১ ফেব্রুয়ারি, শনিবার, সরস্বতীপুজোর আগের দিন সংসদে বাজেট পেশ করবেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। তাঁর বাজেট বক্তৃতার দিকে অধীর আগ্রহে তাকিয়ে রয়েছে আমজনতা। ২০২৫-’২৬ আর্থিক বছরে কমবে আয়করের মাত্রা? কোন খাতে কত টাকা ব্যয় বরাদ্দ করবেন জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের (জেএনইউ) প্রাক্তনী? নির্মলার বাজেটের পর দেশের আর্থিক বৃদ্ধির হার কেমন হবে, তাই নিয়েও তুঙ্গে উঠেছে জল্পনা।
চলতি বছরে অষ্টম বারের জন্য সংসদে বাজেট পেশ করবেন জহওরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক পড়ুয়া সীতারামন। এ বারের বাজেট তাঁর কাছে যথেষ্ট চ্যালেঞ্জের বলে মনে করছেন আর্থিক বিশ্লেষকেরা। কারণ, ২০২৫-’২৬ অর্থবর্ষের জন্য ব্যয় বরাদ্দ ঘোষণার মুখে দেশের বৃদ্ধির সূচক কিছুটা নিম্নমুখী হয়েছে। এই বিষয়টি মাথায় রেখে বাজেট তৈরি করা যথেষ্ট কঠিন বলে মনে করা হচ্ছে।
আসন্ন আর্থিক বছরের ব্যয় বরাদ্দের জন্য নির্মলাকে সাহায্য করেছেন বেশ কয়েক জন আধিকারিক এবং অর্থনীতিবিদ। গত কয়েক মাস ধরে বাজেটের জন্য নিরলস পরিশ্রম করে চলেছেন তাঁরা। সেই তালিকায় প্রথমেই আসবে তুহিনকান্ত পাণ্ডের নাম। বর্তমানে কেন্দ্রের অর্থ এবং রাজস্ব সচিবের পদে রয়েছেন তিনি।
১৯৮৭ ব্যাচের ওড়িশা ক্যাডারের আইএএস অফিসার তুহিনকান্তকে অতি সম্প্রতি অর্থ এবং রাজস্ব সচিবের দায়িত্ব দিয়েছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। দেশের কর সংক্রান্ত নীতি এবং সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধির যাবতীয় পরিকল্পনার নেপথ্যে রয়েছে তাঁর মস্তিষ্ক। এ বারের বাজেটে কর ছাড়ের ঘোষণা হতে পারে বলে জল্পনা রয়েছে। এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে তিনিই নির্মলার প্রধান পরামর্শদাতা।
কেন্দ্রীয় অর্থসচিবের দায়িত্ব নেওয়ার আগে বিনিয়োগ এবং সাধারণের সম্পদ ব্যবস্থাপনা দফতরের (ডিপার্টমেন্ট অফ ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড পাবলিক অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট বা ডিআইপিএএম) সচিব ছিলেন তুহিনকান্ত। সরকারের বিলগ্নিকরণ কৌশলের নেতৃত্ব দেওয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর। বাজেটের মুখে আয়কর আইন সংস্কারের তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব পেয়েছেন তিনি।
২০২৫-’২৬ অর্থবর্ষের কেন্দ্রীয় বাজেটের জন্য আর্থিক সমীক্ষা রিপোর্ট তৈরি করছেন ভি অনন্ত নাগেশ্বরন। অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা পদে রয়েছেন তিনি। তাঁর দেওয়া রিপোর্টের উপর ভিত্তি করেই ভবিষ্যতের আর্থিক নীতির নীল নকশা তৈরি করবে নরেন্দ্র মোদী সরকার।
নাগেশ্বরন অবশ্য কোনও দিনই আমলা ছিলেন না। আইআইএম অহমদাবাদের প্রাক্তনী তামিলনাড়ুর এই ভূমিপুত্রের আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি রয়েছে। প্রথম জীবনে বেশ কিছু দিন শিক্ষকতা করেছেন তিনি। কেন্দ্রের মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা হওয়ার আগে আর্থিক বাজারের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন তিনি।
কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীকে নাগেশ্বরন সাধারণত বৃদ্ধির সূচক ঊর্ধ্বমুখী করতে নানা ধরনের সংস্কারের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তাঁর পেশ করা আর্থিক সমীক্ষা রিপোর্টে বেসরকারি বিনিয়োগকে উৎসাহিত করার ইঙ্গিত রয়েছে। পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী আর্থিক অনিশ্চয়তার মধ্যে সরকার কী ভাবে বৃদ্ধির সূচক ঠিক রাখতে পারবে, তারও দিকনির্দেশ করেছেন তিনি।
নির্মলার বাজেটে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকবে মনোজ গোভিলের। বর্তমানে অর্থ মন্ত্রকের খরচ সংক্রান্ত দফতরের সচিব পদে রয়েছেন তিনি। ১৯৯১ ব্যাচের মধ্যপ্রদেশ ক্যাডারের এই আইএএস আধিকারিক এর আগে কর্পোরেট বিষয়ক মন্ত্রকের সচিব পদে ছিলেন।
সূত্রের খবর, সরকারি ভর্তুকিমূলক প্রকল্পগুলিকে যুক্তিসঙ্গত করার দিকে নজর দেওয়ার দায়িত্ব গোভিলের কাঁধে দিয়েছেন সীতারামন। সরকারি ব্যয়ের ক্ষেত্রে কী কী বিষয়কে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে এবং রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে সেগুলি সামঞ্জস্যপূর্ণ হচ্ছে কি না, তা ঠিক করবেন এই আইএএস অফিসার।
এ বারের বাজেট তৈরিতে নির্মলার কোর টিমে রয়েছেন অজয় শেঠ। ১৯৮৭ ব্যাচের কর্নাটক ক্যাডারের এই আইএএস অফিসার আর্থিক বিষয়ক দফতরের প্রধান হিসাবে কাজ করছেন। বাজেটের যাবতীয় নথি তৈরি করা এবং আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার পরিকল্পনা রূপায়ণের গুরুদায়িত্ব রয়েছে তাঁর কাঁধে।
ভারতের বাজেটের ক্ষেত্রে রাজস্ব ঘাটতি একটি জটিল সমস্যা। এই ঘাটতি মেটাতে অনেক সময়েই সরকারকে ঋণ নিতে হয়। বিশ্বের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কথা বিচার করে এ ব্যাপারে নীতি নির্ধারণের সঙ্গেও জড়িত থাকছেন অজয় শেঠ।
আর্থিক পরিষেবা দফতরের সচিব এম নাগরাজুও রয়েছেন নির্মলা সীতারামনের বাজেট তৈরির কোর দলে। ১৯৯৩ ব্যাচের ত্রিপুরা ক্যাডারের আইএএস অফিসার তিনি। ঋণের সুষ্ঠু প্রবাহ নিশ্চিত করা, ফিনটেক সংস্থাগুলিকে নিয়ন্ত্রণ এবং বিমার ক্ষেত্রের সম্প্রসারণে তাঁর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
অর্থ মন্ত্রকে আসার আগে কয়লা মন্ত্রকের গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন নাগরাজু। দেশের কয়লাখনিগুলির বেসরকারিকরণের যাবতীয় পরিকল্পনা করেন তিনি। বর্তমানে ডিজিটাল পরিষেবার মাধ্যমে দেশের ব্যাঙ্ক এবং আর্থিক পরিষেবাকে আরও সহজলভ্য করে তোলার দায়িত্ব রয়েছে তাঁর কাঁধে।
বিনিয়োগ এবং সাধারণের সম্পদ ব্যবস্থাপনা এবং পাবলিক এন্টারপ্রাইজ় দফতরের সচিব অরুণীশ চাওলা এ বারের বাজেট তৈরির ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা নেবেন বলে জানা গিয়েছে। ১৯৯২ সালের বিহার ক্যাডারের এই আইএএস অফিসারের কাঁধে সরকারের বিলগ্নিকরণ এবং রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সম্পদের নগদিকরণের দায়িত্বভার দিয়েছেন নির্মলা।
সূত্রের খবর, আইডিবিআই ব্যাঙ্ক এবং অন্যান্য রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বিক্রির তদারকি করবেন অরুণীশ। পাশাপাশি আমজনতার ব্যয়ের জন্য তহবিল সংগ্রহ করা এবং সম্পদের নগদিকরণের কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার একাধিক পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর। ওষুধ শিল্প এবং প্রশাসনের শীর্ষ আধিকারিক— দু’রকমের কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে বিহার ক্যাডারের এই অফিসারের।