টেনিস সার্কিট মাতাচ্ছেন তরুণ খেলোয়াড়রা। ফাইল ছবি
ক্রিকেট হোক, বা ফুটবল, কিংবা টেনিস। ২০২১ সালটা তরুণ খেলোয়াড়দের কাছে এখনও পর্যন্ত সোনার সময়। তিনটি খেলার ক্ষেত্রেই ‘টিন এজার’-রা নিজেদের মঞ্চে আলো জ্বেলেছেন। অভিজ্ঞদের পিছনে সারিতে ফেলে কেড়ে নিয়েছেন যাবতীয় প্রচারের আলো। তরুণদের দাপটকে কুর্নিশ জানিয়েছে বিশ্ব। ইউএস ওপেনের মহিলাদের ফাইনালে এরকমই দুজনের মুখোমুখি হওয়া এটিকে আরও প্রতিষ্ঠিত করেছে। ১৮ বছরের এমা রাদুকানু এবং ১৯ বছরের লেইলা ফার্নান্ডেজ সেখানে মুখোমুখি হচ্ছেন।
রাদুকানু প্রথমে হইচই ফেলেছিলেন এ বছরের উইম্বলডনে। চতুর্থ রাউন্ডে উঠেছিলেন তিনি। তখনই তাঁকে নিয়ে হইচই হয়েছিল। ইউএস ওপেনে একদম ফাইনালে উঠে গিয়েছেন তিনি। অন্যদিকে, আমেরিকার লেইলা এর আগে কোনও গ্র্যান্ড স্ল্যামে তৃতীয় রাউন্ডের গন্ডি পেরোতে পারেননি। ইউএস ওপেনে জীবনের সেরা ছন্দে রয়েছেন।
স্পেনের কার্লোস আলকারাজকে বলা হচ্ছে ভবিষ্যতের নাদাল। তিনি কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছিলেন। চোটের জন্য নাদাল এ বার ইউএস ওপেনে খেলতে পারেননি। কিন্তু সেই অভাব অনেকটা মিটিয়ে দিয়েছেন আলকারাজ। কোয়ার্টার ফাইনালে যাঁর কাছে হেরেছিলেন, ফ্রান্সের সেই ফেলিক্স অগার-অ্যালিয়াসিমেও এই মুহূর্তে পেশাদার সার্কিটে অন্যতম প্রতিভাবান খেলোয়াড়।
আমেরিকার কোকো গফ প্রতিভাবানদের মধ্যে আর একজন। ২০১৯ থেকে পেশাদার সার্কিটে তিনি খেলছেন। সে বার উইম্বলডনের চতুর্থ রাউন্ডে উঠেছিলেন। এ বার ফ্রেঞ্চ ওপেনের কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছেছিলেন। ডাবলসেও দু’বার কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছেন।
ফুটবলে এই মুহূর্তে তরুণ খেলোয়াড় তুলে আনার ক্ষেত্রে এগিয়ে বার্সেলোনা। সেই ক্লাবের আনসু ফাতি এবং পেদ্রি এই মুহূর্তে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। বার্সেলোনার লা মাসিয়া অ্যাকাডেমি থেকে উঠে এসেছেন ফাতি। আদতে গিনি বিসাউয়ের হলেও, সম্প্রতি স্পেনের নাগরিকত্ব পেয়েছেন ফাতি। স্পেনের জাতীয় দলের হয়ে ম্যাচ খেলাও হয়ে গিয়েছে। ১৮ বছর বয়সী এই ফুটবলার প্রশংসা পেয়েছিলেন লিয়োনেল মেসির। দু’জনে একসঙ্গে জুটি বেঁধে গোলও করেছেন। সম্প্রতি মেসির ১০ নম্বর জার্সিরও মালিক হয়েছেন ফাতি। পেদ্রিকে তুলনা করা হচ্ছে আন্দ্রে ইনিয়েস্তার সঙ্গে। বার্সেলোনায় থাকাকালীন ইনিয়েস্তা যে ভাবে মাঝমাঠের দখল একাই নিয়ে নিতেন, সেই ভূমিকাই পালন করতে দেখা যাচ্ছে পেদ্রিকে। ক্রমশ বিপক্ষের কাছে ভয়ের কারণ হয়ে উঠছেন তিনি। স্পেনের জাতীয় দলের হয়েও ১০টি ম্যাচ খেলা হয়ে গিয়েছে।
বার্মিংহ্যাম সিটি থেকে উঠে আসা ফুটবলার জুড বেলিংহ্যামকে নিয়েও চর্চা হচ্ছে। এখন তিনি বরুসিয়া ডর্টমুন্ডে খেলছেন। ইংল্যান্ডের জাতীয় দলের হয়ে ইতিমধ্যেই নিজের জায়গা পাকা করে নিয়েছেন তিনি। কোচ গ্যারেথ সাউথগেট প্রশংসা করেছেন একাধিক বার। ফ্রান্সের এদুয়ার্দো কামাভিঙ্গা আর এক প্রতিভাবান ফুটবলার। রেনেঁ থেকে তিনি সম্প্রতি যোগ দিয়েছেন রিয়াল মাদ্রিদে। কিন্তু তরুণ এই ফুটবলারকে নিতে মুখিয়ে ছিল অনেক ক্লাবই।
ক্রিকেটে তরুণদের তুলে আনার পিছনে বরাবরই সামনের সারিতে থেকেছে পাকিস্তান। তরুণতম ক্রিকেটার হিসেবে আন্তর্জাতিক অভিষেকের তালিকায় প্রথম দুই ক্রিকেটারই পাকিস্তানি। সেই দেশেরই এক তরুণ বোলার এখন আন্তর্জাতিক মঞ্চ মাতাচ্ছেন। অনেকেই তাঁকে ভবিষ্যতের ওয়াকার ইউনিস বলতে শুরু করেছেন। তিনি হলেন নাসিম শাহ। বছর দুয়েক আগে ব্রিসবেনে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে অভিষেক হয়েছিল নাসিমের। তখন তাঁর বয়স ছিল ১৬। সদ্য ১৮ পেরিয়েছেন। অভিজ্ঞও হয়েছেন অনেকটাই। নিয়মিত দেড়শো কিলোমিটার বেগে বল করে যাওয়ার ক্ষেত্রে তাঁর জুড়ি নেই। দেশের হয়ে ইতিমধ্যেই ন’টি টেস্ট খেলেছেন নাসিম। নিয়েছেন ২০টি উইকেট। এ ছাড়া দেশ-বিদেশের টি-টোয়েন্টি লিগে তিনি খুবই জনপ্রিয়। বলের গতিবেগ লজ্জা দিতে পারে অনেক অভিজ্ঞ ক্রিকেটারকেও।
আফগান ক্রিকেটার ইব্রাহিম জাদরান রয়েছেন এই তালিকায়। আফগানিস্তান ক্রিকেট দলে বড় শট মারতে পারা ক্রিকেটারের অভাব নেই। এখানেই বাকিদের সঙ্গে পার্থক্য ইব্রাহিমের। তিনি বেশ পছন্দ করেন ধরে খেলতে। মানসিকতা অসাধারণ এবং ফিল্ডিংয়ের ফাঁক খুঁজে নিয়ে অনায়াসে শট খেলতে পারেন। সে কারণেই টেস্ট দলে তাঁর উপর ভরসা করা হয়। আফগানিস্তানের আর এক ক্রিকেটার নুর মহম্মদের এখনও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয়নি ঠিকই, তবে মাত্র ১৪ বছর বয়সে অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেটের দলে ঢুকে পড়েছিল সে। অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপে ভারতের বিরুদ্ধে একটি ম্যাচে চারটি উইকেট নিয়েছিল সে।
খেলা যা-ই হোক, ২০২১ প্রমাণ করে দিয়েছে আগামী দিনে চালকের আসনে আসতে চলেছেন তরুণ খেলোয়াড়রাই।