Tokyo Paralympics 2020

Avani Lekhara: দ্রোণাচার্য অভিনব বিন্দ্রা, একলব্য অবনী লেখারা, লক্ষ্যভেদ বিশ্ব মঞ্চে

২০১২ সাল থেকে হুইলচেয়ারে বসে থাকা অবনী বুঝিয়ে দিলেন ইচ্ছে থাকলে কোনও বাধাই কঠিন নয়।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ অগস্ট ২০২১ ০৮:৪২
Share:

মাত্র ১৯ বছর বয়সে প্যারালিম্পিক্সে সোনা জয় অবনী লেখারার। ছবি: টুইটার থেকে

সাল ২০০৮। বেজিং অলিম্পিক্সে ১০ মিটার এয়ার রাইফেল ইভেন্টে সোনা জিতলেন অভিনব বিন্দ্রা। ভারতীয় ক্রীড়া জগতে সাড়া ফেলে দিলেন তিনি। অলিম্পিক্সে ব্যক্তিগত ইভেন্টে প্রথম সোনা। তৈরি হল ইতিহাস।

সাল ২০১১। মুক্তি পেল অভিনব বিন্দ্রার আত্মজীবনী ‘এ শট অ্যাট হিস্ট্রি’। পদক জয়ের খিদে, লড়াই এবং সাফল্য তুলে ধরলেন ভারতীয় শুটার। সেই বইয়ে তিনি অস্বীকার করলেন শুধুমাত্র সেরা প্রশিক্ষণ বা কোচেরাই সাফল্য এনে দেওয়ার রাস্তা তৈরি করে দিতে পারে। তাঁর লড়াইয়ের সেই কাহিনি অনুপ্রেরণা দিল গোটা দেশকে, অবনী লেখারাকেও

Advertisement

মাত্র ১৯ বছর বয়সে প্যারালিম্পিক্সে সোনা জয়। অলিম্পিক্সে কোনও ভারতীয় মহিলার সোনার পদক নেই। প্যারালিম্পিক্সে সেই কীর্তি গড়লেন অবনী। শুধু সোনা জয় নয়, সেই সঙ্গে বিশ্বরেকর্ডও গড়েছেন তিনি। ২০১২ সাল থেকে হুইলচেয়ারে বসে থাকা অবনী বুঝিয়ে দিলেন ইচ্ছে থাকলে কোনও বাধাই কঠিন নয়।

টোকিয়ো প্যারালিম্পিক্সে ১০ মিটার এয়ার রাইফেল ইভেন্টে সোনা জিতলেন অবনী লেখারা। ছবি: টুইটার থেকে

খেলাধুলার সঙ্গে পড়াশোনাতেও প্রথম স্থানেই থাকতেন অবনী। সোনা জয়ের পর এক সংবাদ সংস্থাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “আমার মনের মধ্যে কী চলছে সেটা বলে বোঝাতে পারব না। মনে হচ্ছে আমি অনেক উঁচুতে বসে আছি। ব্যাখ্যা করতে পারব না এই মুহূর্তটা।” জয়ের পর উত্তেজিত থাকা অবনী খেলার সময় কী ভাবে শান্ত রেখেছিলেন নিজেকে? তিনি বলেন, “নিজেকে বার বার বলছিলাম একটা করে শট নিয়ে ভাবব। একেকটা শট ধরে এগোচ্ছিলাম। কত স্কোর হল, পদক পাব কি না, এসব চিন্তাই করিনি তখন। আমার লক্ষ্য ছিল যে শটটা মারছি সেটা ঠিক মারা।”

Advertisement

ভারতের পদক তালিকার শীর্ষে অবনী। দেশকে পদক এনে দিতে পেরেই খুশি তিনি। তাঁর আশা আরও পদক পাবে ভারত। ছ’বছর আগে প্রথম রাইফেল হাতে নেন অবনী। তাঁর বয়স তখন ১৩ বছর। অবনী বলেন, “রাইফেল হাতে নিলে মনে হয় যেন ঘরে রয়েছি। বুঝতে পারি কিছু একটা যোগ রয়েছে আমার সঙ্গে রাইফেলের। লক্ষ্য ঠিক রেখে ধারাবাহিক ভাবে শুট করে যেতে হয়, এটাই করতে ভাল লাগে আমার।”

