কুস্তিগির বজরং পুনিয়া (বাঁ দিকে) ও সাক্ষী মালিক। —ফাইল চিত্র
কয়েক দিন আগে এশিয়ান গেমসের ট্রায়াল পিছিয়ে দেওয়ার আবেদন করেছিলেন প্রতিবাদী কুস্তিগিরেরা। তাঁদের যুক্তি ছিল, এত কম সময়ের মধ্যে ট্রায়ালের জন্য প্রস্তুত হতে পারবেন না তাঁরা। সেই আবেদন অলিম্পিক্স কাউন্সিল অফ এশিয়ার কাছে পাঠিয়েছে ভারতীয় অলিম্পিক্স সংস্থা। সেই বিষয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত জানায়নি অলিম্পিক্স কাউন্সিল অফ এশিয়া। তার মধ্যেই এ বার আরও এক দাবি করলেন প্রতিবাদী পাঁচ কুস্তিগির। ট্রায়ালের প্রস্তুতি নিতে আমেরিকা যেতে চান তাঁরা।
কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুরকে চিঠি লিখেছেন বজরং পুনিয়া, বিনেশ ফোগট, সাক্ষী মালিক, সত্যব্রত কাদিয়ান ও সঙ্গীতা ফোগট। সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, চিঠিতে কুস্তিগিরেরা আবেদন করেছেন যে মিশিগানে গিয়ে প্রস্তুতি নিতে চান তাঁরা। কুস্তিগিরদের এই আবেদন মিশন অলিম্পিক্স সেলের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছেন অনুরাগ। তারা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।
প্রথমে ঠিক ছিল জুন মাসের শেষে এশিয়ান গেমসের ট্রায়াল হবে। কয়েক দিন আগে কেন্দ্রীয় ক্রীড়া মন্ত্রকের কাছে কুস্তিগিরেরা আবেদন করেন, ট্রায়াল পিছিয়ে অগস্ট মাসে করা হোক। কারণ, জুন মাসে ট্রায়াল হলে প্রস্তুতির পর্যাপ্ত সময় পাবেন না তাঁরা। তার পরেই অলিম্পিক্স কাউন্সিল অফ এশিয়ার কাছে ভারতীয় অলিম্পিক্স সংস্থা আবেদন করে, কুস্তিগিরদের নাম জমা দেওয়ার জন্য অন্তত ১০ অগস্ট পর্যন্ত সময় দেওয়া হোক। আগের নির্দেশ অনুযায়ী, ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে ভারতীয় কুস্তিগিরদের নাম জমা দিতে হত। তার আগে ট্রায়াল শেষ হবে না বলেই এই আবেদন করা হয়েছে।
তবে ভারতীয় অলিম্পিক্স সংস্থার এই আবেদন এশীয় অলিম্পিক্স সংস্থা মানবে না বলেই জানা গিয়েছে। কারণ, সে ক্ষেত্রে অন্যান্য দেশ আপত্তি করতে পারে। ১৫ জুলাইয়ের মধ্যেই নাম পাঠাতে হবে। তাই খুব বেশি হলে ট্রায়ালের দিন কিছুটা পিছিয়ে দিতে পারে ভারতীয় অলিম্পিক্স সংস্থা। কিন্তু তার পরেও প্রস্তুতির জন্য ৪৫ দিন নয়, খুব বেশি হলে ২০ দিন সময় পাবেন কুস্তিগিরেরা।
ভারতীয় কুস্তি সংস্থার প্রধান ব্রিজভূষণ শরণ সিংহের গ্রেফতারির দাবিতে গত ২৩ এপ্রিল থেকে দিল্লির যন্তর মন্তরে ধর্না শুরু করেন বজরং, সাক্ষী, বিনেশের মতো কুস্তিগিরেরা। বার বার আবেদনের পরেও সরকার তাঁদের কথা না শোনায় গত ২৮ মে নতুন সংসদ ভবন অভিযান করেন সাক্ষীরা। সেই সময় দিল্লি পুলিশ তাঁদের জোর করে আটক করে। এই ঘটনার পরে দেশের হয়ে জেতা সব পদক হরিদ্বারে গঙ্গায় ভাসিয়ে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন কুস্তিগিরেরা। কিন্তু কৃষকনেতাদের হস্তক্ষেপে হরিদ্বারে গিয়েও ফিরে আসেন সাক্ষীরা। তাঁরা ৫ জুন পর্যন্ত সময়সীমা দেন কেন্দ্রকে।
এর পরেই পদক্ষেপ করে কেন্দ্র। কুস্তিগিরদের সঙ্গে বৈঠক করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর। বৈঠকে পাঁচটি দাবি করেন কুস্তিগিরেরা। তার মধ্যে কয়েকটি দাবি মেনে নেয় কেন্দ্র। আশ্বাস দেওয়া হয় যে ১৫ জুনের মধ্যে তদন্ত শেষ করা হবে। এই আশ্বাস পেয়ে আন্দোলন স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেন কুস্তিগিরেরা। গত ১৫ জুন ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে ১৫০০ পাতার চার্জশিট জমা দিয়েছে দিল্লি পুলিশ। দিল্লির রাউস অ্যাভিনিউ কোর্টে গিয়ে ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করে। চার্জশিটে ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৫৪ (জোর করে মহিলার শ্লীলতাহানির চেষ্টা), ৩৫৪এ (অশালীন মন্তব্য), ৩৫৪ডি (উত্ত্যক্ত করা) ধারায় অভিযোগ করা হয়েছে। এই ধারাগুলির মধ্যে ৩৫৪ জামিনঅযোগ্য। তবে বাকি দু’টি ধারা জামিনযোগ্য। ২২ জুন রয়েছে সেই মামলার পরবর্তী শুনানি।