ভয়ডরহীন: হেলমেটহীন ভিভের এই ছবি আজও হৃদয়ে। ফাইল চিত্র
ওয়েস্ট ইন্ডিজের কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান ভিভ রিচার্ডস খেলতে নেমে হেলমেট ব্যবহার করতে চাইতেন না। তাঁর সময়ে বিশ্বের অন্যতম বিধ্বংসী ব্যাটসম্যান বাইশ গজে এই ডাকাবুকো স্বভাবের জন্যও বিখ্যাত ছিলেন। খেলোয়াড় জীবনে বহু ভয়ঙ্কর বোলারের মুখোমুখি হয়েছেন তিনি। তাও এমন একটা সময়, যখন পিচে কভার থাকত না, বাউন্সার দেওয়া নিয়েও কোনও বিধিনিষেধ ছিল না। তবে এই হেলমেট না নিয়ে ব্যাট করতে নামার জন্য ভিভের কোনও আক্ষেপ নেই।
অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন অলরাউন্ডার শেন ওয়াটসনের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে ৬৮ বছর বয়সি ওয়েস্ট ইন্ডিজ কিংবদন্তি বলেছেন, ‘‘ক্রিকেটের উপর আমার এতটাই আবেগ যে, আমি যা ভালবাসি সেটা করতে গিয়ে প্রাণ গেলেও কিছু মনে করতাম না। আমার বেছে নেওয়া পথে হাঁটতে গিয়ে যদি জীবনও চলে যায়, তার চেয়ে ভাল আর কী হতে পারে।’’ তিনি আরও বলেছেন, অন্য খেলাধুলোতেও যাঁরা জীবন বাজি রেখে নামে তাঁদের দেখে প্রেরণা পান তিনি। ‘‘অন্য পুরুষ বা মহিলা খেলোয়াড়দেরও জীবনের ঝুঁকি নিতে দেখে তাদের উপর আমার শ্রদ্ধা আরও বেড়ে যেত। ফমুর্লা ওয়ান রেসিং গাড়ি চালাচ্ছে যে, তাঁর চেয়ে ঝুঁকির আর কী হতে পারে?’’ প্রশ্ন ভিভের। যা শুনে মজা করে ওয়াটসনও তাঁকে মনে করিয়ে দেন, ‘‘হেলমেট ছাড়া ঘণ্টায় ১৫০ কিমি গতিবেগে করা বলের মুখোমুখি হওয়াও কম কী!’’
দু’বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ভিভ ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে ১২১ টেস্টে খেলেছেন। রান করেছেন ৮৫৪০। গড় ৫০.২৩। পাশাপাশি ১৮৭ ওয়ান ডে ম্যাচেও তাঁর ৪৭ গড়ে ৬৭২১ রান রয়েছে। তাঁকে ক্রিজে দেখলেই বহু বোলারের ঠকঠকানি শুরু হয়ে যেত। ১৯৭৬ সালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে তাঁর ৮২৯ রান এখনও চার ম্যাচের টেস্ট সিরিজে সর্বাধিক রান করার নজির হয়ে রয়েছে। খেলোয়াড় জীবনের কথা বলতে গিয়ে আরও একটা রহস্য ফাঁস করেন ভিভ। কী ভাবে তাঁকে এক দাঁতের চিকিৎসক ‘মাউথ গার্ড’ নিয়ে ব্যাট করতে নামার পরামর্শ দিলেও কেন তিনি তা বেশি দিন ব্যবহার করেননি। তাতে ব্যাট করার সময় চিউয়িং গাম মুখে নিতে পারতেন না বলে। ‘‘আমার এক দাঁতের চিকিৎসক মাউথপিস তৈরি করে দিয়েছিল। সেটা কয়েক বার ব্যবহার করার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু আমি ব্যাট করার সময় চিউয়িং গাম খুব উপভোগ করতাম। সামনে এগারো জন প্রতিপক্ষ, আম্পায়ার, এ রকম পরিস্থিতিতে ব্যাট করতে নেমে ওইটুকুই ছিল আমার শান্তি,’’ বলেছেন ভিভ। তিনি যোগ করেছেন, ‘‘চিউয়িং গাম মুখে নিয়ে মাঠে নামতে আমার খুব ভাল লাগত তখন, মাথা ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করত, আমাকে একটা ছন্দ এনে দিত। সেই সময়টুকুর জন্য আমার সঙ্গী ছিল ওই চিউয়িং গামটাই। তাই যখনই ব্যাট করতে নামতাম দেখতাম মুখে চিউয়িংগামটা আছে তো। তবে দীর্ঘক্ষণ ব্যাটিং করতে হলে তখন আর চিউয়িংগামটা মুখে রাখার মতো অবস্থায় থাকত না। সেটি বিস্বাদ এবং শক্ত হয়ে যেত। তবুও ঠিক আছে। তাই মাউথপিস থেকে দূরে থাকতাম তখন।’’