হওয়ার কথা ছিল দেশের সফলতম ক্রিকেটার। হয়ে গেলেন কনিষ্ঠতম ম্যাচ রেফারি। রীতেন্দ্র সিংহ সোধির জীবনের বাঁক ঘুরে যায় বাইশ গজ থেকে মাঠের বাইরে।
রীতেন্দ্রর জন্ম ১৯৮০-র ১৮ অক্টোবর। ছোট থেকেই তাঁকে বলা হত বিস্ময় প্রতিভা। রীতেন্দ্রর বাবা মহেশ ইন্দ্র সিংহ-ও ছিলেন ক্রিকেটার। তিনি পঞ্জাবের হয়ে রনজি ট্রফিতে খেলেছিলেন।
১৯৯৬ সালে অনূর্ধ্ব ১৫ বিশ্বকাপ ফাইনালে চোখ ধাঁধাঁনো পারফরম্যান্স ছিল অধিনায়ক রীতেন্দ্রর। তাঁর ৩৪ রানে ৩ উইকেট এবং অপরাজিত ৮২ রান ভারতকে ফাইনাল জিততে সাহায্য করে।
এই ফর্ম তাঁকে ডাক পেতে সাহায্য করে অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপে। ২০০০ সালে এই বিশ্বকাপের ফাইনালে তাঁর অপরাজিত ৩৯ রান এবং ১০ ওভারে ২৬ ছিল দেশের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মূল ভিত্তি। তিনি প্লেয়ার অব দ্য ম্যাচ নির্বাচিত হন।
এর চার মাসেরও কম সময়ের মধ্যে রীতেন্দ্র ষোলো বছর বয়সে রনজি ট্রফিতে প্রথম খেলার সুযোগ পান। তাঁর অভিষেক হয় দিল্লির বিরুদ্ধে। পরের মরসুমে পঞ্জাবের হয়ে দিল্লির বিরুদ্ধে অপরাজিত ২০০ তাঁকে নির্বাচকদের নজরে আনে। তাঁকে সে সময় বলা হত ভবিষ্যতের কপিল দেব।
ডান হাতি ব্যাটসম্যান এবং মিডিয়াম পেসার বোলার রীতেন্দ্রর জাতীয় দলে ডাক পেতে দেরি হয়নি। তাঁর ওয়ান ডে-তে অভিষেক ২০০০-এর ডিসেম্বরে, জিম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে।
সে সময় দলের তরুণ ব্রিগেডের কাছ থেকে কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়েন সোধি। যুবারজ সিংহ, মহম্মদ কইফ এবং সঞ্জয় বাঙ্গারের সঙ্গে তীব্র প্রতিযোগিতা ছিল সোধির। সেই প্রতিযোগিতায় তিনি পিছিয়ে পড়েন।
১৮ টি ওয়ান ডে-র বাইরে যেতে পারেনি তাঁর কেরিয়ার। মোট ১৮টি ম্যাচে তাঁর সংগ্রহ ছিল ৩৬৫ রান। সর্বোচ্চ রান ৬৭। গড় ২৫.৪৫। দু’টি অর্ধশতরান করেছেন, নিয়েছেন ৫টি উইকেট।
রীতেন্দ্র সিংহ হলেন সেই মুষ্টিমেয় ক্রিকেটারদের মধ্যে একজন, যিনি ইন্ডিয়ান ক্রিকেট লিগ বা আইসিএল-এ খেলেছিলেন। ২০০৭ এবং ২০০৮-০৯, দু’টি মরসুমেই তিনি ছিলেন আমদাবাদ রকেটস দলে।
আইসিএল খেলার পরে রীতেন্দ্র বিসিসিআই-এর কালো তালিকায় চলে যান। সেখান থেকে আর বেরিয়ে আসতে পারেননি। আর ডাক পাননি জাতীয় দলে। পরে বোর্ডের নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ায় আইপিএল-এ তিনি কিংস ইলেভেন পঞ্জাবে সই করেন। কিন্তু চোট আঘাতের জন্য কোনও ম্যাচ খেলতে পারেননি।
দীর্ঘদিন জাতীয় দলে ডাক না পেয়ে ক্রিকেট ছেড়ে দেন হতাশ রীতেন্দ্র। তবে তিনি এর জন্য আইসিএল-কে দোষারোপ করতে রাজি নন। তাঁর কথায়, চোট আঘাতের জেরে তিনি দু’বছর মাঠের বাইরে ছিলেন। এরপর আর ফিরে আসতে পারেননি আগের মতো স্বাভাবিক অবস্থায়।
খেলা ছাড়ার পরে তাঁকে দেখা গিয়েছিল টেলিভিশন চ্যানেলে ক্রিকেট বিশেষজ্ঞের ভূমিকায়। কিন্তু সে পথেও কেরিয়ার বেশি দূর এগোয়নি। এরপর রীতেন্দ্র ঘরোয়া ক্রিকেটের ম্যাচ রেফারি হয়ে যান।
কেরিয়ারের অকালমৃ্ত্যু তাঁকে হতাশ করে মাঝে মাঝে, জানিয়েছেন রীতেন্দ্র। কিন্তু হতাশা কাটিয়ে উঠে তিনি ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানান। ক্রিকেট মাঠে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পাওয়ার জন্য।
জীবনের দ্বিতীয় ইনিংসও উপভোগ করছেন তিনি। জানিয়েছেন প্রাক্তন অলরাউন্ডার। এখনও তাঁর জীবন ক্রিকেট ঘিরেই আবর্তিত হয়। পার্থক্য হল, আগে তাঁর হাতে থাকত ক্রিকেটের কিট ব্যাগ। এখন থাকে ল্যাপটপ ব্যাগ। (ছবি : ফেসবুক)