উসেইন বোল্ট। ফাইল ছবি
প্রতি বারই অলিম্পিক্সে সব থেকে বেশি যে ইভেন্ট নিয়ে মাতামাতি হয় তা হল ১০০ মিটার দৌড়। বিশ্বের দ্রুততম মানব কে হবেন তাই নিয়ে চর্চা চলে ক্রমাগত। তবে এ বারের অলিম্পিক্সের ১০০ মিটার দৌড় একটু আলাদা হতে চলেছে।
এ বার দৌড়ের তালিকায় থাকবেন না কোনও এক উসেইন বোল্ট। ২০০৪-এর পর এই প্রথম অলিম্পিক্সে দেখা যাবে না বোল্টকে। কারণ ২০১৭ বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের পরেই জুতোজোড়া তুলে রেখেছেন এই মুহূর্তে বিশ্বের দ্রুততম মানব। তবে অলিম্পিক্স নিয়ে তাঁর আগ্রহ মোটেই কম নয়। সে কারণেই তাঁর উত্তরাধিকারী কে হবেন সেই নিয়ে অপেক্ষায় রয়েছেন তিনিও।
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বোল্ট জানিয়েছেন, তাঁর বাজি আমেরিকার ট্রেভন ব্রমেল। বলেছেন, “ওকে দৌড়তে দেখা আমার কাছে তাজা বাতাস নেওয়ার মতো। হ্যাঁ, ভেবে একটু অদ্ভুত লাগছে যে এতদিন পর অলিম্পিক্সের ১০০ মিটারে আমি নামব না। কিন্তু ওর মতো দৌড়বিদকে দেখার সৌভাগ্য সবার হয় না।”
বোল্টের বাজি ব্রমেল। ফাইল ছবি
ব্রমেলের প্রতি কেন এত মোহাচ্ছন্ন বোল্ট? কিছু তথ্য দিলেই বোঝা যাবে। ২০১৫ বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ০.০১ সেকেন্ডের ব্যবধানে আমেরিকার জাস্টিন গ্যাটলিনকে হারিয়েছিলেন বোল্ট। সেই রেসে তৃতীয় হয়েছিলেন ব্রমেল। ২০১৬-র ১০০ মিটারে তিনি সবার শেষে শেষ করেন। এরপরে রিলে রেসে পেশি ছিঁড়ে বসেন।
২০১৭-য় অস্ত্রোপচার এবং চিকিৎসার কারণে খেলতেই পারেননি। নামা হয়নি বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপেও, যা ছিল বোল্টের শেষ ইভেন্ট। ২০১৮-য় ফের একটি অস্ত্রোপচার হয় তাঁর। এই অবস্থায় বেশিরভাগ ক্রীড়াবিদই আর মূলস্রোতে ফিরতে পারেন না। ব্রমেল পেরেছেন। নিজেকে এমন উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছেন যে, ১০০ মিটারে সোনার প্রধান দাবিদার বলা হচ্ছে তাঁকে।
ফ্লোরিডার সেন্ট পিটার্সবার্গে বেড়ে ওঠা ব্রমেল চোখের সামনে রোজ খুনোখুনি হিংসা দেখেছেন। দারিদ্র্য এবং অভাবের মধ্যে বেড়ে ওঠা ব্রমেল তাই সোনা জিতে সমাজ বদলের স্বপ্ন দেখছেন। এক সাক্ষাৎকারে কিছুদিন আগেই বলেছিলেন, “সোনা আমার লক্ষ্য। কিন্তু আসল লক্ষ্য হল পরিবর্তন। কারণ মানুষকে দেখাতে চাই আমি কোন জায়গা থেকে উঠে এসেছি। মাটিতে পড়ে গিয়েও সেখান থেকে উঠে দাঁড়িয়েছি। হাল ছাড়িনি। চাই আমাকে দেখে হাজার হাজার শিশু অনুপ্রাণিত হোক।”
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
ব্রমেলকে নিয়ে বোল্ট বলেছেন, “ওকে দেখার জন্য মুখিয়ে আছি। গত কয়েক বছর ধরে ও নিজেকে যে উচ্চতায় তুলে নিয়ে গিয়েছে তা অসামান্য। খুব খারাপ চোট পেয়েছিল। কিন্তু এই মরশুমে ওকে আটকানোর মতো কেউ নেই।”
ব্রমেল যখন দৌড়বেন, তখন সুদূর কিংস্টনে বসে নিশ্চয়ই চোখ রাখবেন বোল্ট। ব্রমেল জানেন, তাঁর পাশে বিশ্বের দ্রুততম মানব রয়েছেন। তবে লড়াই যে খুব সহজ হবে না তা সহজেই অনুমেয়। ব্রমেলকে কড়া টক্কর দিতে তৈরি তাঁরই দেশের নোয়া লিলেস। রয়েছেন কানাডার আন্দ্রে ডে গ্রাসে এবং দক্ষিণ আফ্রিকার আকানে সিমবিনেও। এখন দেখার, এঁদের টপকে সোনার পদক ব্রমেল গলায় ঝোলাতে পারেন কিনা।