চ্যাম্পিয়ন: ট্রফি হাতে টেনিসের নতুন তারা কেনিন। শনিবার। —ছবি এএফপি।
এক সময়ে জীবনধারনের জন্য নিউ ইয়র্কের রাস্তায় সাময়িক গাড়ি চালিয়েছেন। কষ্টার্জিত অর্থ দিয়ে কিনতেন মেয়ের টেনিস খেলার সরঞ্জাম।
শনিবার রাতে রড লেভার এরিনায় সেই আলেকজান্ডার কেনিনের কন্যা সোফিয়া কেনিন দুরন্ত টেনিস খেলে গারবিনে মুগুরুসাকে মহিলাদের সিঙ্গলস ফাইনালে হারিয়ে অস্ট্রেলীয় ওপেনে চ্যাম্পিয়ন। তাও প্রথম সেটে পিছিয়ে গিয়ে! ম্যাচের ফল কেনিনের পক্ষে ৪-৬, ৬-২, ৬-২। এটি কেনিনের জীবনের প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়।
এ বারের অস্ট্রেলীয় ওপেনে চতুর্দশ বাছাই ছিলেন সোফিয়া। চ্যাম্পিয়ন হয়ে তাঁর প্রথম প্রতিক্রিয়া, ‘‘এতদিনে স্বপ্নপূরণ হল। আগামী বছর আবার এখানে খেলতে আসব। গত দু’সপ্তাহ আমার জীবনের সেরা সময় কাটালাম অস্ট্রেলিয়ায়।’’ ফাইনালে প্রথম সেটে কেনিনের ফোরহ্যান্ড শটগুলো ঠিক হচ্ছিল না। সেই সুযোগে এই সেটে জিতে যায় স্পেনীয় মুগুরুসা। কিন্তু পরের দু’সেটে মুগুরুসাকে দাঁড়াতেই দেয়নি রাশিয়া-জাত মার্কিন খেলোয়াড় কেনিন। পর পর দু’সেট জিতে শেষ হাসি কেনিনের মুখেই।
মেয়ে যখন চ্যাম্পিয়ন হয়ে দর্শকদের অভিবাদন কুড়োচ্ছেন, তখন তাঁর বাবার চোখে আনন্দাশ্রু। আসলে কেনিনের জীবনের প্রথম কোচও যে তাঁর বাবা! প্রায় তিন দশকেরও বেশি সময় আগে ১৯৮৭ সালে জন্মভূমি সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ছেড়ে মার্কিন মুলুকে চলে এসেছিলেন আলেকজান্ডার। চরম জীবনসংগ্রামের দিন ছিল তাঁর। সকালে ইংরেজি ও কম্পিউটার ক্লাসে শিক্ষাগ্রহণ। আর রাতে মাঝেমধ্যে গাড়ি চালিয়ে উপার্জন। এই ছিল আলেকজান্ডারের সেই সময়ের দিনলিপি।
আরও পড়ুন: হার্ড কোর্টে উন্নতি, সাম্প্রতিক ফল আশায় রাখছে থিমকে
যে সম্পর্কে আলেকজান্ডার বলেছেন, ‘‘সেই দিনগুলো দেখেনি ও। কিন্তু সোফিয়া জানে, কী রকম কষ্টকর জীবন এক সময়ে কাটিয়েছে ওর পরিবার। এতে ওর চরিত্রে দৃঢ়তা এসেছে।’’ যোগ করেন, ‘‘যখন প্রথম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আসি, তখন সত্যিই খুব কষ্টের দিন ছিল। রাতে গাড়ি চালাতাম। তাও ইংরেজি না জেনেই।’’
ফ্লরিডায় পাকাপাকি ভাবে থাকার আগে কেনিন পরিবার ফিরেছিল মস্কোতে। সেখানেই ১৯৯৮ সালে জন্ম সোফিয়ার। মার্কিন মুলুকে ফেরার পরে যে বাড়িতে থাকতেন কেনিন পরিবার, তার সামনে ছিল লম্বা রাস্তা। বাড়িতে পুতুল নিয়ে খেলার বদলে সেই রাস্তাতেই বল নিয়ে প্রায়ই খেলতে চলে যেত ছোট্ট সোফিয়া। সেখানেই বাবার কাছে সোফিয়ার প্রথম টেনিসের পাঠ নেওয়া। তিন বছর বয়সে তাঁর চেয়ে আয়তনে বড় বাবার র্যাকেট নিয়েই প্রথম টেনিস খেলতে নেমেছিল এ বারের অস্ট্রেলিয়া ওপেন জয়ী। যে প্রসঙ্গে আলেকজান্ডার বলছেন, ‘‘অবসর সাময়ে বাড়ির সামনে লম্বা রাস্তাতেই মেয়ের সঙ্গে টেনিস খেলতাম। মেয়ের যখন ১০ বছর বয়স, তখন দেখলাম ও খুব জোরে বল মারছে। হাত-চোখের সমন্বয়ও খুব ভাল।’’ যোগ করেন, ‘‘তার পরেই স্থানীয় টেনিস কোচের কাছে নিয়ে গিয়েছিলাম মেয়েকে। সেখানে বয়সে বড় ছেলেমেয়েদের সঙ্গেই ভর্তি নেওয়া হয় ওকে। ক্রমে ওদের ছাপিয়েই দারুণ খেলতে শুরু করে ও। তার পরে পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। তখন ফের গাড়ি চালাতে শুরু করেছিলাম। তবে এ বার সোফিয়ার জন্য অনুশীলনের ভাল কোর্ট খোঁজা ও প্রতিযোগিতায় খেলতে নিয়ে যাওয়ার জন্য।’’
আরও পড়ুন: বোতল রেখে ইয়র্কার-মহড়ার সুফল, বলছেন শার্দূলের গুরু