যন্তর মন্তরে আবার ধর্নায় বজরং পুনিয়া (বাঁ দিক থেকে), সাক্ষী মালিক, বিনেশ ফোগাটরা। —ফাইল চিত্র
যন্তর মন্তরে আবার ধর্না শুরু করেছেন দেশের বেশ কয়েক জন নামী কুস্তিগির। বজরং পুনিয়া, সাক্ষী মালিক, বিনেশ ফোগাটদের দাবি, জাতীয় কুস্তি সংস্থার সভাপতি ব্রিজভূষণ শরন সিংহকে গ্রেফতার করতে হবে। ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে যে তদন্ত হয়েছে সেই রিপোর্টও সবার সামনে প্রকাশ করার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। যত দিন না তাঁদের দাবি পূরণ হচ্ছে তত দিন তাঁরা ধর্না চালিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন।
বক্সার মেরি কমের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের কমিটি ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত করেছে। এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে নিজেদের রিপোর্ট জমা দিয়েছে তারা। কিন্তু সরকার এখনও সেই রিপোর্ট প্রকাশ্যে আনেনি। এখানেই আপত্তি কুস্তিগিরদের। পাশাপাশি দিল্লি পুলিশের দিকেও অসহযোগিতার অভিযোগ তুলেছেন তাঁরা। দাবি, মহিলা কুস্তিগিরদের যৌন নির্যাতন করা হলেও তাঁদের অভিযোগের ভিত্তিতে কোনও এফআইআর দায়ের করা হচ্ছে না।
তাঁদের এই ধর্নায় সব রাজনৈতিক দলকে যুক্ত হওয়ার ডাক দিয়েছেন বজরং। তিনি বলেছেন, ‘‘এ বার আমরা চাই যে কংগ্রেস, বিজেপি, আম আদমি পার্টির মতো সব দল আমাদের সমর্থন করুক। পাশে দাঁড়াক। সবাইকে স্বাগত। কারণ, আমরা কোনও রাজনৈতিক দলের নই। এই লড়াই কুস্তিগিরদের জন্য লড়াই।’’
রবিবার দিল্লির কন্নট প্লেস থানায় ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ করা হয়। কিন্তু পুলিশ এফআইআর দায়ের করতে চায়নি। এতেই ক্ষুব্ধ হয়ে আবার কুস্তিগিররা ধর্না শুরু করেন। অলিম্পিক্সে পদকজয়ী সাক্ষী জানিয়েছেন, সরকারি প্যানেলের কাজকর্মে তাঁরা ক্ষুব্ধ। ব্রিজভূষণের সম্পর্কে কোনও রিপোর্ট প্রকাশ্যে আনা হয়নি। সাক্ষীর কথায়, “আমরা সেই রিপোর্ট চাই যেখানে মহিলা কুস্তিগিরদের বয়ান রয়েছে। সেটি জনসমক্ষে প্রকাশ করতে হবে। এটা স্পর্শকাতর বিষয়, কারণ এর মধ্যে এক নাবালিকার অভিযোগও রয়েছে।’’
আন্তর্জাতিক মঞ্চে একাধিক পদকজয়ী বজরং বলেছেন, “ব্রিজভূষণ গ্রেফতার না হওয়া পর্যন্ত আমরা এখান থেকে কোথাও যাচ্ছি না।” বিনেশ বলেছেন, “যত দিন না বিচার পাই আমরা এখানেই খাব এবং ঘুমাব। ক্রীড়ামন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর এবং বাকি আধিকারিকদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছি গত তিন মাস ধরে। কমিটির তরফেও কোনও উত্তর দেওয়া হচ্ছে না। আমাদের ফোন ধরা হয় না। দেশের হয়ে এত পদক জিতেছি। তার পরেও আমাদের কেরিয়ার খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে রয়েছে।”
গত ১৮ জানুয়ারি প্রথম বার যন্তর মন্তরে ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে ধর্নায় বসেছিলেন এই কুস্তিগিররা। সে দিন বজরং টুইটারে লেখেন, “দেশের হয়ে পদক জেতার জন্য কঠোর পরিশ্রম করে ক্রীড়াবিদরা। কিন্তু আমাদের টেনে নীচে নামানো ছাড়া সংস্থা আর কোনও কাজই করেনি। একতরফা নিয়মের দোহাই দেখিয়ে খেলোয়াড়দের নির্যাতন করা হচ্ছে। সংস্থার কাজ হল খেলোয়াড়দের পাশে দাঁড়ানো, তাদের চাহিদা পূরণ করা। যদি কোনও সমস্যা থাকে তা হলে সেটার সমাধান করতেই হয়। কিন্তু সংস্থা নিজেই যদি কোনও সমস্যা তৈরি করে তা হলে কী হবে? আমাদের এখন লড়াই করতে হবে। আমরা কোনও ভাবেই মাথা নোয়াতে রাজি নই।”
যদিও ব্রিজভূষণ অপরাধ শিকার করতে চাননি। ধর্নার খবর শুনে তিনি বলেন, “আমি শুনেছি দিল্লিতে আমার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ চলছে। আমি বুঝতেই পারছি না কেন এই অভিযোগ করা হচ্ছে। আমার বিরুদ্ধে বিনেশ অভিযোগ করেছে। কিন্তু তার আগে কি অন্য কোনও কুস্তিগির এই অভিযোগ তুলেছিল? কেউ এগিয়ে এসেছিল? হঠাৎ করে এখন কেন অভিযোগ উঠছে? সবটাই ষড়যন্ত্র। এই অপবাদ নিয়ে থাকা যায় না। দরকার পড়লে পদত্যাগ করব।’’
এই প্রসঙ্গে সরাসরি কুস্তিগিরদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন ব্রিজভূষণ। জানান, ফেডারেশনকে বলির পাঁঠা করা হচ্ছে। এমন ভাবে দেখানো হচ্ছে যে ফেডারেশন জোর করে সব কিছু করছে। তিনি বলেন, ‘‘কেউ ট্রায়াল দেয় না, জাতীয় স্তরে প্রতিযোগিতায় নামে না। কিন্তু তার পরেও ওদের কিছু বলা যাবে না। ফেডারেশন নিয়ম তৈরি করে। আমরা সেই নিয়ম মেনে চলি। যারা বিক্ষোভ দেখাচ্ছে তারা কেউ জাতীয় স্তরে একটাও প্রতিযোগিতায় নামেনি। আমি সেটা নিয়ে কথা বলেছি বলেই আমার উপর রাগ। তাই আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে।’’