Sudip Chatterjee

সুদীপ-ঋদ্ধির ব্যাটের দিকেই তাকিয়ে বাংলা

বাংলা শিবির এখন তাকিয়ে সুদীপ চট্টোপাধ্যায় ও ঋদ্ধিমান সাহার দিকে।

Advertisement

ইন্দ্রজিৎ সেনগুপ্ত

রাজকোট শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০২০ ০৬:৫২
Share:

ভরসা: রঞ্জি ট্রফির স্বপ্ন তাঁদের লড়াইয়ের উপরে নির্ভর করছে। বুধবার মাঠ ছাড়ছেন ঋদ্ধিমান-সুদীপ। সিএবি মিডিয়া

‘‘এমনি করে যায় যদি দিন যাক না!’’ বাংলার ব্যাটসম্যানেরাও হয়তো সেই পথই অবলম্বন করেছেন। লক্ষ্য প্রায় স্থির। প্রথম ইনিংসে ৪২৫ রান করেছে সৌরাষ্ট্র। বাংলাকে তার চেয়ে বেশি করতে হবে। ম্যাচ যে দিকে এগোচ্ছে তাতে বলে দেওয়াই যায় যে, প্রথম ইনিংসের ফলে নির্ধারিত হতে চলেছে রঞ্জি জয়ের ভাগ্য।

Advertisement

বাংলা শিবির এখন তাকিয়ে সুদীপ চট্টোপাধ্যায় ও ঋদ্ধিমান সাহার দিকে। অভিমন্যু ঈশ্বরন, সুদীপ ঘরামি ও মনোজ তিওয়ারি আউট হওয়ার পরে তাঁদের লড়াই সাহস জোগাচ্ছে শিবিরে। দলের মূল ভরসা অনুষ্টুপ মজুমদারকে এখনও নামতে হয়নি। রয়েছেন শাহবাজ আহমেদ, অর্ণব নন্দীও। ব্যাটিং গভীরতা নিয়ে প্রশ্ন নেই। উপরের সারির ব্যাটসম্যানেরা ফিরে যাওয়ার পরেও লড়াই করে দলকে ম্যাচে ফিরিয়েছেন শেষ ছয় ব্যাটসম্যান। কিন্তু ফাইনাল ও বাকি ম্যাচের চাপ এক নয়। দিনের শেষে তিন উইকেট হারিয়ে ১৩৪ রান করা দল এখনও পিছিয়ে ২৯১ রানে। অরুণ লাল যদিও বলছিলেন, ‘‘এটা তো স্বাভাবিক। আমার নীচের সারির ব্যাটসম্যানদের ২৯০ রান যোগ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে।’’

অরুণ খুব একটা ভুল বলেননি। ও়ড়িশার বিরুদ্ধে ৪৬-৫ থেকে ৩৩২ রান করেছেন অনুষ্টুপ মজুমদারেরা। কর্নাটকের বিরুদ্ধে ৬৭-৬ থেকে ৩১২ রানে গিয়ে থেমেছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাংলাকে পিছিয়ে রাখা যাচ্ছে না। কিন্তু পরিস্থিতি সেই সম্ভাবনায় জল ঢেলে দিতে পারে। পিচ এতটাই ভাঙতে শুরু করেছে যে, বল নিচু হওয়ার সঙ্গে অসমান বাউন্স স্পষ্ট। কোনও বল লাফাচ্ছে তো পরেরটি নিচু হয়ে যাচ্ছে। কোনও বল ফাটলে পড়ে ঘুরছে, কোনওটি হয়ে যাচ্ছে সোজা। এ ধরনের পিচে কোনও ব্যাটসম্যানই থিতু নয়। তবুও বাংলায় রঞ্জি ট্রফি ফেরানোর আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন দুই অভিজ্ঞ সৈনিক। ৪৭ রানে অপরাজিত সুদীপ। ৪৩ বলে চার রান ঋদ্ধিমানের।

Advertisement

বুধবার ম্যাচের তৃতীয় দিন ৩৮৪-৮ স্কোরে শুরু করেছিল সৌরাষ্ট্র। তিন রান যোগ হওয়ার পরে নবম উইকেট হারায় তারা। প্রাক্তন বাঁ-হাতি স্পিনার দিলীপ দোশী বলছিলেন, ‘‘চারশোও হবে না।’’ ৩৮ রান যোগ করে তাঁর ধারণা পাল্টে দেন শেষ জুটি। ৫২ বলে অপরাজিত ৩৩ রান করেন ধর্মেন্দ্রসিংহ জাডেজা। ৩৫ বলে ২০ রান জয়দেব উনাদকাটের। তৃতীয় নতুন বল নেওয়ার পর থেকে রানের গতি বাড়িয়ে বাংলাকে চাপে ফেলে দেয় সৌরাষ্ট্র। শাহবাজ আহমেদের আর্ম বলে পরাস্ত হয়ে জয়দেব না ফিরলে বাড়তে পারত সমস্যা।

