কৈশোরে ক্রিকেট শুরু করেছিলেন উইকেট কিপিং দিয়ে। তার পর নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন ওপেনিং ব্যাটসম্যান হিসেবে। মাঠের বাইরে ব্যক্তিগত জীবনেও ছক ভাঙতে ভালবাসেন শিখর ধওয়ন। আইপিএল-এ তাঁর সাম্প্রতিক ফর্মের মতোই ঝোড়ো তাঁর প্রেমপর্ব।
তাঁদের প্রেমের অনুঘটক ফেসবুক। সেখানে হরভজন সিংহের বন্ধুতালিকায় ছিলেন আয়েশা মুখোপাধ্যায়। তাঁর রূপে মুগ্ধ শিখর ফেসবুকে বন্ধুত্ব পাতিয়ে বসেন হরভজন মারফত। আয়েশা নিজেও এক জন প্রশিক্ষিত কিক বক্সার। ভালবাসেন অন্য খেলাও। খেলাপাগল আয়েশার সঙ্গে শিখরের বন্ধুত্ব জমে উঠতে দেরি হয়নি।
আয়েশার বাবা বাঙালি। মা ব্রিটিশ বংশোদ্ভূত। আয়েশার জন্ম ভারতে। তবে শৈশবেই তিনি বাবা মায়ের সঙ্গে চলে গিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়া। তার পর বড় হওয়া সেখানেই। বাংলা এবং ইংরেজিতে সমান স্বচ্ছন্দ আয়েশা ভালবাসেন রান্না করতে।
ইন্টারনেটে চ্যাট করতে করতেই শিখর-আয়েশা বন্ধুত্ব পাল্টে যায় প্রেমে। তখন আয়েশা ডিভোর্সি এবং দুই মেয়ের মা। আয়েশার প্রথম স্বামী ছিলেন এক অস্ট্রেলীয় ব্যবসায়ী। তাঁর সঙ্গে বিয়ে ভেঙে যাওয়ার পরে দুই সন্তান রিয়া এবং আলিয়াকে নিয়ে আলাদা হয়ে যান আয়েশা।
আয়েশার প্রাক্তন জীবন বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি তাঁর এবং শিখরের সম্পর্কে। ২০০৯ সালে তাঁদের এগনগেজমেন্ট হয়। তখনও জাতীয় দলে জায়গা পাননি শিখর। পরের বছর জাতীয় দলে তাঁর অভিষেক হয়। তারও দু’বছর পরে ২০১২ সালে বয়সে ১০ বছরের বড় আয়েশাকে বিয়ে করেন শিখর।
জীবনসঙ্গিনী নির্বাচন নিয়ে শিখরকে নিজের পরিবারে যথেষ্ট বাধার মুখে পড়তে হয়। কিন্তু আয়েশাকে বিয়ে করার সিদ্ধান্তে শিখরের পাশে ছিলেন তাঁর মা।
বিয়ে করার সময় আয়েশার শর্ত ছিল, তাঁর মেয়েদের সঙ্গে শিখরের সম্পর্ক যেন মসৃণ হয়। আলিয়া এবং রিয়ার সঙ্গে সহজ সম্পর্কের পরেই শিখরকে বিয়ে করেছিলেন আয়েশা।
শিখ ধর্মের রীতিনীতি পালন করে বিয়ে হয়েছিল শিখর-আয়েশার। নিমন্ত্রিতদের মধ্যে হাজির ছিলেন বিরাট কোহালি-সহ জাতীয় দলের এক ঝাঁক ক্রিকেটার।
২০১৪ সালে জন্ম হয় শিখর-আয়েশার ছেলে জোরাবরের। দুই মেয়ে এবং এক ছেলেকে নিয়ে শিখর-আয়েশার ভরপুর সংসার।
মাঝে মাঝেই আয়েশাকে মেলবোর্ন যাতায়াত করতে হয়। তবে সময় পেলেই তিনি চলে যান স্টেডিয়ামে, স্বামীর খেলা দেখতে।
