গোরান পান্ডেভ। ছবি: টুইটার থেকে
তাঁর বয়স ৩৭ বছর। দেশের বয়স ৩০ বছর। উত্তর ম্যাসিডোনিয়ার গোরান পান্ডেভ যেন সব দিক থেকেই দেশের থেকে বড়। ২০১৪ সালে অবসর নিলেও ফিরে আসেন প্রশিক্ষক ইগর অ্যাঞ্জেলোভস্কির কথায়, ইউরো খেলার স্বপ্ন নিয়ে। সেই স্বপ্ন বাস্তবে পরিণত করে, ইউরোর মঞ্চে গোল করে, দেশের পতাকা আরও কিছুটা উঁচু করে আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে বিদায় নিলেন পান্ডেভ।
১৯৯১ সালে স্বাধীনতা পাওয়া ম্যাসিডোনিয়া (২০১৯ সালে নাম হয় উত্তর ম্যাসিডোনিয়া) ২০১৬ সালে ফিফা ক্রমতালিকায় ছিল ১৬২ নম্বরে। ভারতের থেকে ২৭ ধাপ পিছনে। ইউরো কাপ শুরুর আগে তারা উঠে আসে ৬২ নম্বরে। এই স্বপ্নের দৌড়ের দায়িত্ব ছিল বুড়ো ঘোড়া পান্ডেভের ওপর। সারথি তাঁর থেকে মাত্র ৮ বছরের বড় প্রশিক্ষক অ্যাঞ্জেলোভস্কি। পান্ডেভের দেশ ফুটবল বিশ্বে খুব পরিচিত নাম না হলেও, তিনি নিজে ইটালির ফুটবলে মন জয় করে নিয়েছিলেন অনেক আগেই। ২০০৯-১০ সালে ইন্টার মিলানের ত্রিমুকুট জয়ের (সেরি আ, কোপা ইটালিয়া এবং উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ) অন্যতম কাণ্ডারি। তাঁর মতো রক্ষণাত্মক আক্রমণ ভাগের ফুটবলারের ওপরেই ভরসা রেখেছিলেন জোসে মোরিনহো। লাজিয়োর হয়ে ১৫৯টি ম্যাচ খেলা পান্ডেভ তার আগেই অবশ্য ইটালিতে পরিচিত নাম।
২০১৯ সালের হিসাব অনুযায়ী উত্তর ম্যাসিডোনিয়ার জনসংখ্যা ছিল ২০ লক্ষের কিছু বেশি। শুধু কলকাতার জনসংখ্যাই প্রায় দেড় কোটি। ইউরোপের সেই ছোট দেশের ইউরো কাপে যোগ্যতা অর্জন ছাড়াও কৃতিত্ব রয়েছে জার্মানিকে হারিয়ে দেওয়ার। প্রথম বার ইউরো খেলতে আসা ম্যাসিডোনিয়ার ভরসা ছিল স্বপ্ন, জেদ এবং পান্ডেভ। দেশের হয়ে ১২২টি ম্যাচ খেলে অবসর নিলেন তিনি। ৩৮টি গোল করে দেশের সর্বাধিক গোলের মালিকও তিনিই। তবে ইউরো কাপে দেশকে নেতৃত্ব দেওয়া পান্ডেভ প্রকৃত অর্থেই দেশের নেতা। কেন?
১০০তম ম্যাচে যে জার্সি পরে খেলেছিলেন পান্ডেভ, সেই জার্সি নিলাম করে দেন তিনি। সেই টাকা করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করা একটি হাসপাতালকে দান করে দেন পান্ডেভ। শুধু তাই নয়, পান্ডেভের একটি ফুটবল দলও রয়েছে। উল্লেখ্য সেই অ্যাকাডেমিয়া পান্ডেভ দলটি দেশের প্রথম শ্রেণির ফুটবলে খেলে এবং সেই দলের একজন ফুটবলার এ বারের ইউরো দলেরও সদস্য। দেশের ফুটবলকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখেন পান্ডেভ।
শেষ বারের মতো দেশের হয়ে খেললেন পান্ডেভ। ছবি: টুইটার থেকে
ইউরো কাপে গ্রুপ সি-তে চতুর্থ স্থানে শেষ করে উত্তর ম্যাসিডোনিয়া। কোনও পয়েন্ট না পেলেও এ বারের প্রতিযোগিতা থেকে তাদের প্রাপ্য দুটো গোল। তার মধ্যে প্রথমটি অস্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে করেছিলেন পান্ডেভই। নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে প্রতিযোগিতার শেষ ম্যাচ খেলতে নামার আগে পান্ডেভ বলেন, “দেশের হয়ে শেষ ম্যাচ খেলতে নামছি। আমার মনে হয়ে এটাই সঠিক সময় অবসর নেওয়ার। আশা করি এই দল বিশ্বকাপেও যোগ্যতা অর্জন করবে। উত্তর ম্যাসিডোনিয়ার মানুষের মুখে হাসি ফোটাবে এরা। বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা আছে ওদের।” দেশের আগামী প্রজন্মকে একরাশ স্বপ্ন দেখিয়ে বিদায় নিলেন পান্ডেভ।