নীরজ বনাম সুমিতের লড়াই দেখা যেতে পারে।
জীবন শুরু করেছিলেন কুস্তিতে। লক্ষ্য ছিল খেলার মাধ্যমে ভারতীয় সেনায় যোগ দেওয়া। হরিয়ানার সনিপতের এক আখড়ায় অনুশীলন সেরে বাড়ি ফিরছিলেন বাইক চালিয়ে। সেই সময় পিছন থেকে ট্রাক্টরের ধাক্কায় পড়ে যান সুমিত অন্তিল। টোকিয়ো প্যারালিম্পিক্সে সোনাজয়ীর পায়ের উপর দিয়ে চলে গিয়েছিল সেই ট্র্যাক্টর। চুরমার হয়ে গিয়েছিল সেনায় যোগ দেওয়ার স্বপ্ন। প্যারালিম্পিক্সে সোনা সেই স্বপ্ন ভুলিয়েছে। এখন সুমিতের কাছে নতুন স্বপ্ন, ২০২৪ সালে প্যারালিম্পিক্সের পাশাপাশি অলিম্পিক্সেও অংশ নেওয়া।
সেনায় যোগ দিতে না পারলেও তখন খেলা চালিয়ে যান সুমিত। কুস্তিতে আর না পারলেও শিখতে শুরু করেন জ্যাভলিন থ্রো। এক সাক্ষাৎকারে সুমিত বলেন, “আমার বাঁ পা থাকলে কুস্তিগীর হতাম। খেলার মাধ্যমে সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার ইচ্ছা ছিল। অনেক সরকারি চাকরিও ছেড়ে দিয়েছিলাম সেই জন্য। কিন্তু একটা দুর্ঘটনা আমার জীবনটাই পাল্টে দিল।”
টোকিয়ো অলিম্পিক্সে নীরজ চোপড়ার সোনা জয় ভারতের কাছে জ্যাভলিনকে পরিচিত করে তুলেছে অনেক বেশি। সেই নীরজের সঙ্গে গ্রাঁ প্রিঁ-তে অংশ নিয়েছিলেন সুমিত। সেখানে নীরজ সোনা জেতেন, সুমিত শেষ করেন সাত নম্বরে। আবার নীরজের সঙ্গে নামার স্বপ্ন দেখছেন সুমিত। প্যারালিম্পিক্সে ৬৮.৫৫ মিটার দূরে জ্যাভলিন ছুড়ে বিশ্বরেকর্ড গড়ে সুমিত বলেন, “বিশ্বরেকর্ড গড়ে সোনা জিততে চেয়েছিলাম। সেটাই করেছি। তবে এখানেই থামছি না। আরও অনেকটা পথ যাওয়া বাকি। আপাতত বাড়ি ফিরে ১৫-২০ দিন বিশ্রাম নেব। চিকিৎসকরা তেমনটাই পরামর্শ দিয়েছেন। বিশ্রাম নিয়ে, সুস্থ হয়ে ফের মাঠে নামতে চাই। ২০২২ সালে কমনওয়েলথ গেমস, এশিয়ান গেমস, বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপ আমার পরবর্তী লক্ষ্য। ২০২৪ সালে প্যারিস অলিম্পিক্স এবং প্যারালিম্পিক্স, দুটোতেই যদি অংশ নিই তাতেও অবাক হবেন না। ৭৫ থেকে ৮০ মিটার দূরে জ্যাভলিন ছোড়ার ব্যাপারে আমি আত্মবিশ্বাসী। অলিম্পিক্সে যোগ্যতা অর্জন করতে সেটা নিশ্চয়ই যথেষ্ট হবে। আমি সেটা করার চেষ্টা অবশ্যই করব। নিজেকে সেই ভাবে তৈরি করব।”
২০১৯ সালে দুবাইয়ে বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপে রুপো জিতে টোকিয়োর টিকিট নিশ্চিত করেছিলেন সুমিত। সেই প্রতিযোগিতার শেষে নীরজের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। সুমিত বলেন, “নীরজকে ধন্যবাদ আমাকে অনুপ্রেরণা দেওয়ার জন্য। ওর প্রত্যেকটা কথা আমার মনে আছে। নীরজ বলেছিল আমার ক্ষমতা আছে টোকিয়োতে পদক জেতার। ও বলেছিল, ‘ভাই, তুমি নিশ্চয়ই পদক জিতবে।”
নীরজকে সব সময় পাশে পেয়েছেন সুমিত। তিনি বলেন, “আমার যখন প্রয়োজন হয়েছে, নীরজ আমাকে সাহায্য করেছে। সব সময় পাশে দাঁড়ানোর জন্য তৈরি ছিল ও। খুব ভাল মানুষ নীরজ।” সোমবার বিশ্ব রেকর্ড গড়ে সোনা জেতেন ২৩ বছরের সুমিত। নীরজ টুইট করে লেখেন, ‘দারুণ পারফরম্যান্স সুমিত ভাই। গর্বিত তোমার জন্য।’ এক সংবাদপত্রকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নীরজ বলেন, “আমরা দু’জনেই সোনা জিতেছি। এটা আমাকে দারুণ আনন্দ দিয়েছে। দেশে ফিরলে ওর সঙ্গে কথা বলার জন্য মুখিয়ে রয়েছি।”
একাধিক খেলোয়াড় আছেন, যাঁরা অলিম্পিক্স এবং প্যারালিম্পিক্স, দুই প্রতিযোগিতাতেই অংশ নিয়েছেন। শারীরিক দুর্বলতা তাঁদের কাছে বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। তবে অলিম্পিক্স এবং প্যারালিম্পিক্স দুই প্রতিযোগিতাই খেলে পদক জেতার রেকর্ড আছে একমাত্র পল সেকারেসের। হাঙ্গেরির এই ফেন্সার ১৯৮৮ সালে অলিম্পিক্সে ব্রোঞ্জ জিতেছিলেন। বাস দুর্ঘটনায় কোমরের নীচের অংশ অবশ হয়ে গিয়েছিল তাঁর। এর পর প্যারালিম্পিক্সে অংশ নিয়ে ছ’টি পদক (তিনটি সোনা এবং তিনটি ব্রোঞ্জ) জেতেন পল। প্যারালিম্পিক্সে সোনা জেতা হয়ে গিয়েছে সুমিতের। অলিম্পিক্সে অংশ নিয়েও কি পদক জিততে পারবেন তিনি?