প্রত্যাঘাত: পাঁচ উইকেট নিয়ে সফল অশ্বিন। পিটিআই
গত বছরের ডিসেম্বরে শেষ টেস্ট ম্যাচ খেলেছিলেন দেশের জার্সিতে। তার পরে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে প্রত্যাবর্তন বিশাখাপত্তনমে। গত মাসে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের দলে থাকলেও প্রথম একাদশে স্থান হয়নি। মাঝের এই দশ মাস দেশের জার্সিতে খেলতে না পারার যন্ত্রণা এতটাই তাঁকে গ্রাস করেছিল যে, খেলা দেখাও বন্ধ করে দিয়েছিলেন আর অশ্বিন।
শুক্রবার ফ্যাফ ডুপ্লেসিদের বিরুদ্ধে টেস্ট জীবনের ২৭তম পাঁচ উইকেট পেলেন অভিজ্ঞ অফস্পিনার। ৪১ ওভার বল করে ১২৮ রানে তাঁর প্রাপ্তি পাঁচ উইকেট। এডেন মার্করাম, থেউনিস দে ব্রুইন, ডুপ্লেসি, কুইন্টন ডি কক ও ভার্নন ফিল্যান্ডারের মতো তারকাদের ফিরিয়ে টেস্ট জয়ের সম্ভাবনা তৈরি করেন তিনি। বৃহস্পতিবার বিকেল থেকেই অশ্বিনের বিধ্বংসী মেজাজ ফুটে উঠেছিল। ওপেনারকে ব্যাট ও পায়ের ফাঁক দিয়ে বোল্ড করেই বুঝিয়ে দেন, দেশের মাটিতে কেন তিনি এত ভয়ঙ্কর।
কিন্তু কেন টিভিতে খেলা দেখা বন্ধ করে দিয়েছিলেন অশ্বিন? তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘টিভিতে যখনই ম্যাচ দেখতাম, মনে হত কেন আমি ওই জায়গায় নেই। বোঝাতে পারব না, মাঠের বাইরে থাকা কতটা যন্ত্রণার। সব সময়েই মনে হত, কেন খেলতে পারছি না।’’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘‘গত ২৫ বছর ধরে জীবনের সবকিছুই ক্রিকেটের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে। ভাবতে শুরু করেছিলাম, পরিবারকে আরও সময় দেওয়া উচিত। তাই খেলার বাইরে সময় কাটানো শুরু করি। প্রত্নতত্ত্বের প্রতি অদ্ভুত ভাল লাগা আবিষ্কার করি।’’
এত দিন পরে দেশের জার্সিতে পাঁচ উইকেট পাওয়ার অনুভূতি কী রকম? অশ্বিনের উত্তর, ‘‘গর্ব অনুভব করছি। দেশের হয়ে পাঁচ উইকেট পাওয়ার চেয়ে ভাল অনুভূতি আর কী-ই বা হতে পারে? নটিংহ্যামের বিরুদ্ধেও পাঁচ উইকেট পেয়ে খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু দু’টো মধ্যে তুলনা হয় না।’’
৩৯-৩ স্কোরে তৃতীয় দিন শুরু করে দক্ষিণ আফ্রিকা। ভারতীয় স্পিনারদের ধার কমাতে প্রতি-আক্রমণের পথ বেছে নেন ডিন এলগার ও ডুপ্লেসি। ১৮টি চার ও চারটি ছয়ের সৌজন্যে ১৬০ রান করেন এলগার। ১০৩ বলে ৫৫ রান করে ফিরে যান ডুপ্লেসি। অধিনায়ক ও অভিজ্ঞ ওপেনারের বেছে নেওয়া পথ অনুসরণ করেই ইনিংস শুরু করেন কুইন্টন ডি কক। ১৬৩ বলে ১১১ রান করে দলকে ব্যাটিং বিপর্যয়ের আশঙ্কা থেকে বাঁচান। তারকা অফস্পিনার পাঁচ উইকেট পেলেও বিশেষজ্ঞ মহলে প্রশ্ন উঠছে, ‘‘ঘূর্ণি পিচে একজন অফস্পিনারের বিরুদ্ধে কী ভাবে সেঞ্চুরি করে গেলেন দুই বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান? এই পাঁচ উইকেটের আদৌ কোনও গুরুত্ব আছে?’’ অশ্বিন যদিও বিতর্কে যেতে চাননি। বরং প্রশংসাই করে গেলেন দুই বাঁ-হাতির। বললেন, ‘‘টেস্ট ম্যাচের আদর্শ উইকেটে দু’দলের ব্যাটসম্যানেরাই যে ভাল করবে, তা প্রত্যাশিত নয় কী? সবাই জানি, এলগার কত বড় মাপের ক্রিকেটার। ওর সঙ্গে অসাধারণ ইনিংস খেলে গেল ডি কক।’’
অস্ট্রেলিয়ায় প্রথম টেস্ট খেলার পরে বাকি টেস্ট থেকে অশ্বিনকে বসতে হয়েছিল চোটের জন্য। তার পরে যে সময় পেয়েছেন, তা কাজে লাগিয়েছেন প্রস্তুতির জন্য। কী ভাবে তৈরি হলেন তিনি? অশ্বিন বলছিলেন, ‘‘ক্রিকেট থেকে বাইরে থাকা সম্ভব ছিল না। তাই বেশির ভাগ ম্যাচই খেলার চেষ্টা করেছি। কাউন্টি, টিএনপিএল, ক্লাব ক্রিকেট কিছু ছাড়িনি। মানসিক ভাবে তৈরি হওয়ার জন্য এই ম্যাচগুলো আমাকে প্রচণ্ড সাহায্য করেছে।’’
অশ্বিনের বিশেষ অনুভূতির দিনেই নতুন নজির গড়লেন রবীন্দ্র জাডেজা। বাঁ-হাতি স্পিনার হিসেবে দ্রুততম ২০০ উইকেট প্রাপ্তি তাঁর। মাত্র ৪৪টি টেস্ট ম্যাচে এই কৃতিত্বের অংশীদার জাডেজা। পিছনে ফেলে দিলেন রঙ্গানা হেরাথকে (৪৭টি টেস্ট)।