মরিয়া: মুম্বই সিটি-র বিরুদ্ধে বল দখলের চেষ্টা কিয়ানের। বৃহস্পতিবার ফতোরদা স্টেডিয়ামে। আইএসএল
মুম্বই সিটি এফসি কাঁটা হয়েই থেকে গেল এটিকে-মোহনবাগানের জন্য। তবে বৃহস্পতিবার এগিয়ে গিয়েও হুগো বুমোসরা জিততে পারল না কোচ জুয়ান ফেরান্দোর ভুল পরিকল্পনায়। ডার্বিতে দুরন্ত হ্যাটট্রিক করা কিয়ান নাসিরিকে মোহনবাগান কোচ মাঠে নামাল খেলা শেষ হওয়ার পাঁচ মিনিট আগে! অবিশ্বাস্য।
ডার্বিতে জিতে পরের ম্যাচে পয়েন্ট নষ্ট করার পরম্পরা কলকাতার দুই প্রধানেরই রয়েছে। মোহনবাগানের সামনে সেই ছবিটা বদলে দেওয়ার দারুণ সুযোগ ছিল। কিন্তু মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে জুয়ানের প্রথম একাদশ নির্বাচন দেখেই অবাক হয়েছিলাম। আমার মতে এই ম্যাচে শুরু থেকেই খেলানো উচিত ছিল কিয়ানকে। ডার্বিতে হ্যাটট্রিক করে ওর আত্মবিশ্বাস তুঙ্গে রয়েছে। তার উপরে মুম্বই শেষ ছ’টি ম্যাচের তিনটিতে হেরেছে। ড্র করেছে তিনটিতে। ছন্দে না থাকা এ রকম একটা দলের বিরুদ্ধে ডেভিড উইলিয়ামসের সঙ্গে কিয়ানকে শুরু থেকে খেলালে, আরও চাপে পড়ে যেত মুম্বই। কারণ মোর্তাদা ফল, মেহতাব সিংহরা বিপক্ষের আক্রমণ ভাগের দুই ভয়ঙ্কর ফুটবলারকে আটকাতে গিয়ে ভুল করতই।
মুম্বইয়ের ফুটবলারদের ভুল বোঝাবুঝিতেই নয় মিনিটের মধ্যে মোহনবাগান এগিয়ে গিয়েছিল। মোর্তাদা বক্সের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা আহমেদ জাহুকে পাস দিয়েছিল। কিন্তু বুমোসের তাড়ায় ও বল ধরে রাখতে পারেনি। ঠান্ডা মাথায় মেহতাবের দু’পায়ের ফাঁক দিয়ে গোল করে ডেভিড। ধাক্কা সামলে মোর্তাদারা দ্রুত রক্ষণ গুছিয়ে নিয়ে ঘুরে দাঁড়াল। অবশ্য এর জন্য দায়ী মোহনবাগানের ফুটবলাররাই। ওরা হয়তো ভেবেছিল, মুম্বইয়ের পক্ষে ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব নয়। তাই প্রায় সব ফুটবলারই উঠে গিয়েছিল বিপক্ষের অর্ধে। এমনকী, রাইটব্যাক আশুতোষ মেহতাও নিজের জায়গায় ছিল না। এই সুযোগে বিপিন সিংহ বাঁ-প্রান্ত দিয়ে ঝড়ের গতিতে উঠে মোহনবাগান পেনাল্টি বক্সের মধ্যে সেন্টার করেছিল। প্রীতম কোটাল হেড করে বল বিপন্মুক্ত করতে গিয়ে নিজের গোলেই ঢুকিয়ে দেয়। যদিও এর পরেও একাধিক বার এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিল মোহনবাগান। কখনও বিপক্ষের ডিফেন্ডাররা। কখনও আবার মুম্বইয়ের গোলরক্ষক মহম্মদ নওয়াজ় প্রাচীর হয়ে উঠেছিল ডেভিড-মনবীরদের সামনে। বারবারই কিয়ানের অভাব বোঝা যাচ্ছিল।
মোহনবাগান কোচ যুক্তি দিতে পারেন, কিয়ানের বয়স মাত্র ২১। অভিজ্ঞতা কম। শুরু থেকে খেলালে চাপে পড়ে যেতে পারত। তাতে ওর ক্ষতি হত। আমি এই যুক্তি মানি না। আইএসএলে মুম্বইকে কখনও হারাতে পারেনি মোহনবাগান। তাই এমনিতেই চাপ ছিল। তার উপরে চোটের কারণে রয় কৃষ্ণ নেই। এখনও পর্যন্ত কিয়ানের যা খেলা দেখেছি, তাতে ওকে যথেষ্ট পরিণতই মনে হয়েছে। বল নিয়ন্ত্রণ খুব ভাল। গতি রয়েছে। দু’পায়ে শট মারতে পারে। সারাক্ষণ ছটফট করে বিপক্ষের ডিফেন্ডারদের চাপে রাখে। ডার্বির মতো এই ম্যাচেও কিয়ান তুরুপের তাস হয়ে উঠতে পারত মোহনবাগানের।
প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার পরে মনে হয়েছিল, এ বার নিশ্চয়ই আর কিয়ানকে বসিয়ে রাখার ঝুকি নেবে না জুয়ান। অবাক হয়ে দেখলাম ওকে ছাড়াই মাঠে নামল মোহনবাগান। বিস্মিত হওয়ার আরও উপাদান যে অপেক্ষা করছিল, তা উপলব্ধি করলাম ৫৬ মিনিটে। ডেভিডকে তুলে জনি কাউকে নামাল জুয়ান। অর্থাৎ, রক্ষণ শক্তিশালী করে খেলার পরিকল্পনা।
কৃষ্ণের চোট, গোলদাতা ডেভিড উঠে গিয়েছে। রিজার্ভ বেঞ্চে বসে রয়েছে কিয়ান। গোল করে জেতাবে কে? মনবীর, লিস্টন কোলাসো দারুণ প্রতিশ্রুতিমান। কিন্তু ওদের এখনও একা গোল করে ম্যাচ জেতানোর ক্ষমতা হয়নি। মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গলের ফুটবলারদের কাছে ডার্বির চেয়ে কঠিন লড়াই কিছু নেই। সেই ম্যাচে যদি জুয়ান ৬১ মিনিটে কিয়ানকে নামাতে পারে, এ দিন নয় কেন? ৮৫ মিনিটে মোহনবাগান কোচের মনে পড়ল, কিয়ান রয়েছে! ততক্ষণে অবশ্য ম্যাচের ভবিষ্যৎ লেখা হয়ে গিয়েছে। কিয়ান পর্যাপ্ত সুযোগই পেল না। ড্র করে ১২ ম্যাচে ২০ পয়েন্ট নিয়ে টেবলের পঞ্চম স্থানেই আটকে থাকল মোহনবাগান।