ওপেনার সুদীপ ঘরামি (২৬)-কে দেখে মনেই হয়নি এটিই তাঁর অভিষেক। অভিমন্যু ঈশ্বরন তাঁকে সঙ্গ দিলেও, মনে হচ্ছিল সুদীপই বেশি অভিজ্ঞ। একেই অভিষেক ম্যাচ, তার উপর ফাইনাল। গার্ড নিয়ে দাঁড়িয়ে দেখছেন, অন্য প্রান্ত থেকে রান-আপ নিচ্ছেন উনাদকাট। এ মরসুমে ইতিমধ্যেই যাঁর ঝুলিতে ৬৫ উইকেট। কিন্তু তাঁর আচরণে ভয়ের কোনও চিহ্ন খুঁজে পাওয়া গেল না। দেবাং গাঁধী তো বলেই দিলেন, ‘‘প্রচণ্ড প্রতিভাবান। খুব ভাল আবিষ্কার।’’ কিন্তু অনভিজ্ঞতাই কাঁটা হয়ে দাঁড়ায় সুদীপের। বোলারদের তৈরি করা ক্ষতে বল ফেলে তাঁকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেন জাডেজা। ‘ব্লাইন্ড স্পট’-এ পড়া বল অনায়াসে প্যাড দিয়ে খেলে দিতে পারতেন। ভুলবশত বাড়িয়ে দিলেন ব্যাট। বল তা ছুঁয়ে চলে গেল ফরোয়ার্ড শর্ট লেগের হাতে। তিরিশ বছর আগের ফাইনালে অভিষেক হওয়ার সৌরভ গঙ্গোপাধ্যযায় তাঁর চেয়ে চার রান কম করেছিলেন।

৩৫ রানেই দ্বিতীয় উইকেট হারায় বাংলা। বিতর্কিত সিদ্ধান্তে এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরে যান অভিমন্যু (৯)। তার পর থেকে শুরু হয় হার-না-মানা লড়াই। সুদীপ ও মনোজ তিওয়ারির। কে বলবে মরসুমের শুরুতে খারাপ ছন্দের জন্য দল থেকে বাদ পড়েছিলেন সুদীপ? ৫০তম ওভারে চেতন সাকারিয়াকে দুরন্ত স্ট্রেট ড্রাইভ মেরে প্রমাণ করে দিলেন শিল্পীর জাত কখনও হারায় না। মনোজ ও তাঁর পরিকল্পনা ছিল চেতেশ্বর পুজারা ও অর্পিত বাসবড়ার মতো। রানের প্রয়োজন নেই। কিন্তু উইকেট হারাব না। দুলকি চালেই এগোচ্ছিল বাংলা। চা-বিরতির আগে প্রাণও ফিরে পান মনোজ। চিরাগ জানির বল কাট করতে গিয়ে স্টাম্পে টেনে আনেন। নো-বল পরীক্ষা করে সিদ্ধান্ত বদলাতে হয় আম্পায়ারকে। তবুও সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে পারলেন না প্রাক্তন অধিনায়ক। একশোতম ম্যাচের প্রথম ইনিংসে ফিরলেন এলবিডব্লিউ হয়ে (৩৫)। চা-বিরতির পর থেকেই মনোজকে আউটসুইং খেলতে বাধ্য করছিলেন চিরাগ। লক্ষ্য ছিল রিভার্স সুইংয়ে পরাস্ত করার। সেই লক্ষ্যে সফল বিপক্ষ মিডিয়াম পেসার। রিভার্স সুইং বুঝতে না পেরে আগেই অফস্টাম্পে পা বাড়িয়ে দেন মনোজ। বল আছড়ে পড়ে তাঁর প্যাডে।

সেখান থেকেই লড়াই শুরু ঋদ্ধি-সুদীপ জুটির। ৫৫তম ওভার থেকে ৬৫তম ওভারের পঞ্চম বল পর্যন্ত কোনও রান করেননি তাঁরা। ৫৯ বল উইকেট কামড়ে পড়েছিলেন। তৃতীয় দিন শেষ হওয়ার অপেক্ষায়। তাঁদের এই লড়াই বুঝিয়ে দেয়, ট্রফি জেতার জন্য কতটা মরিয়া বাংলা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement