্য করতে পড়ার পাশে বেসরকারি সংস্থায় কাজ করে মনোজকে পড়ার সঙ্গে খেলার টাকাও জোগাড় করতে হয়। তাতে অবশ্য খেলায় সাফল্য পেতে অসুবিধা হয়নি। ২০১০ এ ছত্তিশগড়ে ও ২০১১ তে ইনদওরে জুনিয়র ন্যাশনাল এবং একই বছরে ঝাড়খণ্ডে ন্যাশনাল গেমসেও যোগ দেন। এরপরে ২০১১তে শিলিগুড়িতে, ২০১২তে বেঙ্গালুরুতে, ২০১৪তে গোয়ায় সিনিয়র ন্যাশনালে খেলেছেন তিনি। দু’বার উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ব্লু’ সম্মানও পান তিনি। বাবা সহ পরিজনেরা আশাবাদী ছেলের ভাল ফলের ব্যাপারে।
সালমার পারিবারিক অবস্থা আরও খারাপ। শিলিগুড়ি থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে বৈকুণ্ঠপুর জঙ্গলের কোলে তরিবাড়ি এলাকায় আদিবাসী বস্তিতে থেকে তাঁর জীবন যুদ্ধ চলে। বাবা কুমরা মাঝি পেশায় গাড়ি চালক। মা দিনমজুরের কাজ করেন। প্রতিদিন বাড়ি থেকে শিলিগুড়ির আশ্রমপাড়ার কৃষ্ণমায়া নেপালি হাইস্কুলে পড়তে আসেন একাদশ শ্রেণির ছাত্রী সালমা। একবারে খোখো অনুশীলন করে তারপর বাড়ি ফেরেন। বাড়ির লোক খোখো খেলা সম্বন্ধে বেশি না জানলেও মেয়ের পাশে থাকেন। সালমার এ পর্যন্ত ট্র্যাক রেকর্ডও চোখ ধাঁধিয়ে দেওয়ার মত। এর আগে পাইকা ন্যাশনাল, ২০১২ তে বেঙ্গালুরুতে সিনিয়র ন্যাশনাল, ভুবনেশ্বরে জুনিয়র ন্যাশনাল, সোলাপুরে সিনিয়র ন্যাশনাল-সহ বাংলার জার্সি চাপিয়ে একের পর এক সাফল্য পেয়েছেন তিনি। পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, যখন সাফের শিবিরে যাওয়ার খবর পৌঁছায়, সালমা তখন পঞ্জাবে ওমেনস ন্যাশনালে খেলছে। সেখানে বাংলা দলগতভাবে তৃতীয় স্থান পেলেও তাঁর জাতীয় দলে ডাক পেতে অসুবিধা হয়নি। পঞ্জাব থেকে এ দিনই শিলিগুড়ি পৌঁছে বাড়িতে দেখা করেই ফের রাতের ট্রেনে গাঁধীনগরের উদ্দেশে রওনা হয়ে যায়। সঙ্গে নিয়ে যায় একরাশ স্বপ্ন।