বিশ্বজয়ের উচ্ছ্বাস ভারতীয় ক্রিকেটারদের। ছবি: রয়টার্স।
১৩ বছর পর আবার বিশ্বজয়ী ভারত। অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হলেন রোহিত শর্মারা। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৭ রানে হারালেন রোহিতেরা। প্রথমে ব্যাট করে ভারত করে ৭ উইকেটে ১৭৬ রান। জবাবে প্রোটিয়াদের ইনিংস শেষ হল ৮ উইকেটে ১৬৯ রানে। মহেন্দ্র সিংহ ধোনির দলের এক দিনের বিশ্বকাপ জয়ের পর ২০ ওভারের ক্রিকেটে বিশ্বসেরা রোহিতের ভারত। ম্যাচ শেষ হওয়ার পর কেঁদে ফেললেন ভারতীয় দলের সকলে।
হার্দিক পাণ্ড্যর হাত ধরে হারের মুখ থেকে জয় ছিনিয়ে নিলেন রোহিতেরা। বাউন্ডারি লাইনে ডেভিড মিলারের ক্যাচ দুর্দান্ত ভাবে ধরে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারের দরজা দেখিয়ে দেন সূর্যকুমার যাদবও। শেষ তিন ওভারে ম্যাচের রং বদলে গেল সম্পূর্ণ। রোহিতদের হার না মানা মানসিকতার সামনে স্বপ্নভঙ্গ হল দক্ষিণ আফ্রিকার।
ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে সেমিফাইনালে ভারতীয় ইনিংসের ভার সামলে ছিলেন রোহিত এবং সূর্যকুমার। ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে দু’জনেই ব্যর্থ হলেন। অবিবেচকের মতো ব্যাট করে দলের চাপ বৃদ্ধি করলেন ঋষভ পন্থও। রোহিত (৯), পন্থ (শূন্য) এবং সূর্যকুমার (৩) ৫ ওভারের মধ্যে আউট হওয়ায় চাপে পড়ে যায় ভারত। ব্যাটিং ধস রুখতে এই সময় ‘প্ল্যান বি’তে চলে যায়। পাঁচ নম্বরে নামিয়ে দেওয়া হয় সেমিফাইনালের সেরা ক্রিকেটার অক্ষর পটেলকে। বিরাট কোহলির সঙ্গে জুটি বেঁধে দলের বিপর্যয় ঠেকালেন বাঁহাতি অলরাউন্ডার।
আগ্রাসী মেজাজে শুরু করেছিলেন কোহলি। অনেক দিন পর এ দিন চেনা মেজাজে খেলছিলেন। কিন্তু চাপের মুখে নিজেকে গুটিয়ে নেন কোহলি। চাপ খানিকটা সামলে নিয়ে আগ্রাসী হওয়ার চেষ্টা করেন অক্ষর। শেষ পর্যন্ত অবিবেচকের মতো রান আউট হলেন সময় থাকতেও ক্রিজ়ে ফেরার চেষ্টা না করে। ভুলের মাসুল দিয়ে অর্ধশতরান হাতছাড়া করলেন অক্ষর। ৩১ বলে ৪৭ রান করলেন ১টি চার এবং ৪টি ছয়ের সাহায্যে। উইকেটের অন্য দিক আগলে রেখেছিলেন কোহলি। গোটা প্রতিযোগিতায় ব্যর্থ শিবম দুবে কিছুটা লড়াই করার চেষ্টা করলেন ফাইনালে। ২২ গজে সঙ্গ দিলেন কোহলিকে। প্রতিযোগিতার প্রথম অর্ধশতরান করলেন কোহলি। আউট হলেন ৫৯ বলে ৭৬ রান করে। তাঁর ব্যাট থেকে এল ৬টি চার এবং ২টি ছক্কা। শিবম করলেন ১৬ বলে ২৭। ৩টি চার এবং ১টি ছয় মারেন তিনি। কোহলি-শিবম জুটির ৭২ রানের শেষে হার্দিক অপরাজিত থাকেন ৫ রান করে। জাডেজা আউট হন ২ রান করে।
দক্ষিণ আফ্রিকার সফলতম বোলার কেশব মহারাজ ২৩ রানে ২ উইকেট নিলেন। বল করতে এসে প্রথম ওভারেই রোহিত এবং পন্থকে আউট করে তিনি চাপে ফেলে দেন ভারতকে। ২৬ রানে ২ উইকেট অনরিখ নোখিয়া। ৩৬ রানে ১ উইকেট কাগিসো রাবাডার। মার্কো জানসেন ১ উইকেট নিলেন ৪৯ রান খরচ করে।
জয়ের জন্য ১৭৭ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই জোড়া উইকেট হারায় দক্ষিণ আফ্রিকাও। রেজ়া হেনড্রিকসকে (৪) আউট করেন যশপ্রীত বুমরা। এডেন মার্করামকে ফেরান (৪) আরশদীপ সিংহ। ১২ রানে ২ উইকেট হারানোর পর দলের ইনিংসের হাল ধরেন কুইন্টন ডিকক এবং ট্রিস্টান স্টাবস। তৃতীয় উইকেটে তাঁদের জুটির সাবলীল ব্যাটিং কিছুটা চাপে ফেলে দেয় রোহিতদের। তাঁদের জুটি ভাঙেন অক্ষর। স্টাবস আউট হন ২১ বলে ৩১ রান করে। মারলেন ৩টি চার এবং ১টি ছয়। তাঁর পর ডিককের সঙ্গে জুটি বাঁধেন হেনরিক ক্লাসেন। দক্ষিণ আফ্রিকার রান তোলার গতি আটকাতে পারেননি ভারতীয় বোলারেরা। ডিকককে আউট করেন আরশদীপ। তাঁর ৩১ বলে ৩৯ রানের ইনিংসে রয়েছে ৪টি চার এবং ১টি ছক্কা। তাতেও বিশেষ লাভ হয়নি। ক্লাসেনের আগ্রাসী ব্যাটিং ভারতকে চাপে রাখে। শেষ পর্যন্ত হার্দিক তাঁকে আউট করলে আবার লড়াইয়ে ফেরে ভারত। ক্লাসেন করেন ২৭ বলে ৫২ রান।
ক্লাসেন আউট হতে পাল্টা চাপে পড়ে যায় প্রোটিয়ারা। জানসেনও (২) দলকে ভরসা দিতে পারলেন না। তিনি আউট হলেন বুমরার বলে। পর পর ২ উইকেট হারানোর পর ডেভিড মিলার এবং মহারাজ চাপ সামলাতে পারলেন না। বুমরা, আরশদীপদের বল সামলাতে পারলেন না তাঁরা। ছয় মারতে গিয়ে বাউন্ডারি লাইনে সূর্যকুমারের হাতে ধরা পড়েন মরিয়া মিলার। এই উইকেটই ভারতের জয় এর রকম নিশ্চিত করে দেয়। শেষ পর্যন্ত ৮ উইকেটে ১৬৯ রানের বেশি করতে পারল না প্রোটিয়ারা। অথচ ১৬ ওভার পর্যন্ত ম্যাচ জেতার দৌড়ে সুবিধাজনক জায়গায় ছিল দক্ষিণ আফ্রিকাই।
ভারতের সফলতম বোলার হার্দিক ২০ রানে ৩ উইকেট নিলেন। ১৮ রানে ২ উইকেট বুমরার। ২০ রানে ২ উইকেট আরশদীপের। ৪৯ রানে ১ উইকেট অক্ষরের। ফাইনালে ৪৫ রান খরচ করলেও উইকেটহীন থাকতে হল কুলদীপ যাদবকে।