এত মিল! শুধু হোয়াইটওয়াশ হওয়ার ধরনেই নয়, মিল দুই অধিনায়কের পারফরম্যান্সেও। হ্যাঁ, কিউয়িদের দেশে হোয়াইটওয়াশ একবিন্দুতে দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে ২০০২ ও ২০২০ সালের ভারতীয় দলকে। সেই একই রকমের পরাজয়, একই ধরনের পারফরম্যান্স বা, পারফর্ম করতে না পারা! এবং সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় ও বিরাট কোহালির হতাশায় ভেঙে পড়া চেহারাতেও থাকছে মিল।
পরিসংখ্যান বলছে, ২০০২ সালে নিউজিল্যান্ডে এসে সৌরভের দল টেস্ট সিরিজ হেরেছিল ০-২ ফলে। আর এ বার কোহালিরাও হারলেন একই ব্যবধানে। দু’বারই প্রথম টেস্ট ১০ উইকেটে হেরেছে ভারত। সৌরভরা দ্বিতীয় টেস্ট হেরেছিলেন ৪ উইকেটে। কোহালিরা দ্বিতীয় টেস্ট হারলেন ৭ উইকেটে।
আরও এক আশ্চর্য মিল পাওয়া গিয়েছে। ১৮ বছর আগে সেই সফরে দু’দলের কোনও ব্যাটসম্যান সেঞ্চুরি করতে পারেননি। এ বারও দুই শিবিরের কোনও ব্যাটসম্যান পারেননি সেঞ্চুরি করতে। সেই সিরিজের সর্বাধিক রান ছিল ৮৯, যা করেছিলেন নিউজিল্যান্ডের মার্ক রিচার্ডসন। এ বারও সর্বোচ্চ রান ৮৯, এবং সেটাও এল এক কিউয়ি, উইলিয়ামসনের ব্যাটে।
দুই দলের অধিনায়কের পারফরম্যান্সেও রয়েছে মিল। সেই সিরিজে একেবারেই রান পাননি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। টেস্ট সিরিজে তাঁর গড় ছিল ৭.২৫। আর এই সফরে কোহালির গড়ও দশের নীচে। টেস্ট সিরিজে তাঁর গড় ৯.৫০। সৌরভ ও কোহালি শুধু ক্যাপ্টেন হিসেবেই ব্যর্থ হননি, ব্যাটসম্যান হিসেবেও হতাশ করেছিলেন।
২০০২ সালে চার ইনিংসে সৌরভের ব্যাটে এসেছিল মাত্র ২৯ রান। তাঁর স্কোরগুলো ছিল এমন— ৫, ৫, ১৭, ২। আর এ বার, ২০২০ সালের টেস্ট সিরিজে চার ইনিংসে বিরাটের ব্যাটে এসেছে মোট ৩৮ রান। তাঁর রানগুলো এমনই হতাশার— ৩, ১৪, ২, ১৯।
সৌরভ ও বিরাট শুধু ব্যাটসম্যান এবং অধিনায়ক হিসেবেই ব্যর্থ হননি। দু’জনের কেউ ভাগ্যের সাহায্যও পাননি। ২০০২ সালে কোনও টেস্টেই টস জিততে পারেননি সৌরভ। আর এ বারও টস হেরে দুই টেস্টেই প্রথমে ব্যাট করতে হয়েছে কোহালির দলকে।
সৌরভের দল টেস্ট সিরিজে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে কোনও ইনিংসেই বড় রান পাননি। ওই দুই টেস্টের প্রথম ইনিংসে সৌরভ-রাহুল দ্রাবিড়-সচিনরা করেছিলেন যথাক্রমে ১৬১ ও ৯৯। কোহালি-রাহানে-পূজারারা দুই টেস্টের প্রথম ইনিংসে তুললেন ১৬৫ ও ২৪২। আগের তুলনায় একটু ভাল হলেও হোয়াইটওয়াশ এড়াতে তা যথেষ্ট ছিল না একেবারেই।
সৌরভের নেতৃত্বে ২০০২ সালের সেই সফরে প্রথম টেস্টে জেতার জন্য চতুর্থ ইনিংসে নিউজিল্যান্ডের দরকার ছিল মাত্র ৩৬। আর এ বার কোহালির দলকে হারানোর জন্য চতুর্থ ইনিংসে নিউজিল্যান্ডের প্রয়োজন ছিল মাত্র ৯ রানের। কোনও বারই ভারতীয় বোলাররা উইকেট ফেলতে পারেনি।
দ্বিতীয় টেস্টে সৌরভের ভারত ও বিরাটের ভারত, দুই দলই পেয়েছিল সামান্য লিড। ২০০২ সালে সৌরভরা পেয়েছিলেন পাঁচ রানের লিড। আর এ বার কোহালিরা পেলেন সাত রানের লিড। কিন্তু কোনও বারই সেই লিডের সদ্ব্যবহার করা যায়নি। যথাক্রমে চার ও সাত উইকেটে হারতে হয়েছিল সৌরভদের ও কোহালিদের।
২০০২ সালের সেই টেস্ট সিরিজে মাত্র এক জন ভারতীয়ই চার ইনিংসে ১০০ বা তার বেশি রান করেছিলেন। তিনি অবশ্যই সচিন তেন্ডুলকর। এ বার অবশ্য টেস্ট সিরিজে দু’জন ভারতীয় ব্যাটসম্যান একশোর বেশি রান করেছেন। তাঁরা হলেন চেতেশ্বর পূজারা ও ময়াঙ্ক আগরওয়াল। তবে তাতে ফলাফলে কোনও প্রভাব পড়েনি।
সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় ও বিরাট কোহালি ভারতীয় ক্রিকেটে সফলতম অধিনায়কদের অন্যতম। নিউজিল্যান্ডে এসেই দু’জনে প্রথম বার অধিনায়ক হিসেবে টেস্টে হোয়াইটওয়াশের অপমান হজম করেন। ব্যাটসম্যান হিসেবেও এই সিরিজে সৌরভ ও কোহালির যথাক্রমে ৭.২৫ ও ৯.৫০ গড় কোনও সিরিজে জঘন্যতমর তালিকায় দুইয়ে।
২০০২ সালে নিউজিল্যান্ডের হয়ে অভিষেক ঘটিয়েছিলেন ছয় ফুট ছয় ইঞ্চির এক অলরাউন্ডার, জেকব ওরাম। আর ২০২০ সালে ছয় ফুট আট ইঞ্চির কাইল জেমিসন অভিষেক ঘটালেন। এটাতেও মিল। মিল দু’জনের পারফরম্যান্সেও।
২০০২ সালে টেস্ট সিরিজে ১১.৮১ গড়ে ১১ উইকেট নিয়েছিলেন ওরাম। দ্বিতীয় টেস্টের চতুর্থ ইনিংসে ২৬ রানে অপরাজিত ছিলেন তিনি। সিরিজের সেরা, কিউয়ি বোলার ড্যারিল টাফির পরই বোলিং গড়ে ছিলেন ওরাম।
২০২০ সালে জেমিসন ১৬.৩৩ গড়ে নিলেন নয় উইকেট। দুই টেস্টের প্রথম ইনিংসেই করলেন যথাক্রমে ৪৪ ও ৪৯। এ বারও সিরিজের সেরা, কিউয়ি পেসার টিম সাউদির পরই বোলিং গড়ে দুই নম্বরে রয়েছেন জেমিসন।