স্কুলজীবন থেকে প্রেম। পাঁচ থেকে ছ’বছরের সম্পর্ক। ২১ বছরের গণ্ডি পেরোতে না পেরোতেই সংসার পাতেন তাঁরা। কিন্তু সংসার বেশি দিন স্থায়ী হয়নি তাঁদের। দু’বছর এক ছাদের তলায় কাটানোর পর ভয়াবহ দুর্ঘটনার সম্মুখীন হন সেই দম্পতি।
আমেরিকার টেক্সাসের বাসিন্দা ক্রিস আর্মস্ট্রং। তিনি যখন ১৬ বছর বয়সি কিশোরী তখন তাঁর আলাপ হয় ব্র্যান্ডন স্মিথের সঙ্গে। সেই সময় ব্র্যান্ডনের বয়স ছিল ১৫ বছর। একই স্কুলে পড়তেন দু’জনে। কিশোরী বয়স থেকেই প্রেম করতেন তাঁরা।
বিয়ে করে সংসার পাতার ইচ্ছা ছিল ক্রিস এবং ব্র্যান্ডনের। তাই দু’জনেই ২১ বছরের গণ্ডি পার হতে না হতেই আর অপেক্ষা না করে বিয়ে করে ফেলেন। বিয়ের পর দু’বছর সুখে-শান্তিতে কেটে যায় দম্পতির। কিন্তু ২০০৮ সালে অন্ধকার নেমে আসে তাঁদের জীবনে।
বিয়ের পর একই সঙ্গে দু’টি চাকরি করতেন ক্রিস। সংসার এবং চাকরি সামলে ব্যস্ততার মধ্যেই দিন কাটত তাঁর। এক দিন অফিস থেকে বেরিয়ে গাড়ি চালিয়ে অন্য জায়গায় যাচ্ছিলেন ক্রিস। সেই সময় একটি ফোন আসে তাঁর কাছে। জানতে পারলেন, গাড়ি দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন ব্র্যান্ডন। দুর্ঘটনার সাত ঘণ্টা পর সেই খবর জানতে পারেন ২৩ বছর বয়সি ক্রিস।
গাড়ি দুর্ঘটনার পর ব্র্যান্ডনকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। মস্তিষ্কে গুরুতর আঘাত পান তিনি। চিকিৎসার পর কোমায় ছিলেন তিনি। টানা দু’মাস কোমায় থাকার পর জ্ঞান ফেরে ব্র্যান্ডনের।
কোমা থেকে ফিরলেও কিন্তু পুরোপুরি সুস্থ হননি ব্র্যান্ডন। চিকিৎসকেরা জানান, ‘পোস্ট ট্রম্যাটিক অ্যামনেশিয়া’ রোগে ভুগছেন ব্র্যান্ডন এবং তাঁর সারা ক্ষণ যত্নের প্রয়োজন।
কোমা থেকে ফেরার পর ক্রিসের কাছে ব্র্যান্ডন একেবারেই অচেনা হয়ে ওঠেন। স্থানীয় এক সংবাদমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ক্রিস জানান, তাঁর তখন সংসার করার প্রবল ইচ্ছা ছিল। কিন্তু ব্র্যান্ডনের সঙ্গে সেই স্বপ্ন পূরণ করতে পারতেন না তিনি। অন্য দিকে ব্র্যান্ডনের যত্নও নিতে চাইতেন।
অনেক ভেবে ব্র্যান্ডনকে বিবাহবিচ্ছেদ দেন ক্রিস। অথচ প্রাক্তন স্বামীর ছায়াসঙ্গিনী ছিলেন তিনি। শরীরের যত্ন নেওয়া থেকে শুরু করে তাঁর চিকিৎসার যাবতীয় দায়িত্ব নেন ক্রিস।
২০১৪ সালে জেমস আর্মস্ট্রং নামে এক তরুণের সঙ্গে আলাপ হয় ক্রিসের। জেমস ‘সিঙ্গল ফাদার’ ছিলেন। সম্পর্ক শুরুর আগেই জেমসকে ব্র্যান্ডনের কথা জানিয়ে দিয়েছিলেন ক্রিস। সব শোনার পর কোনও আপত্তি জানাননি জেমস। ক্রিসকে ডেট করার পর তাঁকে বিয়েও করেন।
এক সাক্ষাৎকারে ক্রিস বলেন, ‘‘আমি জেমসের সঙ্গে ব্র্যান্ডনের আলাপ করিয়ে দিয়েছিলাম। প্রথম আলাপে তাঁরা এমন ভাব জমিয়ে ফেলেছিল যে, যেন দেখে মনে হচ্ছিল কত দিনের বন্ধু। জেমসকে দেখে ব্র্যান্ডন একসঙ্গে বিয়ার খাওয়ার প্রস্তাবও দিয়েছিল।’’
এক বছর সম্পর্কে থাকার পর ২০১৫ সালে ক্রিসকে বিয়ে করেন জেমস। জেমসের সন্তানও তাঁদের সঙ্গে থাকতে শুরু করেন। ক্রিসের পাশাপাশি ধীরে ধীরে জেমসও অভিভাবক হয়ে ওঠেন ব্র্যান্ডনের।
বিয়ের পর সন্তানের জন্ম দেন ক্রিস। তিনি জানান, স্বামী এবং দুই সন্তান নিয়ে সুখে রয়েছেন তিনি। তাঁদের পরিবারের অংশ হয়ে উঠেছেন ব্র্যান্ডনও।
সাক্ষাৎকারে ক্রিস বলেন, ‘‘আমার সন্তানেরা ব্র্যান্ডনকে খুব ভালবাসে। ও যখন আমাদের বাড়িতে আসে, তখন ওকে জড়িয়ে ধরে বাচ্চারা। ওর সঙ্গে খেলাধুলাও করে। আমরা সকলে মিলে অনেক আশা-ভালবাসায় রয়েছি।’’