ক্রিকেট মাঠে ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকা বহু স্মরণীয় ক্রিকেট যুদ্ধের জন্ম দিয়েছে। যদি এই দুই দলের ক্রিকেটারদের নিয়ে একটা দল তৈরি করায় যায়, তা হলে সেই টিমটা কেমন হবে? করোনাভাইরাসের জন্য আপাতত বন্ধ ক্রিকেট। এই পরিস্থিতিতে ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার দুই তারকা বিরাট কোহালি ও এবি ডিভিলিয়ার্স বেছে নিলেন স্কোয়াড। দুই দেশের সেরা ক্রিকেটারদের নিয়ে তৈরি স্কোয়াডে কারা জায়গা পেলেন? প্রথম একাদশই বা কী রকম হল? দেখে নেওয়া যাক।
সচিন তেন্ডুলকর— কোহালি ও ডিভিলিয়ার্সের দলে ওপেনার সচিন তেন্ডুলকর। মহম্মদ আজহারউদ্দিনই তাঁকে সীমীত ওভারের ক্রিকেটে ওপেনার হিসেবে নামতে বলেছিলেন। আজ্জুর সেই সিদ্ধান্ত দারুণ ভাবে খেটে গিয়েছিল। পরবর্তীকালে পঞ্চাশ ওভারের ম্যাচে ওপেন করতে নেমে সচিন দারুণ সফল হয়েছিলেন। সেই ইতিহাস মাথায় রেখেই কোহালি ও এবিডি ভারতের কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান সচিনকে ওপেনার হিসেবে রেখেছেন দলে।
রোহিত শর্মা— ওপেনিংয়ে সচিনের সঙ্গী রোহিত শর্মা। সম্প্রতি দুর্দান্ত ফর্মে রয়েছেন রোহিত। যা ধরছেন, তাতেই সোনা ফলাচ্ছেন। শুরুটায় রোহিত ঢিলেঢালা প্রকৃতির খেলেন। কিন্তু ম্যাচ যত গড়াতে থাকে রোহিত ততই ছন্দে ফিরতে থাকেন। বড় ইনিংস খেলতে দক্ষ ‘হিটম্যান’। অগ্রজ সচিনের সঙ্গে ওপেনিংয়ে তাঁর জুটি যে কোনও প্রতিপক্ষের রাতের ঘুম কেড়ে নেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট।
বিরাট কোহালি— তিন নম্বরে থাকছেন কোহালি নিজে। তিনে নেমে ইনিংস গড়ার কাজটা দারুণ করতে পারেন কোহালি। যে কোনও মুহূর্তে গিয়ার পরিবর্তন করতে দক্ষ তিনি। খুব ভাল বলকেও গ্যালারিতে ফেলতে পারেন। রানের গতি যেমন বাড়াতে পারেন, তেমনই স্ট্রাইক রোটেট করে স্কোর বোর্ড সচল রাখতে দারুণ দক্ষ কোহালি।
এবি ডিভিলিয়ার্স— বিধ্বংসী ব্যাটসম্যান। মাঠের যে কোনও প্রান্তে শট খেলতে পারেন। স্লগ ওভারে এবি ঝড় তোলেন। বোলাররা বুঝে উঠতে পারেন না মিস্টার ৩৬০ ডিগ্রিকে কোন লেংথে বল করবেন।
জাক কালিস— সর্বকালের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। ভাঙনের মুখে ইনিংস গড়তে পারেন। বল হাতেও প্রয়োজনের সময়ে উইকেট তুলে নিতে পারেন ক্যালিস। এ রকম এক জন অলরাউন্ডারকে যে কোনও দলই পেতে চাইবে। সেই কারণেই কোহালি ও এবি নিয়েছেন কালিসকে।
যুবরাজ সিংহ — বাঁ হাতি যুবি কী করতে পারেন, তা খুব ভাল জানেন ক্রিকেটভক্তরা। নাইরোবিতে অভিষেক ম্যাচেই নজর কেড়েছিলেন। তার পরে যত এগিয়েছেন, ততই নিজেকে শাণিত করেছেন। ২০১১ বিশ্বকাপ যুবরাজ সিংহকে নিয়ে গিয়েছে অন্য এক উচ্চতায়। ব্যাটের পাশাপাশি বল হাতেও সফল হয়েছিলেন। তারও আগে ২০০৭ সালের টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপে স্টুয়ার্ট ব্রডকে ছ’টি ছক্কা হাঁকানো আজও অমলিন। কোহালি ও এবির দলে ছ’ নম্বরে নামবেন পঞ্জাবতনয়।
এমএস ধোনি— ধোনিকে বাছতে বসে কোহালির যুক্তি ছিল, এমএস এলে দলে ভারসাম্য বাড়বে। আর এবি তো ক্যাপ্টেন বানিয়েছেন ধোনিকে। ফিনিশার হিসেবে ধোনির দক্ষতা নিয়ে কোনও প্রশ্নই নেই। উইকেটের পিছনে দাঁড়িয়ে গোটা দলকে পরিচালিত করেন। বোলারের জন্য ফিল্ডিং সাজিয়ে দেন। আর হাড্ডাহাড্ডি ম্যাচে রান তাড়া করার সময়ে ধোনি দলে থাকা মানেই অ্যাডভান্টেজে দল।
কাগিসো রাবাডা— তাঁর ও কোহালির ডুয়েল এখনকার ক্রিকেটে রূপকথা লিখতে পারে। সেই রাবাডাকে যে দলে নেওয়ার ব্যাপারে সম্মতি দেবেন ভারত অধিনায়ক, তা বলাই বাহুল্য। রাবাডার গতি যে কোনও ব্যাটসম্যানের কাছেই ভয়ের কারণ। ডেথ ওভারেও তিনি অবলীলায় ইয়র্কার দিতে পারেন।
ডেল স্টেন— যে কোনও ফরম্যাটে ভয়ঙ্কর বোলার। অ্যাটাকিং বোলার বলতে যা বোঝানো হয়, স্টেন ঠিক তাই। বলের সিমকে দারুণ ভাবে কাজে লাগাতে পারেন। উইকেটের দু’দিকেই সুইং করাতে পারেন। এ রকম এক জন বোলার অধিনায়কের হাতের তুরুপের তাস।
যশপ্রীত বুমরা— শর্ট রান আপেও যে গতির ঝড় তোলা যায় তা বুমরাকে না দেখলে বোঝাই যেত না। বলে বলে ইয়র্কার দিতে পারেন স্লগ ওভারে। বলের বৈচিত্র্য এতটাই রয়েছে যে ব্যাটসম্যন তাঁকে সামলাতে বেগ পান। কোহালির খুব পছন্দের বোলার বুমরা। দুই তারকার দলে বুমরা তাই অটোমেটিক চয়েস।
যুজবেন্দ্র চহাল— চহাল রান আটকে রাখতে পারেন। সেই সঙ্গে তিনি উইকেট তুলতেও দক্ষ। এ রকম এক জন বোলারকে দলে চাইবেন যে কোনও অধিনায়কই। সেই কারণেই কোহালি ও এবি দলে নিয়েছেন চহালকে।
কুলদীপ যাদব— গোড়ার দিকে কুলদীপের স্পিন পড়তে পারতেন না ব্যাটসম্যানরা। তাঁকে খেলতে সমস্যা হত ব্যাটসম্যানদের। উইকেটও পেতেন কুলদীপ। কিন্তু গতবারের আইপিএল-এ তাঁকে মার হজম করতে হয়েছিল। বিশ্বকাপেও নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি কুলদীপ। তবুও রহস্যময় স্পিনার হিসেবে তাঁকে যে কোনও অধিনায়কই স্কোয়াডে রাখবেন। সেই কারণেই কুলদীপকে স্কোয়াডে রেখেছেন কোহালি ও এবি।
রবীন্দ্র জাদেজা— যে কোনও দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অলরাউন্ডার। বল করতে পারেন। দুরন্ত ফিল্ডার। ব্যাটিংয়ের হাতও বেশ ভাল। জাদেজাকে স্কোয়াডে রেখেছেন কোহালি ও এবি।
মর্নি মর্কেল— তাঁর সম্পর্কে ঢালাও সার্টিফিকেট দিয়েছিলেন অ্যালান ডোনাল্ড। ডেল স্টেনের সঙ্গে তাঁর জুটি ভয়ঙ্কর। এ ছাড়াও ব্যাট হাতে দলের কাজে আসতে পারেন।
তবে এই সব ক্রিকেটারকে ১৪ জনের দলে রাখলেও প্রথম একাদশে কোহালি ও এবি রাখেননি জাদেজা, মর্কেল ও কুলদীপকে। ফলে, প্রথম এগারোয় বিশেষজ্ঞ স্পিনার হিসেবে থাকছেন শুধু চহাল।