কুশীলব: সুন্দর, নটরাজন, অশ্বিনের সঙ্গে শার্দূল। বিসিসিআই
সিডনির পরে ব্রিসবেন। ভারতীয় ক্রিকেটারদের লক্ষ্য করে গ্যালারি থেকে উড়ে আসছে বর্ণবিদ্বেষী মন্তব্য। মাঠেও সুযোগ পেলে ব্যাটসম্যানদের মনঃসংযোগ নষ্ট করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন টিম পেনরা। এমনই পরিস্থিতি কী ভাবে সামলানো যায়, সেই মন্ত্র তাঁকে দিয়েছিলেন হেড কোচ রবি শাস্ত্রী। আর সেই পরামর্শ মেনেই রবিবারের গ্যাবায় প্যাট কামিন্স, মিচেল স্টার্কদের সামলে দিলেন শার্দূল ঠাকুর।
ম্যাচের পরে ভার্চুয়াল সাংবাদিক বৈঠকে শার্দুল তা নিয়ে বলেন, ‘‘যখন ব্যাট করতে যাচ্ছিলাম, তখন দল ভাল পরিস্থিতিতে নেই। দর্শকেরা অস্ট্রেলীয় বোলারদের হয়ে জয়ধ্বনি করছিল। তখন মনে পড়েছিল আমাদের কোচ রবি শাস্ত্রীর কথা।’’ যোগ করেন, ‘‘সাদা বলে সীমিত ওভারের সিরিজ শুরুর সময়েই কোচ বলে দিয়েছিলেন, যদি এই সফরে তোমরা ভাল কিছু করতে পারো, তা হলে দেখবে পুরস্কৃত হবে। তোমার পারফরম্যান্সের জন্য মানুষ তোমাকে ভালবাসবে। তাই ব্যাট করতে নেমে নিজেকে বার বার বলছিলাম, এখানে ভাল ব্যাট করতে পারলে, দল উপকৃত হবে, সঙ্গে যে সব মানুষেরা আমাকে জীবনে এগিয়ে যাওয়ার পথে সাহায্য করেছেন, তাঁরাও আনন্দ পাবেন।’’
শার্দূল আরও জানান, ব্যাটিং করার সময়েও বেশ কয়েক বার অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটারেরা তাঁর মনঃসংযোগ নষ্ট করার চেষ্টা করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘ব্যাট করার সময়ে অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটারেরা আমার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করছিল। কিন্তু আমি কোনও উত্তর দিইনি। কিছু সাধারণ প্রশ্নের দু’একটা উত্তর দিয়েছি। এক সময়ে ওরা আমাকে স্লেজিং করেছিল। কিন্তু ওদের সেই কথায় কান না দিয়ে আমি মন দিয়ে খেলে গিয়েছি।’’
আরও খবর: লিভারপুলকে আটকে দিয়ে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে শীর্ষেই থাকল ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড
নিজের ইনিংস নিয়ে তিনি জানিয়েছেন, সিনিয়র জাতীয় দলের হয়ে খেলার আগে ভারতীয় ‘এ’ দলের হয়ে বিদেশ সফর করাতেই দলের নবাগতরা মানসিক ভাবে অনেক অভিজ্ঞ হয়েছেন। তারই ফল পাওয়া গিয়েছে, ব্রিসবেনে ভারত বনাম অস্ট্রেলিয়ার চতুর্থ টেস্টে। শার্দূলের প্রথম রান আসে প্যাট কামিন্সের বলে ছয় মেরে। পরে আবার ছয় মেরে পঞ্চাশ রান পূর্ণ করেন তিনি। তা নিয়ে বোর্ডের টুইটার হ্যান্ডলে আর অশ্বিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মুম্বই অলরাউন্ডার বলেন, ‘‘প্রথম রানটা ও ভাবে আসবে, একেবারেই ভাবিনি। বলটা দেখে শটটা খেলেছি। তবে, শটটা মারতে পেরে আমি খুব খুশি।’’
প্রথম ইনিংসে করা অস্ট্রেলিয়ার ৩৬৯ রানের জবাবে রবিবার ভারতের প্রথম ইনিংস শেষ হয় ৩৩৬ রানে।
এ ক্ষেত্রে শার্দূল ঠাকুরের ভূমিকা অনস্বীকার্য। প্রথম ইনিংসে বল হাতে ৯৪ রানে তিন উইকেট নেওয়ার পরে ব্যাট হাতে ৬৭ রানও করেন তিনি। রবিবার সকালে এক সময় ১৮৬-৬ হয়ে গিয়েছিল ভারত। সেখান থেকে দলকে টেনে নিয়ে যান, শার্দূল এবং ওয়াশিংটন সুন্দর (৬২)। তাঁদের ১২৩ রানের জুটিই ভারতীয় দলের রান লড়াই করার জায়গায় নিয়ে যায়।
যে প্রসঙ্গে শার্দূল বলেন, ‘‘ভারতের দ্বিতীয় দলটা কিন্তু ‘এ’ দলের হয়ে খেলার অভিজ্ঞতায় পুষ্ট। বিদেশে যে দলের হয়ে খেলে এসেছি আমরা। আর তাতেই সুবিধা হয়েছে।’’ যোগ করেন, ‘‘অস্ট্রেলিয়ায় ২০১৬ সালে অ্যালান বর্ডার মাঠে ‘এ’ দলের হয়ে খেলে গিয়েছি। সেটা চার দিনের ম্যাচ ছিল। পিচটাও ছিল অন্য রকম। কিন্তু ভারতীয় ‘এ’ দল খেলে সিনিয়র দলে খেলার সময়ে সেই অভিজ্ঞতা সাহায্য করেছে। পরিবেশ ও পরিস্থিতি কঠিন লাগেনি।’’ তাঁর ও ওয়াশিংটনের জুটি প্রসঙ্গে শার্দূল বলেন, ‘‘আমার সামান্য ব্যাটিং প্রতিভাও রয়েছে। ব্যাট করতে ভালই লাগে। নেটে বল ছোড়ার সময়ে আমি ব্যাটিং অনুশীলন করে নিই। আমরা বোলারেরা এ ভাবেই ব্যাটিং রপ্ত করি।’’
দিনের শেষে অশ্বিন আবার শার্দূল, নটরাজন, ওয়াশিংটনের সাক্ষাৎকার নেন। যে ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে ভারতীয় বোর্ড। সেখানে শার্দূল বলেছেন, ২০১৮ সালে জীবনের প্রথম টেস্টে ১০ বল করে চোট পেয়ে উঠে যাওয়াটা তাঁকে কী ভাবে যন্ত্রণা দিত। এত দিনে তাঁর স্বপ্নপূরণ হল।