জ্যাকসন সোনা জিতলেও সেরা সেই ফ্লো-জোই। ফাইল ছবি।
মাত্র ৩৮ বছর বয়সেই প্রয়াত হয়েছেন ফ্লোরেন্স গ্রিফিথ-জয়নার। ক্রীড়াবিশ্ব যাঁকে চেনে ফ্লো-জো নামে। তাঁর মৃত্যুর পর কেটে গিয়েছে ২৪ বছর। দু’যুগ পরেও অক্ষত রইল ২০০ মিটার দৌড়ে তাঁর বিশ্বরেকর্ড।
ওরিয়নে বিশ্ব অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপে মহিলাদের ২০০ মিটারে সোনা জিতলেন জামাইকার শেরিকা জ্যাকসন। ২১.৪৫ সেকেন্ড সময় নিয়েছেন দৌড় শেষ করতে। ২০০ মিটারে তিনিই এখন বিশ্বের দ্রুততমা। কিন্তু এই ইভেন্টের ইতিহাসে তিনি হলেন বিশ্বের দ্বিতীয় দ্রুততমা। কারণ ভাঙতে পারেননি ফ্লো-জোর বিশ্বরেকর্ড।
সিওল অলিম্পিক্সে ফ্লো-জো ২০০ মিটার দৌড় শেষ করেন ২১.৩৪ সেকেন্ডে। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে জ্যাকসন সোনা জেতার পর ধারাভাষ্যকার বলে ওঠেন, ‘‘বিশ্বের জীবিত দ্রুততমা।’’ এমন দ্রুততমা গত ২৪ বছরে অনেকেই হয়েছেন। তাঁদের মধ্যেই সেরা সময় করেছেন জ্যাকসন। সবথেকে কম সময়ে ২০০ মিটার দৌড় শেষ করার ক্ষেত্রে জ্যাকসনের নাম এখন দ্বিতীয় স্থানে।
গত বছর টোকিয়ো অলিম্পিক্সে জামাইকারই এলাইন থম্পসন হেরা ২০০ মিটারে সোনা জিতেছিলেন ২১.৫৩ সেকেন্ড সময় করে। তাঁর আগে ২০২১ সালের জুন মাসে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের এই ট্র্যাকেই আমেরিকার গ্যাব্রিয়েলা থমাস ২০০ মিটার দৌড়ন ২১.৬১ সেকেন্ডে। হেরা এবং থমাসও সে সময় দ্বিতীয় সেরা সময় করেছিলেন ফ্লো-জোর পর। অর্থাৎ, গত ১৩ মাসে মহিলাদের ২০০ মিটার দৌড়ে তিন জন দ্বিতীয় দ্রুততমাকে পেয়েছে বিশ্ব অ্যাথলেটিক্স।
ফ্লো-জোর ভক্তরা বলেন, হাওয়ার মতো দৌড়তেন তিনি। তাঁর সমালোচকরা বলেন, হাওয়ার সাহায্য নিয়ে দৌড়তেন। ১০০ বা ২০০ মিটার দৌড়ের সময় অনুকূল বা প্রতিকূলে হাওয়ার গতিবেগ অনেক ক্ষেত্রে স্প্রিন্টারদের সুবিধা করে দেয় বা সমস্যায় ফেলে। ফটোফিনিসে দৌড়ের ফলাফল নির্ধারণ হলে, হয়তো সেই যুক্তি খাটে। তা না হলে, এই যুক্তি অসার। ফ্লো-জোর ক্ষেত্রেও তাই। তিনি যখন ট্র্যাকে নামতেন, সে সময় তাঁর ধারেকাছে কেউ ছিলেন না। নিজের সেরা সময়ে দৌড়তে নেমে কখনও কড়া চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়নি তাঁকে।
সিওল অলিম্পিক্সের আগে ১০০ মিটারে ১০.৯৬ সেকেন্ড এবং ২০০ মিটারে ২১.৯৬ সেকেন্ড ছিল তাঁর সেরা সময়। অলিম্পিক্সের আসরে দু’টি সময় তিনি কমান যথাক্রমে ০.৪৭ এবং ০.৬২ সেকেন্ড। কী ভাবে এতটা উন্নতি করলেন মাত্র কয়েক মাসে? তৎকালীন ক্রীড়াবিজ্ঞানীরাও স্তম্ভিত হয়েছিলেন। সেই অলিম্পিক্সেই বিশ্বরেকর্ড গড়ে পুরুষদের ১০০ মিটারে সোনাজয়ী বেন জনসনের নমুনায় পাওয়া যায় নিষিদ্ধ স্টেরয়েড। তাতে ফ্লো-জোর সাফল্য নিয়ে সন্দেহ আরও গাঢ় হয়। ডোপ পরীক্ষা হয় তাঁর। এক-দু’বার নয়। ১১ বার। কোনও পরীক্ষার ফল সন্দেহজনক কিছু পাওয়া যায়নি।
সে সময় বলা হত, একমাত্র মৃত্যুই থামাতে পারে ফ্লো-জোকে। সেটাই হয়েছিল। কিন্তু, তিনি যেখানে থেমেছেন সেখানে আজও কেউ পৌঁছতে পারলেন না। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের ট্র্যাকে ঝড় তুলেও তাই দ্বিতীয় দ্রুততমা হয়েই থাকতে হচ্ছে জ্যাকসনকে।