থম গোলাপি বলে দিনরাতের টেস্ট ম্যাচে সশরীরে মাঠে থাকতে পেরে উচ্ছ্বসিত রাহুল দ্রাবিড়। —ছবি পিটিআই।
একজন ষাট ও সত্তর দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত মাতিয়ে গিয়েছেন ইডেনে। অন্যজন এই কলকাতায় নতুন সহস্রাব্দের শুরুতে অস্ট্রেলিয়াকে হারানোর ম্যাচে ভি ভি এস লক্ষ্মণের সঙ্গে জুটি বেঁধে ইডেনে খেলে গিয়েছেন মহাকাব্যিক ইনিংস।
সেই ফারুখ ইঞ্জিনিয়ার ও রাহুল দ্রাবিড়—দু’জনেই উচ্ছ্বসিত ভারতের প্রথম গোলাপি বলে দিনরাতের টেস্ট ম্যাচে সশরীরে মাঠে থাকতে পেরে। খেলা দেখার ফাঁকে ভিআইপি বক্সে বসে ভারতের প্রাক্তন উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান ইঞ্জিনিয়ার বলছিলেন, ‘‘ভারতে প্রথম নৈশালোকে ওয়ান ডে ম্যাচ হয়েছিল ইডেনে। আর এ বার হল প্রথম দিনরাতের টেস্ট। একদম ঠিক জায়গাকেই বাছা হয়েছে গোলাপি বলে এই ঐতিহাসিক ম্যাচটার জন্য।’’ যোগ করেন, ‘‘বাংলাদেশ দলটা খুব দুর্বল। মনে হচ্ছে শনিবার ব্রায়ান লারা, সচিন তেন্ডুলকরদের অনেক রেকর্ড ভাঙতে পারে বিরাট কোহালিরা। ম্যাচ তো সে দিকেই যাচ্ছে।’’
আর রাহুল দ্রাবিড় বলে দিচ্ছেন, ‘‘২০০১ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে এই ইডেনে সেই স্মরণীয় ম্যাচটায় এক লক্ষ লোক হয়েছিল। আজও ইডেন ভরা। টেস্ট ক্রিকেটে এই মাঠ ভরা দর্শকদেরই দরকার। ইডেনের ভরা গ্যালারি সব কিছুই সম্ভব করে দেয়।’’
ভারতীয় ক্রিকেটের এই দুই প্রাক্তন ক্রিকেটারই গোলাপি বলে ইডেনে দিনরাতের টেস্ট ম্যাচ আয়োজনের জন্য পূর্ণ কৃতিত্ব দিচ্ছেন বোর্ড প্রেসিডেন্ট সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে। ফারুখের কথায়, ‘‘ছেলেটার দম আছে। নেতৃত্ব দিয়ে সব সময়ে নতুন কিছু করতে চায়। দায়িত্ব নিয়েই নতুন রকমের একটা টেস্ট ম্যাচের স্বাদ পাইয়ে দিল ভারতকে।’’ আর দ্রাবিড় বলছেন, ‘‘দাদা যা করে, তা পুরো মন দিয়েই করে। আজ যেমন ব্যস্ততার সঙ্গে সবকিছু সামলাচ্ছে।’’ যা শুনে সৌরভ আবার রাতে ইডেন ছাড়ার আগে বলে গেলেন, ‘‘প্রতি সিরিজেই একটা টেস্ট গোলাপি বলে দিনরাতে করার পরিকল্পনা রয়েছে।’’
অতিথি: ইডেনে ইঞ্জিনিয়ার-চাঁদু বোর্ডে। নিজস্ব চিত্র
ইঞ্জিনিয়ার ও দ্রাবিড় দু’জনের কাছেই প্রশ্ন করা হয়েছিল, লাল বলে প্রথম দুই ঘণ্টায় যে বোলার ও ব্যাটসম্যানের যে দ্বৈরথ থাকে, সেই লড়াই কি গোলাপি বলে পাওয়া সম্ভব? এ বার রসিক মেজাজে রাহুল বলেন, ‘‘আজ প্রথম দু’ঘণ্টায় মহম্মদ শামি, উমেশ যাদবদের সামনে বাংলাদেশের লড়াই দেখলেন তো! লাল বলে যে লড়াই হত সকালের প্রথম দুই ঘণ্টায়, গোলাপি বলে সেই দু’ঘণ্টার লড়াই হবে গোধূলি নামলেই। মন্দ কী?’’ ফারুখের জবাব, ‘‘টেস্ট ক্রিকেটে দর্শক মাঠে আনতে গেলে গোলাপি বল ভবিষ্যৎ হতে পারে।’’ যোগ করেন, ‘‘শাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবাল থাকলে কিন্তু এই বাংলাদেশ লড়াই করত।’’
তাঁদের জমানায় গোলাপি বলে টেস্ট ম্যাচ খেলতে হলে কেমন অভিজ্ঞতা হত? এ বার দ্রাবিড় আত্মবিশ্বাসী মেজাজেই বলেন, ‘‘এ রকম দর্শক ভরা স্টেডিয়াম থাকলে যে বলেই খেলা হোক না কেন, সেরাটা ঠিক বেরিয়ে আসত।’’ ইঞ্জিনিয়ার যথারীতি রসিকতার মেজাজে। বলেন, ‘‘একটা শামিই ব্যাটসম্যানের কাছে ত্রাস হয়ে উঠছে। আমাদের সময়ে চার্লি গ্রিফিথ, রয় গিলক্রিস্টরা গোলাপি বল হাতে দৌড় শুরু করলে সন্ধেবেলা ব্যাটসম্যানরাই হয়তো মাঠ থেকে পালিয়ে যেত।’’