ভিভিয়ান রিচার্ডস। ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই কিংবদন্তি ৪৬ বছর আগে নভেম্বর মাসে জাতীয় টিমের হয়ে প্রথম ম্যাচ খেলেন।
রবিবার রাতে ভিভের টুইট, ‘৪৬ বছর আগে আমি ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে প্রথম ম্যাচ খেলেছিলাম। জাতীয় দলের হয়ে খেলতে পেরে আমি যে কতটা গর্বিত বলে বোঝাতে পারব না’।
দুষ্প্রাপ্য একাধিক ছবি শেয়ার করে ভিভ আরও লিখছেন, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজ সব সময়ই দুর্ধর্ষ কিছু ক্রিকেটারের জন্ম দিয়েছে। তাঁদের সঙ্গে এবং কিছু অসাধারণ ক্রিকেটারের বিরুদ্ধে খেলতে পারাটা আমার ভাগ্য’।
ভিভের এই টুইট এবং ছবি ক্রিকেটমহলে রীতিমতো ভাইরাল। একাধিক রি-টুইট এবং কমেন্টে ভেসে যাচ্ছেন তিনি।
ওয়াসিম আক্রম যেমন লিখেছেন, ‘আপনার অভিষেক শুধু ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটে নয়, সামগ্রিক ভাবে ক্রিকেটের জন্য নিঃসন্দেহে দুর্দান্ত একটি ঘটনা ছিল’।
আক্রমের টুইটে ভিভ সম্পর্কে শ্রদ্ধা। পাক কিংবদন্তি আরও লিখছেন, ‘আমি খুবই ভাগ্যবান, আপনার বিরুদ্ধে খেলতে পেরে।’
৬৮ বছরের ক্রিকেটার যে সব ছবি শেয়ার করেছেন, তার মধ্যে ইংলিশ কাউন্টি সমারসেটে খেলার সময় ইয়ান বোথাম এবং জোয়েল গার্নারের সঙ্গেও একটি ছবি রয়েছে। সমারসেটে এক সময় সুনীল গাওস্কর-ভিভ-গার্নার-বোথাম এক সঙ্গে খেলেছেন।
ভিভের টেস্ট অভিষেক ভারতের বিরুদ্ধে। ১৯৭৪ সালে ২২-২৭ নভেম্বর বেঙ্গালুরুতে এই টেস্ট হয়। এই সিরিজে অভিষেক নিয়েই ওই টুইট করেন তিনি।
ভিভ অবশ্য অভিষেক টেস্টে দুই ইনিংসেই ব্যর্থ হন (৪ ও ৩ রান)। দু’টি ইনিংসে চন্দ্রশেখরের বলে আউট হয়েছিলেন তিনি।
টেস্টটি ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২৬৭ রানে জেতে। প্রথম ইনিংসে কালীচরণ এবং দ্বিতীয় ইনিংসে লয়েড এবং গ্রিনিজ সেঞ্চুরি করেন।
এই টেস্টে ভিভ ছাড়াও আরও দু’জনের অভিষেক হয়েছিল। প্রথম জন গর্ডন গ্রিনিজ। দ্বিতীয় জন ভারতীয় ক্রিকেটার, হৃষীকেশ কানিতকরের বাবা হেমন্ত কানিতকর।
ভিভের ভারত যোগ নিয়ে আরও গল্প রয়েছে। আটের দশকের শেষে ভিভের সঙ্গে আলাপ অভিনেত্রী নীনা গুপ্তার। তাঁদের প্রেম বা নিজের অন্তঃসত্ত্বা অবস্থা, কোনওটাই লুকিয়ে রাখেননি নীনা। কিন্তু তিনি বা ভিভ, দু’জনের কেউ বিয়ের বন্ধনে যেতে চাননি।
১৯৮৯ সালে জন্ম ভিভ ও নীনার একমাত্র মেয়ে মাসাবার। ‘সিঙ্গল মাদার’ নীনা একাই বাবা ও মায়ের ভূমিকা পালন করে মেয়েকে বড় করেন। ভিভের সঙ্গেও মাসাবার সম্পর্ক ভাল। বিবাহিত জীবনে আরও দু’টি মেয়ে আছে ভিভের। তাঁরা হলেন মাতারা এবং মালি।
১২১ টেস্টের ১৮২ ইনিংসে ভিভ ৮৫৪০ রান করেন। টেস্টে তাঁর সর্বোচ্চ ২৯১ রান। গড় ৫০.২৩। ২৪টা সেঞ্চুরি। ৫০টি হাফ সেঞ্চুরি।
কেরিয়ারে তিনি ১৮৭টি ওয়ান ডে ম্যাচ খেলেন। ১৬৭ ইনিংসে ১১টি সেঞ্চুরি, ৪৫টি হাফ সেঞ্চুরি-সহ রান ৬৭২১। সর্বোচ্চ রান অপরাজিত ১৮৯। গড় ৪৭।
ভিভের ১৮৯ রানের ওই ইনিংস আসে ১৯৮৪ সালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে। ক্রিকেট ইতিহাসে সর্বকালের অন্যতম সেরা ইনিংস ধরা হয় এই ইনিংসকে। সে দিন ইংল্যান্ডের বোলাররা ছিলেন বব উইলস, ইয়ান বোথাম, ফস্টার, মিলার এবং প্রিঙ্গল। চার নম্বরে নেমে এক দিনের আন্তর্জাতিকে সর্বোচ্চ রান এখনও এটাই।
ভিভই প্রথম ব্যাটসম্যান যিনি টেস্ট সেঞ্চুরি করেন ১৫০-এর উপর স্ট্রাইক রেট রেখে। ১৯৮৬ সালে তাঁর করা সেই রেকর্ড অনেক দিন টিকেছিল।
টেস্টের ইতিহাসে দ্রুততম টেস্ট সেঞ্চুরির রেকর্ড দীর্ঘ দিন ছিল ভিভেরই দখলে। ৫৬ বলে সেঞ্চুরিটি আসে। পরে অবশ্য সেই রেকর্ড ভাঙেন ব্রেন্ডন ম্যাকালাম।
এক দিনের আন্তর্জাতিকে দ্রুততম (২১ ইনিংসে) ১০০০ রানের রেকর্ড প্রথম গড়েছিলেন ভিভ। পরে ভিভের রেকর্ড ভাঙেন কেভিন পিটারসেন, বাবর আজম, জোনাথন ট্রট এবং কুইন্টন ডি কক।
ভিভই প্রথম ক্রিকেটার, যিনি এক দিনের আন্তর্জাতিকে ১০০০ রান করেন এবং বল হাতে ৫০ উইকেট পান।