২০১২ সালে গাড়ি দুর্ঘটনায় শরীরের নীচের অংশ অকেজো হয়ে যায় অবনীর। সেই সময় তাঁর বয়স মাত্র ১১ বছর। ওখানেই শেষ হয়ে যেতে পারত তাঁর জীবন। কিন্তু অবনীর বাবা সেটা হতে দেননি। মেয়েকে উদ্বুদ্ধ করেন খেলার জন্য। ভর্তি করে দেন তিরন্দাজিতে। তবে তির-ধনুক নয়, বন্দুক হাতেই নিজেকে খুঁজে পান অবনী। রাজস্থানের কলেজে আইন নিয়ে পড়াশোনা করা মেয়েটি সেই বন্দুক হাতেই ভারতকে সম্মান এনে দিলেন টোকিয়োতে।

২০১৭ সাল থেকে পদক জয় শুরু করেছেন অবনী। যুব বিশ্বকাপে রুপো জেতেন। সেই বছর বিশ্বকাপে ব্রোঞ্জ জেতেন তিনি। ২০১৯ সালে ক্রোয়েশিয়াতে রুপো জেতেন। একই ফল ২০২১ সালেও। সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে টোকিয়ো প্যারালিম্পিক্সের যোগ্যতা অর্জন করেন অবনী।

সরকারের তরফেও সাহায্য পান। ২০১৭ সাল থেকে তাঁকে যুক্ত করা হয় টার্গেট অলিম্পিক পোডিয়াম স্কিমে (টপস)। ১২টি আন্তর্জাতিক বিভাগে অংশ নেওয়ার সুযোগ পান অবনী। তাঁর বাড়িতে অনুশীলনের জন্য অত্যাধুনিক প্রযুক্তি বসাতেও আর্থিক সাহায্য করে সরকার।

ব্যক্তিগত বিভাগে সোনা জয়ের পর অবনী নামবেন মিক্সড ইভেন্টে। ১০ মিটার এয়ার রাইফেলের সেই ইভেন্টে তাঁর সঙ্গী হবেন সিদ্ধার্থ বাবু এবং দীপক। বুধবার সেই ইভেন্টে খেলতে নামবেন তাঁরা। ৫০ মিটার এয়ার রাইফেলের ব্যক্তিগত এবং দলগত ইভেন্টেও অংশ নেবেন অবনী।

একের পর এক পদক যতটা সহজে জিতেছেন, অবনীর জীবন ততটা সহজ নয়। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “শিরদাঁড়ায় অসুবিধা রয়েছে আমার। কোমরের নীচের অংশ অবশ। এখনও রোজ পায়ের ব্যায়াম করতে হয়। একজন ফিজিয়ো রোজ আসেন। করোনার সময় উনি আসতে পারেননি। আমার মা, বাবাই সাহায্য করেছেন পায়ের ব্যায়াম করতে। যতটা পেরেছে করেছে তারা। আমার ফিজিয়ো জয়পুর থেকে আসতেন। অনেকটা রাস্তা। তাই তিনি আসতে পারেননি সেই সময়। শুটিং অনুশীলনেও ব্যাঘাত ঘটে। বন্দুকে গুলি ভরে শুট করার অনুমতি নেই বাড়িতে। নিয়ম মেনে যতটা অনুশীলন করা সম্ভব, ততটাই করেছি।”

সাল ২০২১। টোকিয়ো প্যারালিম্পিক্সে ১০ মিটার এয়ার রাইফেল ইভেন্টে সোনা জিতলেন অবনী লেখারা। ভারতের প্রথম মহিলা হিসাবে সোনার পদক জিতে ইতিহাস গড়লেন তিনি। সেই সঙ্গে পেলেন অভিনব বিন্দ্রার শুভেচ্ছা। ২০০৮ সালের সোনা জয়ী টুইট করে লেখেন, ‘সোনা এল। শুটিংয়ে ভারতকে প্যারালিম্পিক্সে প্রথম সোনা এনে দিল অবনী। আমি গর্বিত। ইতিহাস তৈরি করা তোমার শটের জন্য শুভেচ্ছা।’

যে অভিনবের কাহিনি অনুপ্রেরণা দিয়েছিল অবনীকে, তাঁর থেকে পেলেন শুভেচ্ছা। দ্রোণাচার্যের আশীর্বাদ পেলেন একলব্য।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement