ফাইনালে রিবাকিনা। ছবি রয়টার্স
আবার মহিলাদের বিভাগে নতুন চ্যাম্পিয়ন দেখতে চলেছে উইম্বলডন। বৃহস্পতিবার যে দুই খেলোয়াড় ফাইনালে উঠলেন, তাদের কেউই খেতাব জয় তো দূরে থাক, এর আগে কোনও গ্র্যান্ড স্ল্যামের ফাইনালে ওঠেননি। এ দিন প্রথম সেমিফাইনালে টিউনিশিয়ার ওন্স জাবেউর ৬-২, ৩-৬, ৬-১ গেমে হারালেন ৩৪ বছরের তাতিয়ানা মারিয়াকে। অন্য সেমিফাইনালে কাজাখস্তানের এলেনা রিবাকিনা ৬-৩, ৬-৩ উড়িয়ে দিলেন উইম্বলডনের প্রাক্তন চ্যাম্পিয়ন সিমোনা হালেপকে।
২০১৯ সালে এই প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন হালেপ। ২০২০-তে উইম্বলডন হয়নি। ২০২১-এ চোট-আঘাতের কারণেই তিনি খেলেননি উইম্বলডনে। এ বারের প্রতিযোগিতায় শুরু থেকেই তাঁকে ট্রফির দাবিদার মনে করা হচ্ছিল। বিশেষত, গত বারের চ্যাম্পিয়ন ইগা শিয়নটেক ছিটকে যাওয়ায় সেই ধারণা আরও জোরালো হয়। তবে সেমিফাইনালে অখ্যাত খেলোয়াড়ের কাছে যে হালেপের দৌড় শেষ হয়ে যাবে, এটা কেউই ভাবতে পারেননি। এ দিন রিবাকিনার ম্যাচ জিততে মাত্র ৭৫ মিনিট লাগল।
কাজাখস্তানের প্রথম টেনিস খেলোয়াড় হিসাবে কোনও গ্র্যান্ড স্ল্যামের ফাইনালে উঠলেন রিবাকিনা। ২০১৫-য় গারবিনে মুগুরুজার পর এত কম বয়সে কোনও কেউ মহিলা সিঙ্গলসের ফাইনালে ওঠেননি। ২০১৯-এ বুখারেস্ট এবং ২০২০-তে হোবার্ট বাদে এখনও কোনও ডব্লিউটিএ সিঙ্গলস ট্রফি জেতেননি রিবাকিনা। তবে ফাইনালে উঠেছেন অনেক বার। এ বছর জানুয়ারিতে অ্যাডিলেড ওপেনে হারেন তৎকালীন বিশ্বের এক নম্বর অ্যাশলে বার্টির কাছে।
দুর্দান্ত ‘এস’ সার্ভিস করার জন্য তাঁকে টেনিস সার্কিটে ‘এস কুইন’ নামে ডাকা হয়। এ দিন পাঁচটি ‘এস’ মেরেছেন। চলতি বছরে এই নিয়ে ২১৯টি ‘এস’ হয়ে গেল তাঁর। শুধু তাই নয়, তাঁর শটের বৈচিত্রও রয়েছে। হালেপের বিরুদ্ধে সেটা ভালই বোঝা গিয়েছে। দুরন্ত কোর্ট কভারেজ করতে পারেন। তার সঙ্গে রয়েছে নিখুঁত গ্রাউন্ডস্ট্রোক এবং শক্তিশালী ফোরহ্যান্ড। হালেপের বিরুদ্ধে তিনি ১৭টি উইনার মেরেছেন। হালেপ নিজেও ১৪টি উইনার মারেন। তবে এ দিন আটটি ডাবল ফল্ট করেছেন তিনি। তার মধ্যে দু’টি হয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে ব্রেক পয়েন্টে। সেমিফাইনাল পর্যন্ত একটিও সেট খোয়াননি হালেপ। সেমিফাইনালে দাঁড়াতেই পারলেন না ২৩ বছরের প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে।
অন্য দিকে, উইম্বলডনে জাবেউরের স্বপ্নের দৌড় অব্যাহত। প্রথম আরবীয় মহিলা হিসাবে কোনও গ্র্যান্ড স্ল্যামের সেমিফাইনালে উঠেছিলেন। সেই রেকর্ড আরও উন্নত করে এ বার ফাইনালে পৌঁছে গেলেন। ট্রফি জিতলে নতুন ইতিহাস তৈরি করবেন তিনি। উল্টো দিকে যিনি ছিলেন, সেই মারিয়া দু’বার মা হওয়ার জন্য টেনিস থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন। তার পরেও ফিরে এসে সর্বোচ্চ পর্যায়ে যে টেনিস খেলেছেন, তা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। শেষ দিকে আর টানতে পারছিলেন না। তা সত্ত্বেও ছন্দে থাকা জাবেউরের থেকে একটি সেট কেড়ে নিয়েছেন তিনি।
এই নিয়ে টানা ১১টি ম্যাচ জিতলেন জাবেউর। শেষ ২৪টি ম্যাচের মধ্যে ২২টি জিতেছেন। ১৯৬৮ সালে পেশাদার টেনিস খেলোয়াড়দের গ্র্যান্ড স্ল্যামের অন্তর্ভুক্তির পর আফ্রিকার কোনও খেলোয়াড় ফাইনালে ওঠেননি। জাবেউর দৃষ্টান্ত তৈরি করলেন। ম্যাচের পর বলেছেন, “টিউনিশিয়ার একজন গর্বিত মহিলা হিসেবে আজ এখানে দাঁড়িয়েছি। জানি টিউনিশিয়ার লোক এখন পাগলের মতো উচ্ছ্বাস করছে। আশা করি আমার পারফম্যান্সের সাহায্যে আগামী প্রজন্মকে ভাল ভাবেই অনুপ্রাণিত করতে পারব। শুধু টিউনিশিয়া নয়, আরব এবং আফ্রিকার অন্যান্য দেশ থেকে আরও টেনিস খেলোয়াড়কে উঠে আসতে দেখতে চাই। নিজের অভিজ্ঞতা ওদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে চাই।”