মোহনবাগানের প্রাণভোমরা বেইতিয়া, ইস্টবেঙ্গলের কোচ মারিয়ো রিভেরা। —ফাইল চিত্র।
এই শহর কলকাতায় বসে তাঁদের মন এখন কাঁদছে দেশের জন্য। পরিবারের জন্য চিন্তায় রাতের ঘুম উড়েছে। করোনার দাপটে বেসামাল গোটা বিশ্ব।
এই ‘অজানা শত্রু’র আক্রমণে তাঁরাও এখন আটকে পড়েছেন ‘পরভূমে’। না নামতে পারছেন ফুটবল মাঠে, লকডাউনের জেরে না ফিরতে পারছেন দেশে। এক বুক চিন্তা নিয়ে বসে থাকা ছাড়া আর যে কোনও উপায়ই নেই তাঁদের।
কারা তাঁরা? তাঁরা ইস্ট-মোহনের স্পেনীয় ব্রিগেড। এক সময়ে তাঁদের পা স্বপ্ন দেখিয়েছে কলকাতার দুই বটবৃক্ষ ক্লাবের সমর্থকদের। এখন সেই স্পেনীয় ‘জাদুকর’রাই ঘরবন্দি অবস্থায় রয়েছেন এই শহরে। দেশে কবে ফিরবেন, তা জানা নেই।
এ দিকে সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনও স্থগিত হয়ে যাওয়া আই লিগের ভবিষ্যৎ নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। তার ফলে আরও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে দু’ প্রধানের স্পেনীয় কোচ ও ফুটবলারদের ঘরে ফেরা।
ইস্টবেঙ্গলের কোচ মারিয়ো রিভেরা বলছিলেন, ‘‘ফেডারেশনের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছি। আবার যদি আই লিগ চালু হয়, তা হলে প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নেমে পড়ব। আর যদি লিগ না হয়, তা হলে দেশে ফিরে যাব। মাদ্রিদে আমার জন্য অপেক্ষা করছে আমার পরিবার। কিন্তু আই লিগ নিয়ে ফেডারেশন যে কী সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে, সেটা বোঝা যাচ্ছে না। ফলে এ দেশ ছেড়ে যেতেও পারছি না।’’
এ বার মরসুমের মাঝামাঝি সময়ে ইস্টবেঙ্গলের দায়িত্ব নেন মারিয়ো। এখনও পর্যন্ত ছ’টি ম্যাচে লাল-হলুদের রিমোট কন্ট্রোল হাতে নিয়ে দাঁড়িয়েছেন তিনি। তার পরেই গোটা বিশ্বের মতো এ দেশেও থাবা বসায় করোনা। স্থগিত হয়ে যায় আই লিগ। এ দেশে স্বামীর কাছে আসতে চেয়েছিলেন মারিয়োর স্ত্রী। কিন্তু তাঁর ভিসার আবেদন বাতিল করে দেয় ভারত সরকার। মারিয়ো বলছিলেন, ‘‘পরিবার পাশে না থাকায় এখন খুবই খারাপ লাগছে। আমার স্ত্রী আসতে চেয়েছিল। কিন্তু ওর ভিসার আবেদন মঞ্জুর করা হয়নি।’’
এ শহরে এখন নিঃসঙ্গ মারিয়ো। পছন্দের স্পেনীয় ডিশের স্বাদও পাচ্ছেন না। লাল-হলুদ কোচ বলছিলেন, ‘‘ভারতীয় খাবার মন্দ নয়। তবে স্পেনীয় ডিশ একেবারেই অন্য ধরনের। ওই স্বাদটাই তো পাচ্ছি না।’’
আরও পড়ুন: আইপিএল নিয়ে প্রত্যয়ী নেহরা, মুখ খুললেন ধোনি-যুবরাজ প্রসঙ্গেও
এ দিকে বিশেষ উড়ান পাঠিয়ে মোহনবাগান কোচ কিবু, বেইতিয়াদের স্পেনে ফেরাতে চেয়েছিল সে দেশের দূতাবাস। কিন্তু সেই সুযোগ হাতছাড়া হওয়ায় এখন রীতিমতো ভেঙে পড়েছেন সবুজ-মেরুনের ফুটবলার ফ্রান গনজালেস। তিনি বলছিলেন, ‘‘স্পেন-সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মৃত্যু মিছিল চলছে। স্পেনে আমার পরিবার ভীত, সন্ত্রস্ত। আর আমরা এখানে অপেক্ষায় রয়েছি! এ বারের আই লিগ তো চ্যাম্পিয়ন হয়েই গিয়েছি আমরা। নতুন করে খেলার প্রয়োজন আর হবে না। তবুও আমাদের এখানে কেন যে অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে, সেটাই তো বুঝতে পারছি না।’’
আরও পড়ুন: ভারতে টেস্ট সিরিজ জিততে চাই, বললেন স্মিথ
মোহনবাগানের মাঝমাঠের ভরসা হোসেবা বেইতিয়ার চোখে ভাসছে সান সেবাস্টিয়ানের সবুজ জলরাশি। কবে যে আবার তিনি ফিরবেন সেখানে, তার অপেক্ষায় দিন গুনছেন। দিন কয়েকের মধ্যেই যে গোটা বিশ্বের ছবিটা আমূল বদলে যাবে, তা কেউই বুঝতে পারেননি। বেইতিয়া বলছিলেন, ‘‘এ রকম অবস্থা যে হতে পারে, তা কয়েক সপ্তাহ আগে পর্যন্ত আঁচ করতে পারিনি। দেখতে দেখতে সব যেন কেমন বদলে গেল। আমার আত্মীয়-বন্ধুরা স্পেনে ভয়ঙ্কর এক লড়াই করছে। এখানে বসে আমি ওদের জন্য শুধু প্রার্থনাই করছি। মা-বাবার সঙ্গে ফোনে প্রতি দিনই আমার কথা হচ্ছে। আমি যেমন ওঁদেরকে নিয়ে ভাবছি, ওঁরাও তেমনই আমাকে নিয়ে চিন্তাভাবনা করছেন।’’
বেইতিয়ার মন পড়ে স্পেনে, কলকাতায় রয়েছে শুধু শরীরটাই। করোনার আতঙ্ক ছাপিয়ে কানে আসছে সান সেবাস্টিয়ানের ঢেউয়ের গর্জন!
অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।