আয়েশার সমর্থন এবং উৎসাহ তাঁকে সব সময়েই ভাল খেলতে উদ্বুদ্ধ করে। জানিয়েছেন শিখর। বিয়ের পরে ক্রিকেটার হিসেবে অনেক বেশি পরিণত হয়েছেন। দাবি বাঁহাতি ওপেনারের।
লেডি-লাক তত্ত্বে অবশ্য বিশ্বাসী নন আয়েশা। তাঁর কথায়, শিখর ক্রিকেট নিয়ে প্যাশনেট এবং নিজের চেষ্টাতেই তিনি উন্নতি করেছেন।
প্রেমিকের কোন গুণটা সবথেকে ভাল লেগেছিল? আয়েশা জানিয়েছেন, শিখরের কেয়ারিং দিকটাই মুগ্ধ করেছিল তাঁকে। বিয়ের পরেও শিখর একইরকম অন্যের প্রতি যত্নবান। কেরিয়ার এবং পরিবারের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার দিকেও তিনি দক্ষ। জানিয়েছেন তাঁর স্ত্রী।
মাঠের বাইরে ৪ দেওয়ালের মধ্যে শিখর আদ্যন্ত ফ্যামিলিম্যান। ঘরের কাজে স্ত্রীর সঙ্গে হাত লাগাতে তিনি কুণ্ঠাহীন। তিন সন্তানের প্রয়োজনেও তিনি সবসময় হাজির।
বড় মেয়ে আলিয়ার সঙ্গে শিখরের বয়সের ব্যবধান মাত্র ১৫ বছর। বয়সের ব্যবধান কম হওয়ায় সত্ত্বেও মেয়ের অভিভাবক হওয়ার ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা হয়নি শিখরের।
সোশ্যাল মিডিয়ায় সন্তানদের ছবি প্রায়ই শেয়ার করেন শিখর। ছোট মেয়ের জিমন্যাস্টিকের দক্ষতায় শিখর মুগ্ধ। জানাতে ভোলেন না সে কথাও।
কেরিয়ারের চাপ সামলেও তিন সন্তানকে সময় দেন শিখর। ‘পাওয়ার কাপল’ পরিচয়ের পাশাপাশি তাঁর এবং আয়েশার স্বপ্ন ভাল বাবা-মা হওয়াও।
স্ত্রীর আগের পক্ষের সন্তানদের নিজের মেয়ে হিসেবে মেনে নিতে সমস্যা হয়নি? শিখর ধওয়নের কাছে এই প্রশ্ন এসেছে অনেক বার। উত্তরে শিখর বলেছেন, দুই মেয়ের ভালবাসা পেয়ে তিনি নিজেকে ধন্য মনে করেন।
চলতি আইপিএল-এ দুরন্ত ফর্মে আছে শিখর। আইপিএল ইতিহাসে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে পর পর দু’টি ম্যাচে সেঞ্চুরি করে রেকর্ড করেছেন তিনি। টুর্নামেন্টের অন্যান্য তারকা ব্যাটসম্যানদের ছাপিয়ে শিখরে পৌঁছেছেন তিনি।
আইপিএলে দুটো সেঞ্চুরি আগে করেছেন বিরাট কোহালি, হাশিম আমলা, ক্রিস গেল, শেন ওয়াটসনরা। কিন্তু তাঁরা কেউই ধওয়নের মতো পর পর দুটো ম্যাচে সেঞ্চুরি হাঁকাতে পারেননি।
বলা হয়, আইপিএল-এ যোগ্যতা অনুযায়ী সে ভাবে দাম পাননি শিখর ধওয়ন। এ বারের টুর্নামেন্টে ব্যাট হাতে জবাব দিচ্ছেন তিনি। পরিবারের সমর্থন ও ভালবাসাই তাঁর সাফল্যের নেপথ্য কারিগর। বলছেন, ওপেনার শিখর ধওয়ন।